Infinite Love💗 | ১ম খন্ড | Love Story | Romantic Love Story


 Infinite Love

১ম "খন্ড

পর্ব-০১


রাত 12.30। দরজা জানালা সব বন্ধ করে খাটের এককোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছি। দরজার ওপাশ থেকে বারবার আঘাত করার আওয়াজ আসছে, কিন্তু আমিতো দরজা খুলবো না যাই হয়ে যাক, আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যেনো হরর ফিল্মের সাদা চুল ওয়ালী খুনখুনে বুড়ি কিংবা হারিকেন হাতে এক চোখ কানা বা এক ঠ্যাং খোরা কোনো এক মাঝবয়সী মামার মত কেউ একজন আমাকে সাবধান করে গেছে, খাট থেকে নামলেই সর্বনাশ, থুরি সারে সর্বনাশ। তাই আমিও নামবো না আর দরজাও খুলবোনা decision final।

আমি অনিমা। Actually  ব্যাপারটা হলো কাল আমার রেসাল্ট পাবলিস্ট হবে। SSC বা HSC না ওই দুই ভয়াবহ দিন আলহামদুলিল্লাহ পার করে গেছি, বাট এইবার কী হবে I really don't know.. কারন এইবার আমার এডমিশন টেস্ট এর রেসাল্ট, মেডিকেল এর জন্য কোচিং করেছি যদিও ভার্সিটিতেও এডমিশন টেস্ট দিয়েছি এবং চান্স ও হয়ে গেছে.. বাট আমার লক্ষ্য তো মেডিকেল, আব্বু আম্মুর ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে যে তাদের একমাত্র মেয়ে ডাক্তার হবে। আর আব্বুর মুখ থেকে এই পেশা সম্পর্কে শুনতে শুনতে এর ওপর অসম্ভব এক ভালোলাগা আর আগ্রহ তৈরী হয়েছে। আর এখন ডাক্তার হওয়াটা আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দারিয়েছে। প্রাইভেট মেডিকেল এ পড়ানোর সামর্থ যে আমার আব্বুর নেই তা কিন্তু না। কিন্তু আমি প্রাইভেটে পরবোনা, আমি ঠিক করে নিয়েছি প্রয়োজনে ডাক্তারি পরবনা কিন্তু প্রাইভেটে পরবোনা। ছোটো বেলা থেকেই এটা আমার বিরাট সমস্যা আত্নসম্মান আর ইচ্ছের সাথে আমি কোনো আপোষ করিনা। যেটা একবার ঠিক করব সেটাই করব। কিন্তু এখন মাথার মধ্যে একটাই চিন্তা কাজ করছে চান্স হবেতো? না হলে কী হবে? ডাক্তার হওয়া কি হবে না আমার? দুপুর থেকে এসব চিন্তায় আমি খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছি। আর আমার বাড়ির সকলেই সেই দুপুর থেকে দরজায় করা নেড়ে যাচ্ছে। যেহেতু এখন অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে এখন দরজা ধাক্কানোটা বিরতিহীন ভাবে চলছে। সকলেই নানা রকমের অভয় দিয়ে আমাকে দরজা খোলার জন্য বলে যাচ্ছে কিন্তু বিশাল আফসোস যে তাদের এত কষ্টের রেসাল্ট জিরো। কারন আমিতো দরজা খুলবোনা কিছুতেই না।


উফ! ড্যাম! ওদের দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত, কিন্তু ওনাদের মধ্যে ক্লান্তির ক ও নেই। ধাক্কাচ্ছেতো ধাক্কাচ্ছেই। ওরাকি বুঝতে পারছেনা যে আমি এখন দরজা খোলার মুডে নেই? আপাদত আমি টেনশন করতে ব্যাস্ত? এসব ভাবতে  ভাবতে আম্মুর গলার আওয়াজ পেলাম

 আম্মু : সোনা দরজাটা খোলো, দেখ যা হবে খুব ভালো হবে, কিছু খেয়ে নাও বাবু।

আব্বু: হ্যা মামনি। আর তাছাড়া চান্স না হলেইবা কী? আমি তোকে দেশের বেস্ট প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি করব। তুই চাইলে তোকে এবরোট পাঠাবো। তবুও দরজাটা খোল দুপুর থেকে কিচ্ছু খাসনি, কিছু খেয়ে নে এবার।

আমি: ( আব্বুর কথা শুনে আমিতো অবাকের শেষ স্টেপে। Like Really? এই আব্বুই এডমিশন টেস্ট এর আগে পর্যন্ত বলেছে যে পাবলিকে চান্স না হলে নাকি আমাকে আর পড়াবেই না, প্রাইভেটে উনি আমাকে পড়াতে পারবে না, প্রাইভেটে পরার যোগ্যতা না থাকলে পড়তে হবেনা। ব্লা ব্লা ব্লা। আর এখন উনিই এসব বলছে? যদিও এটা নতুন না। প্রত্যেক পরীক্ষার আগেই আব্বু এরকম হুমকি ধমকি দেয়। পরে রেসাল্টের সময় সবচেয়ে বেশি শান্তনা উনিই দেন। কিন্তু বরাবরের মত এবারেও ওনার সান্তনার রেসাল্ট জিরো।) আব্বু আপনি আবার এসব বলছেন? You know আমি প্রাইভেটে পরবনা। আর এখন আমি দরজা খুলতে পারবনা। কারন আমি টেনশন করতে ব্যাস্ত।

বড় ফুপ্পি: Baby please দরজাটা খোলো। it's high time মা। বারো ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে তুমি না খেয়ে আছো। এবারতো অসুস্হ হয়ে পরবে। তোমার ফুপা তোমার জন্যে তোমার favorite restaurant থেকে বিরিয়ানি এনেছে। খেয়ে নাও সোনা।

আমি:( বিরিয়ানির কথা শুনেতো পেটে নেচে বেরানো ডাইনোসর আরো জোরে নাচছে। বাট আপাদত সেই Dance টাকে টেনশন দিয়ে পজ করে দিলাম) সুলতানাপ্পি(বড় ফুপ্পি) আমার গলা দিয়ে এখন পানিও নামবে না তাই please তোমরা যাও এখান থেকে।

আব্বু: সুলতানা ও কতদূর এসছে? এখন একমাত্র ওই পারবে মেয়েটাকে বার করতে।

সুলতানাপ্পি: এখনি এসে পড়বে দাদা। আমি কিছুক্ষন আগে ফোন করেছিলাম বলল এসে পরেছে কাছাকাছি।

এরপর কারো গলার আওয়াজ পেলাম এই ডাক শুনতে দেরি আমার ছূট্টে গিয়ে দরজা খুলতে দেরি নেই কারন এই মানুষটার ডাক ইগনোর করার ক্ষমতা আমার নেই। দরজাটা খুলেই মানুষটিকে জরিয়ে ধরলাম সেও ব্যাগ ফেলে আমার ধরলো। 

আমি: দেখোনা ওরা আমাকে বারবার খাওয়ার জন্য জোর করছে। ওরাকি বুঝতে পারছেনা আমি কী পরিমান টেনশনে আছি? যদি চান্স না হয় তাহলে কী করব আমি? ওদের যেতে বলো Please আপি।

আপি: Cool sweetheart don't cry. Look আমি এসে গেছি। 

( ইনি হলেন আমার মামাতো বোন হিয়া। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইকোনমিকস ডিপার্টমেন্টে আছে। ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।  ভার্সিটির সুবিধার জন্য আমাদের বাড়িতেই থাকে। আমার বড় বন হবার সাথে সাথে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডও। আমার সব আবদার পূরন করে আর আমিও ওর সব কথাই শুনি। আমরা আমাদের সব কথা একে অন্যের সাথে শেয়ার করি।)

আম্মু: দেখ হিয়া কী পাগলামো শুরু করেছে। 

আপি: ময়নাপ্পি(আমার আম্মু) চিন্তা করোনা আমি এসে গেছিতো। অনেক রাত হয়েছে যাও সবাই গিয়ে এবার শুয়ে পর। আমি দেখছি। (আম্মুয হাত থেকে খাবার প্লেট নিয়ে)

তারপরে আপির হাতে খাবার দিয়ে সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমোতে চলে গেলো কারণ এই মেয়েটার হাতে আমাকে দিয়ে পুরো নিশ্চিন্তে থাকা যায়, শুধু আমাকেই না আপির কাছে যেকোনো কোনো দায়িত্ব দিয়েই নিশ্চিন্তে থাকা যায় কারন ও খুবই Responsible একটা মেয়ে। কিন্তু এই দিক দিয়ে আমি এক্কেবারেই জিরো, কারন আমি নিজের দ্বায়িত্বটাই ঠিকভাবে নিতে পারিনা আর অন্যকিছুর। এরপর আপি আমাকে নিয়ে খাটে এসে বসল।

আপি: তুমিকি কখনো বড় হবেনা? শুনলাম সেইযে সকালে নুডলস খেয়েছো আর কিছুই খাও নি? কটা বাজে হুম? এরকম বাচ্চামো একদম করবেনা। এগুলো আমি টলারেট করবোনা।

আমি: আপি আমি এমনিতেই টেনশনে আছি  আর তুমি বকছ? যাও কাট্টি।

আপি: কাম অন! এত্ত টেনশনের কী আছে বলতো? তুই নিশ্চিত চান্স পাবি। ( আপি আমাকে কখনো তুই কখনো তুমি বলে depends on her mood)

আমি: হবেনা দেখ।

আপি: তুইতো তোর SSC আর HSC এর রেসাল্ট এর দিনো এসব বলেছিলি, A+ ও নাকি আসবেনা বাট শেষমেশ Golden A+ পেয়ে গেলি... শুধু শুধুই টেনশন করছিস আমার তো মনে হয় তুই ঢাকা মেডিকেল এই চান্স পেয়ে যাবি।

আপি: রাখোতো তোমার ঢাকা মেডিকেল। আর তুমিও কম কি হুম? মনে আছে ঢাকা ইউনিভার্সিটির রেসাল্টের এর দিন কী টেনশন করছিলে? বলছিলে চান্স হবেনা শেষেতো 47 তম হলে তারবেলা?

আপি: হয়েছে এবার ওফ যা। এবার খেয়ে নে আমি খাইয়ে দিচ্ছি। আর একদম টেনশন করবিনা যা হবে ভালো হবে। ( খাইয়ে দিতে দিতে)

আমি: আচ্ছা আপি তোমারতো কাল আসার কথা ছিলো college tour থেকে আজ চলে এলে যে? (খেতে খেতে)

আপি: কেন আবার তোমার জন্যে।

আমি: মানে? 

আপি: মানে তুমি দরজা লাগানোর পরেই ময়নাপ্পি আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। তারপর সাথে সাথেই আমি বেরিয়ে এসেছি। Do you have any idea কতটা টেনশনে ছিলাম? এরকম কেউ করে?

আমি: (এমনিতেই রেগে আছে মূখ খুললেই বিপদ তাই চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছি)

খাওয়া শেষে শুয়ে পরলাম, আপি আজকে আমার রুমেই শুয়েছে বলাতো যায়না কখন আবার কাদতে বসি। আমিও আপিকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম।

পরেরদিন সকালে খুব দেরি করেই ঘুমটা ভাঙলো পাক্কা এগারোটা বাজে তাও আপির ডাকে। চোখ খুলে দেখি আপি কফি হাতে দাড়িয়ে আছে। মুচকি এক হাসি দিলাম আপিকে দেখে।

আপি: Good morning sweetheart.

আমি: Good morning. তা sweetheart আজ এতো দেরিতে ডাকলে যে? রোজ তো সক্কাল সক্কাল ডেকে দাও। (কফির মগটা আপির হাত থেকে নিয়ে)

আপি: আসলে তুই এমনিতেই খুব টেনশনে আছিস। আগে ডাকলে বেশি টেনশন বেশি করতিস তাই দেরিতে ডাকলাম। ( কফিতে চুমুক দিতে দিতে)

আমি: বাহ! লজিকটা ভালো বাট রেসাল্ট তো দুপুরের পরে আসবে রাইট? 

আপি: হুম দুপুর দুটোর পর। But don't worry আমি দেখে নেবো।

আমি: আপিগো টেনশন হচ্ছেতো খুব..

আপি: আবার?

আমি: Sorry

আপি: Come on Ani. তুই একজন ব্রাইট স্টুডেন্ট। SSC HSC দুটতেই Golden GPA5, SSC তে জেলায় টপ করেছিস HSC তে বোর্ড এ fifth পজিশনে ছিলি। কোচিং এ ও always top 3 এর মধ্যে ছিলি, তবুও তুই টেনশন করছিস? Like seriously?

আমি: হুম

আপি: নট হুম। চলো খেতে  যাবে। বাড়ির সবার Breakfast done শুধু তুমি আর আমি বাকি। তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছি।

আমি: এ আর নতুন কী? Let's go...

( আপি আর আমি বাড়িতে থাকলে একসাথে খাই। আপি এবার ওনার্স ফাইনাল ইয়ার মানে চার বছর যাবত আপি আমাদের বাসায় আছে আর এই চার বছরে এর হেরফের হয়নি। আমরা খাবার সময় একে অন্যের জন্য ওয়েট করি। যদিও আমাকে খুব একটা ওয়েট করতে হয়না আপিই বেশি করে)

আমি আর আপি ডাইনিং এ গিয়ে বসলাম। আম্মু খাবার আনলো।

আম্মু: এখন আর Breakfast কেন করবে তোমরা? একটুপরতো আবার lunch করবেই। ( serve করতে করতে)

আমি: উফফ, আম্মু পেটে  গেলেই হলো। দুই ঘন্টা আগে খেলে আমার পেটে যেতো এখন ঠিক আমার পেটেই যাচ্ছে। Only খাওয়া is real.  ( খেতে খেতে)

আম্মু: এক চর মারবো আমার সাথে ফাজলামি করছো? একটা মারকুটে ছেলে দেখে তোমার বিয়ে দিয়ে দেবো, উনিশ থেকে বিশ হলেই যে মারবে, তখন বুঝবে। তখন মনে হবে Only মাইর is real.

আপি: হা হা হা

আমি: আপি... আম্মু আমাকে একটা অত্যাচরি জামাই গিফট করবে বলছে আর তুমি হাসছ?

(এতক্ষন আমাদের কথা শুনে আপি শুধু মুচকি মুচকি হাসছিলো কারন এটা নতুন না আম্মু আর আমি সবসময়ই এরকম  খুনসুটিময় ঝগড়া করি। আর সবাই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।আম্মুর  নাম গোলশানারা ময়না। আম্মু একজন শিক্ষিতা গৃহিনী আগে একটা এনজিয়োতে কাজ করলেও এখন করেনা। বাড়ির সকলের খেয়াল রাখে আর আমরা সবাই ওনাকে খুব ভালোবাসি)

হাসি থামিয়ে আপি বলল।

আপি: ময়নাপ্পি, তোমার মেয়েকে যে বিয়ে করবে তাকে আগে Child care এর একটা কোর্স করতে হবে। নইলে তোমার মেয়েকে সামলাতে পারবে না।

আমি কিছুই বললাম না কারন বলার মত কিছু নেই তাই গাল ফুলিয়ে রেখে খাওয়াতে concentrate করলাম।

এরপরেই আব্বু এসে চেয়ার টেনে বসল। 

(আজ আমার রেসাল্ট তাই আব্বু আর অফিস যায়নি। আব্বুর পুরো নাম মো: কামরুল হাসান, পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আব্বু এমনিতে খুব ফ্রি আবার ভীষন স্ট্রিকট, যা আমার ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য।)

আম্মু আব্বুর জন্য চা নিয়ে এলো। এটা আব্বুর অভ্যাস। সারাদিনেযে কত কাপ খায় নিজেও জানেনা। আব্বুকে চা বানিয়ে দিতে দিতে আম্মু এখন বিরক্ত।

আব্বু: Good morning মামনি। ঘুম কেমন হল? 

আমি: Good morning আব্বু। খুব ভালো।

আব্বু: টেনশন কমেছে?

আমি: রেসাল্ট না পাওয়ার আগে কমবেনা আব্বু। আপনি জানেন সেটা।

আপি: ফুপা আপনার মেয়েকে যে কলকে কীভাবে সামলেছি জাস্ট আমিই জানি।

আব্বু: হুম একমাত্র তুই পারিস ওকে সামলাতে।

এরপরেই বেট হাতে ঘোরাতে ঘোরাতে এন্ট্রি নিলো আমার একমাত্র ছোট ভাই কাব্য, যে কীনা ভুল করে বাদর হতে গিয়ে মানুষ হয়ে গেছে। সারাদিন আমার পেছনে লাগাটাই ওর কাজ। এমন মনে হয় ও যেনো এই কাজের বেতনভূক্ত নিষ্ঠাবান কর্মচারী। ক্লাস সেভেন এ পরে কিন্তু এমন মনে হয় জেনো ভার্সিটির রেগুলার পল্টিবাজ। Just irritating... এসেই শুরু করল

কাব্য: আরেব্বাস মিস নটাঙ্কি নিচে? চোখের পানির stock over নাকি? (বেট টা চেয়ারে লাগিয়ে রেখে)

আমি: ওয়ে লেজ ছাড়া বাদর What's your problem হ্যা? আমি যেখানে খুশি সেখানে যাবো, যা খুশি করব তোর কী হ্যা?

কাব্য: নানা আমার আবার কী? কিন্তু শত হলেও এই অপ্রিও সত্যিটাকে তো আর অস্বীকার করতে পারিনাযে তুই আমার বড় বোন তাই। By the way. আজ তো তোর রেসাল্ট মনে তো হয়না তোকে কোনো মেডিকেলে জায়গা দেবে

আমি: না দিলে তোর বাপে.. ইয়ে I mean তোর কী হ্যা? oil your own machine.

আপি: কাব্য তুই ওর পেছনে লাগছিস কেনো বলত? মার খাবি আমার হাতে।

কাব্য: পেছনে কোথায় লাগছি? আমিতো দেশের উন্নয়নের কথা ভাবছি। এই পাটের কাঠি যদি ডাক্তার হয় তবে দেশের কী হাল হব্বে বলোতো?

আব্বু: কাব্য এবার তুই সত্যিই মার খাবি আমার হাতে। আমার মামনিকে জালাবিনা।

(ব্যাস কাব্য চুপ কারন কাব্য আর আমার মধ্যে ঝগড়া হলে আব্বু কাব্যকেই থামিয়ে দেয় দোষ যারি থাক)

এরপর  ড্রয়িং রুমে সবাই সোফায় বসে আছি রেসাল্ট এর টাইম ঘনিয়ে আসছে তাই আমি আবার ওপরে গিয়ে দরজা বন্ধ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপির জন্য পারিনি অগত্যা নিচে বসে টেনশন করছি। ওপর থেকে বড় ফুপা আর সুলতানাপ্পি নেমে আমাদের জয়েন করল। 

ফুপা: কী বেপার অনি এখনো টেনশন?

সুলতানাপ্পি: ওকে এসব বলোনা লাভ নেই।  রেসাল্ট এর আগ পর্যন্ত ওর কাপাকাপি কমবেনা।

 আমি: ফুপা ওহি আসেনি স্কুল থেকে? 

ফুপা: না এইতো এখন আমি আনতে যাচ্ছি। বাই।

আমি: বাই

ফপা চলে গল।

আমি: সুলতানাপ্পি আবার ভাইউ (সুলতানাপ্পির ছোট ছেলে) টা কোথায়?

সুলতানাপ্পি: ও ঘুমাচ্ছে।

আমি: ওহ আজকে ওদের দুজনে একজনের সাথেও দেখা হলোনা।

সুলতানাপ্পি: একটুপরেই তোমার ভাই উঠে যাবে আর ওহিও চলে আসবে। 

কাব্য : ওহ হো আব্বু তোমাকে একটা নিউস দিতে ভলে গেছি ইউ কে থেকে মানিক আঙ্কেলের ছেলে আসছে। কালকে বাংলাদেশে ল্যান্ড করবে।

আব্বু: তাই নাকি? আমাকেতো জানালোনা এখনো?

আম্মু: হয়তো ব্যস্ত আছে। দেখ এই ফোন এলো বলে।

কাব্য: আমিতো Super Excited..

আপি: তোর এত excited হবার কী হল?

আমি: ওর তো সব কিছুতেই over excitement. কথায় আছে পাগলের খুশি মনে মনে।

কাব্য : তুই চুপ কর তো কী জানিস তুই? জানিস উনি কত্ত ভালো ক্রিকেট খেলে? আমিতো ঠিক করেই নিয়েছি আমি ওনার কাছেই ক্রিকেট শিখবো। আর যা সুন্দর দেখতে না এক্কেবারে বলিউড স্টার। I'm his die heart fan...

আপি: ক্রিকেটের কথা জানিনা। তবে দেখতে যে খুব সুন্দর এটা শুনেছি, স্পেশেয়ালি হাসিটা নাকি মারাত্নক । আর খুব ব্রাইট স্টুডেন্ট নাকি? অনেক প্রাইজ ট্রাইজ ও নাকি পায়?

আমি: হাহ! থামোতো ধপবাজি! এমনও ছেলে হয়? এক্কেবারে রূপে গুনে অলরাউন্ডার? এটাকি গল্প নাকি

কাব্য: তোর মতো এলিয়েন যেই দুনিয়ায় আছে সেখানে সবি সম্ভব।

আপি: ধুর। যদি সত্যিই এতো ভালো ক্রিকেট খেলতো তো এতোদিনে কোনো ইন্টারনেশনাল টিমের মেমবার। আর যদি এতই সুন্দর হতো তো নিরঘাত বলিউড করে ফেলতো। আর এত ব্রিলিয়ান্ট হলে নবেলটাও পেয়ে যোতো।

আপি: তুই আসলেই একটা যাই হোক আমি একটু কিচেনে গেলাম

কাব্য: শোন ভাইয়া চাইলে না এই সবি হতে পারতো আর পারবে। তুই এসব বুঝবিনা। So leave..

বলে উনি চলে গেল যাগ্গে আমার কী?

But it this ture? সত্যিই একটা ছেলের মধ্যে এতগুলো গুন থাকতে পারে? দেখতেও কী এতটাই সুন্দর? আপি বলল হাসিটা নাকি  মারাত্নক?সত্যিই তাই?আচ্ছা হাইট কেমন? ধূর যা ইচ্ছে হোক আমার কী? এসব ভাবতে ভাবতে দেয়াল ঘরির দিকে তাকাতেই চোখ চরাকগাছ। Its 2 pm মানে রেসাল্ট, এবার আমি নিশ্চিত হার্ট ফেইল করব। আপি.. কোথায় তুমি?



Infinite Love💗

Part: 2


But is this ture? সত্যিই একটা ছেলের মধ্যে এতগুলো গুন থাকতে পারে? দেখতেও কী এতটাই সুন্দর? আপি বলল হাসিটা নাকি মারাত্নক?সত্যিই তাই?আচ্ছা হাইট কেমন? ধূর যা ইচ্ছে হোক আমার কী? এসব ভাবতে ভাবতে দেয়াল ঘরির দিকে তাকাতেই চোখ চরাকগাছ। Its 2 pm মানে রেসাল্ট, এবার আমি নিশ্চিত হার্ট ফেইল করব। আপি.. কোথায় তুমি?

আপি: কী সমস্যা? চিৎকার করছ কেন? 

আমি: আপি লুক দুটোর বেশি বেজে গেছে। (অসহায় লুক নিয়ে দাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে)।

আপি: ওহ তাইতো এতোক্ষনে হয়তো রেসাল্ট পাবলিস্ট হয়ে গেছে। 

তখনি আবার আমার মহান ভাইয়ের আগমন। ড্যাম্ এই ছেলে ঠিক তখনি এনট্রি নেয় যখন আমায় জালানোটা সহজ।

কাব্য: আরে আপি কষ্ট করে কেন রেসাল্ট দেখবে বলোতো? ও এমনিতেও চান্স পাবে (একটু থেমে) না।

মেজাজটা চরম খারাপ হলো ইচ্ছে করছে ওকে ধরে হারপিক দিয়ে ধুয়ে দেই কিন্তু আপাদত এতই টেনশন হচ্ছে যে ঝগড়া বা তর্ক করার কোনো এনর্জিও পাচ্ছিনা। তাই নরম গলাম বললাম।

আমি: ভাই এভাবে কেন বলছিস? আমি না তোর বোন? যদি তোর বন্ধুরা শোনে তোর বোন পরীক্ষা দিয়ে চান্স পায়নি। তোর সম্মানটা কোথায় যাবে বুঝতে পারছিস? It will be very embracing...

কাব্য: My dearest sister.. for your kind information আমার কোনো বন্ধু এটা জানেইনা যে আমার একটা বড় বোন আছে।

আপি: What? কিন্তু কেন?(ভ্রু কুচকে) 

কাব্য: এরকম এলিয়েন আমার বোন সেটা আমি আমার বন্ধুদের বলে বেড়াবো? Are you crazy?

আমি: আপি.... দেখ কীভাবে অপমান করছে, কে বলবে যে আমি ওর বড় বোন? 

আপি: কাব্য চুপ করবি তুই? অনি যাও গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে এসো আমি হাতের কাজটা সেরে এসে রেসাল্ট চেক করছি।

আমি: আপি আমার পা এখন চলবেনা খুব টেনশন হচ্ছে কাব্যকে বলোনা প্লিস।

আপি: হ্যা কাব্য যাতো ভাই ল্যাপটপ টা নিয়ে আয়।

কাব্য: হুহ দেবেতো একটা রেসাল্ট এতো কাপাকাপির কী আছে বুঝিনা 

মুখ বাকিয়ে ওপরে আপুর রুমে চলে গেল ল্যাপটপ আনতে আর আপিও কাজে চলে গেলো আর আমি বসে বসে ভাবছি কী হবে। মনে মনে একটা কথাই বলছি আল্লাহ চান্সটা যাতে হয়ে যায়। হঠৎ আপুমনি বলে ডাকতে ডাকতে ওহি চলে এলো আমার কাছে। ওহি ক্লাস ফোর এ পরে। অলওয়েজ ফার্স্ট হয় আমিও ওকে তুলে পাশে বসিয়ে বললাম 

আমি:কি ব্যাপার আপুমনি আজকে এত্ত খুশি?

ওহি: কারন আজকে নাকি তোমার রেসাল্ট দেবে ? মিষ্টি খাবোতো।

আমি: ( হায়রে চান্স পেলে তবেইনা মিষ্টি খাবি?) ওহ এই ব্যাপার? তা শুধুইকি মিষ্টি নাকি আইসক্রীম ও চলবে?

ওহি: দুটোই। 

আমি: ওল্লে। Done Baby ( বলেই ওকে জরিয়ে ধরলাম আর ও আমাকে)

আমি: আচ্ছা তোমার আব্বু কোথায়?

ফুপা: এইতো আমি। আসলে আমি কার পার্কিং করছিলাম। তা রেসাল্ট এলো? 

আমি: নাহ গো কাব্য গেছে ল্যাপটপ আনতে। Allah knows কী হবে।

ফুপা: Don't worry যা হবে ভালো হবে।

কাব্য ল্যাপটপ এনে টি টেবিলে রেখে পাশে ব্যাট হাতে প্রাকটিস করছে। আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি। ফুপা ওপরে চেন্জ পর্যন্ত করতে যায়নি। সুলতানাপ্পি অন্তকে নিয়ে বসে আছে। অন্ত সুলতানাপ্পির ছেলে আমার ভাইউ। বয়স দুই বছর। আদো আদো কথা বলে। অন্য সময় হলে। অন্ত অহি আর আমি দুষ্টুমি আর হই হই করে বাড়ি উঠিয়ে ফেলতাম। ওহির সাথে মজা করা সেটা শুনে অন্তর খিলখিল করে হাসা। ওহি আর আমার সারাবাড়ি দৌরে মারামারি খুনশুটি লেগেই থাকে। কিন্ত এখন সেসব আপাদত বন্ধ কারন আমার রেসাল্ট এর টেনশন ছাড়া মাথায় এখন কিছুই আসছেনা। এরমধ্যে আব্বু আম্মু এসে বসল। এখন খালি আপির আসার অপেক্ষা। বলতে বলতে আপিও এসে হাজির আপি এসে সোফায় বসল টি টেবিল থেকে ল্যাপটপটা কোলে নিয়ে ওয়াইফাই্ ওন করে ব্রাউজারে ঢুকলো। কয়েক মিনিটের মত ঘাটাঘাটি করল। একমনে ল্যাপটপ দেখছে আপি কারো দিকে তাকাচ্ছেনা। নিরবতা ভেঙ্গে আমিই বললাম 

আমি: আপি চান্স হয়নি?

আপি আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার আম্মুর দিকে তাকালো।

আম্মু: হিয়া বলছনা কেন?

আব্বু: কিরে বল?

আপি সুলতানাপ্পি কে উদ্দেশ্য করে বলল ফুপি তোমার কোন ফ্রেন্ড এর Roll no আছেনা তোমার কাছে? দাওতো একটু দেখি কি খবর ওদের, আর আমার কাছেও কয়েক জনের আছে দেখছি ওদের হলো কি না।

আমার রাগ এখন চরমে পৌছে গেছে, কী হচ্ছে কী? আমার রেসাল্ট না শুনিয়ে উনি এখন গুষ্টিশুদ্ধো সবারটা দেখছে।আরে চান্স না হলে না হয়েছে বলবেতো নাকি?

আমি: আপু আমার কী চান্স হয়নি? বলছোনা কেন? ( almost কেদে দিয়েছি)

আপি উঠে দাড়াল আমার সামনে এসে হঠাৎ আমাকে জরিয়ে ধরল। আর বলল।

আপি: Congratulation sweetheart now you are also a member of Dhaka Medical College.

আমিতো আমার কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। তাই আপিকে সোজা করে মুখের দিকে তাকালাম। নাহ! আপিকে দেখেতো মনে হচ্ছেনা মজা করছে। তাই আমি আবার বললাম।

আমি: সত্যি?

আপি: Yes baby...

আমিতো খুশিতে কেদে দিয়েছি যতই হোক সপ্ন বলে কথা। তার ওপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ? ভাবতেই পারছিনা।

আব্বু: দেখলে আমি জানতাম আমার মামনি পারবে।

এরপর আব্বু কাকাই কে ফোন করে জানালো। আর আম্মুতো সব্বাইকে জানিয়েছে। 

সুলতানাপ্পি আমাকে জরিয়ে ধরে congress করলো আর ফুপাও অভিনন্দন জানালো। ওহিতো দারুন খুশি, খুশিতে সারা বাড়ি লাফাচ্ছে।

আমি কাব্যকে পিনচ করে বললাম কে জেনো বলেছিল আমায় নাকি কোথাও জায়জা দেবেনা? শেষমেষ তো DMC তেই হলো।

কাব্য: এটা দেশের দুর্ভাগ্য আমি আর কী বলি বলব?

আমি: হুহ। এখন আর কিছু বলার মুখ নেই তাই এগুলোইতো বলবি।

এরমধ্যেই চাচু এসে হাজির। চাচুর নাম উজ্জ্বল। বয়স ত্রিশ,এখনো বিয়ে করেনি। পাত্রি দেখা চলছে।এমনিতে নিজেকে সিঙ্গেল বলে কিন্তু কতটা সত্যি আল্লাহ আর চাচুই ভালো জানে।

হঠাৎ কলিং বেল এর আওয়াজ পেলাম। চাচুই গেল খুলতে গিয়ে দেখলো মিষ্টি নিয়ে এসছে একজন।

চাচ্চু: দাদা আপনি মিষ্টি ওরডার করেছেন? 

আব্বু: নাহ তো। ওমা এত মিষ্টি কে ওরডার করেছে?

সবাই ওবাক আমরা কারন রেসাল্ট একটু আগে দিল। রেসাল্টের পরপর ওরডার দিলেও এতো তাড়াতাড়ি আসার কথা না। that means অনেক আগেই ওরডার করেছে।

আব্বু: কী হলো বলুন কে ওরডার করেছে?

লোকটি: তেরো চৌদ্দ বছরের একটি ছেলে। বিল দিয়ে দিছে আমি যাই।

লোকটি চাচুর হাতে মিষ্টিগুলো দিয়ে চলে গেল।

আমাদের সবার নজর এখন কাব্যর দিকে কারন একমাত্র ও ছাড়া এই বাড়িতে এই বয়সের কেউ নেই। সবাইকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাব্য বলল 

কাব্য: What? এভাবে তাকানোর কী আছে? হ্যা আমিই করেছি ওরডার আসলে আমি জানতাম এদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার, ও মেডিকেলে চান্স পাবেই।তাই সকালেই ওরডার করে এসেছি।কী আর করার। দুর্ভাগ্য বরই দুর্ভাগ্য।

আমরা কেউ কাব্যের কথা শুনে ওবাক হলামনা। কারন আমরা সবাই জানি ও সারাক্ষণ আমার পেছনে লাগলেও ও আমাকে কতটা ভালোবাসে। এতটাই ভালোবাসে যে ও সিওর ছিলো আমি চান্স পাবোই, তাই সেই সকালেই মিষ্টি ওরডার করে রেখেছে! ভাবা যায়? যেখানে আমার নিজেরি কনফিডেন্স ছিলোনা।

আব্বু: টাকা কোথায় পেলি? এখানেতো বেশ অনেক টাকার মিষ্টি। আমরা কেউতো তোকে টাকা দেই নি?

কাব্য: জমানো ছিলো আব্বু, ওইগুলো দিয়েই করেছি।

আমি কিছু না বলে ওকে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম ওও ধরল। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে আছি। নিরবতা ভেঙ্গে কাব্য বলল

কাব্য: ওয়ে ড্রামা কুইন এবার ওফ যা। এত্তো ইমোশনাল হবার কিছু নেই এসব না করলে বন্ধুদের কাছে প্রেসটিজ থাকতোনা, ওরা কীভাবে যেনো জেনে গেছে আমার একটা এলিয়েন আপু আছে সে আবার মেডিকেলেও চান্স পেয়েছে।তাই ওদের কাছে ইমেজ বাচাতে এসব করা।তাই করেছি। নইলে তোর মত এলিয়েনের জন্য এসব করতে আমার বয়েই গেছে।

সবাই হেসে ফেলল ওর কথা শুনে সাথে আমিও। 

এরপর সবাই মিলে এক সাথে লান্চ করে নিলাম মহা আনন্দে। এর মধ্যে সকল আত্মীয়রাই ফোন করে খবর নিলো। আপির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে রুমে গিয়েই ইসরাতকে (আমার বেস্টি) ফোন করলাম।

ইসরাত: কীরে ফইন্নি চান্স পেয়ে গেলিতো? শুধুই নাটক করছস। By the way ট্রিট কবে দিবি?

আমি: এহ আসছে? আমরা দুজনেই একি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি, আমি একা ট্রিট কেন দেব?

ইসরাত: ওকে বাইরে ঘুম পাচ্ছে রাতে ম্যাসেন্জার এ আলোচনা করব। 

আমি: ওকে বেবি বাই।

ইসরাত: বাই বেবি।

ইসরাত আমার বান্ধবী খুব কাছের বান্ধবী। ওর সাথে ইন্টারে দেখা। তারপর খোব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এরপর ঘুমিয়ে পরলাম। 

ঘুম থেকে উঠে দেখলাম সন্ধ্যে হয়ে গেছে। আমি ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম গিয়ে দেখি আব্বু আম্মু আপি ওহি আর সুলতানাপ্পি বসে আছে।

আমি: আরেহ! সব্বাই এখানে আড্ডা দিচ্ছো আমাকে ডাকলেনা যে?

সুলতানাপ্পি: ওইতো আমাদের হবু ডাক্তার সাহেবা চলে এসছে।

আপি: আসলে তুই ঘুমচ্ছিলি তাই ডিসটার্ব করিনি। 

আব্বু: মামনি আয় বসতো।

আমি গিয়ে আব্বুর পাশে বসলাম। 

আব্বু: তুই আজ আমার সপ্ন পূরন করেছিস বল কী চাই তোর যা চাইবি তাই দেব।

আমি: সপ্ন পূরন কোথায় হলো আব্বু? সবেতো মেডিকেলে চান্স হলো এরপর ডাক্তারি পাশ করতে হবে, ভালো একজন ডাক্তার হতে হবে তবেই তো আপনার সপ্ন পূরন হবে। দিল্লি এখনো বহুত দূর।

আব্বু: সবই হয়ে যাবে দেখে নিস।

আম্মু: সেই। এখন বলো কী লাগবে তোমার?

তোমার সুইটসি হাতের কিউটসি পাকোড়া খাইয়ে দেও তাহলেই হবে।

আম্মু: পাগলি। বসো বানিয়ে আনছি।

আম্মু কিচেনে চলে গেল।

আমি: আচ্ছা চাচ্চু, ফুপা,ওহি ওরা কই? দেখছিনাতো?

সুলতানাপ্পি: একটু বাইরে গেছে এখনি এসে যাবে। আইসক্রীম খাবে বলে জেদ করছিল ওহি তাই ওদের নিয়ে আইসক্রীম আনতে গেছে।

আমি: অন্ত? ওও গেছে?

সুলতানাপ্পি: হুম ওও বায়না করছিলো তাই গেছে।

আমি: আর কাব্য? সে কই?

কাব্য: কেউ আমার খোজ করছিলো বুঝি? 

আমি: শয়তান কা নাম লিয়া তো শয়তান হাজির।

আপি: অনি এবার কিন্তু তুমি ওর পেছনে লাগছো।

কাব্য: বাদ দাও আপু রাস্তাঘাটে যেতে আসতে কত পাগল কত কথা বলে সেসব শুনতে গেলেতো আমি শেষ।

আমি: Same to you..

আব্বু: খুবতো ডায়লগ মারছিস, আপুর কিন্তু মেডিকেলে চান্স হয়ে গেছে আপনার পড়ার কী খবর?

কাব্য: as usual আব্বু।

আব্বু: তাহলেই হবে ( আব্বুর এই কথা বলার কারন ক্লাসে ও সবসময় টপ থ্রি এর মধ্যেই থাকে)

এরমধ্যেই চাচু আর ফুপা ওহি অন্তকে নিয়ে চলে এলো। ওহি ছুটে এসে আমার আর আপির মাঝে বসে আইসক্রীম খেতে শুরু করল।

আর অন্ত আমাকে দেখেই হাত বারিয়ে দিল আমিও ওকে কোলে তুলে নিলাম। ফুপা আর চাচু সোফায় বসল।এরপর ওহিকে বললাম 

আমি: বেবি আমাকে আইসক্রীম দেবেনা? একাই খাবে?

ওহি: আব্বু আর মামা তোমাদের জন্য এত্তগুলা এনেছে। ওখান থেকেই খাও।

আমি: কিন্তু বেবি আমারতো তোমার কাছ থেকেই খেতে ইচ্ছে করছে? 

ওহি: জানো আমিনা তোমাকে দিতামি দিতাম কিন্তু আনার সময় এটাতে পচা পরে গেছে। আর পচাটা খাওয়াতো ভালোনা। তাই তোমার খাওয়া লাগবেনা।

সবাই মুচকি হাসছে। আপিতো জোরেই হেসে দিলো।

আমি: ওহহ। বিরাট সমস্যা। ওকে বেবি তুমিই খাও আমি খাচ্ছিনা। হঠাৎ অন্ত হেসে উঠল। 

আমি: কী বেপার ভাইউ তুমি হাসছো কেন কী বুঝলে হ্যা? (ভ্রু নাচিয়ে)

অন্ত: অা..পি.. কি..ল..ম(আধো গলায়)

আমি: ও তুমি খাবে?

মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বলল। আর আমি একটা নিয়ে খুলে খানিকটা খাইয়ে দিলাম বাকিটা নিজে খেলাম।

এরমধ্যেই আম্মু সবার জন্য পাকোরা আর চা নিয়ে এলো। সবাই খাচ্ছি মজা করছি আর আড্ডা দিচ্ছি হঠাৎ আব্বুর ফোন বেজে উঠল।

আম্মু : কে ফোন দিল এই সময়?

আব্বু: মানিক ফোন করেছে।

আম্মু: বলেছিলামনা ফোন এল বলে? দেখ নিশ্চই ছেলেটার দেশে আসার কথাই বলবে। লাউডে দাও ফোন শুনি কী বলে।

আব্বু ফোন লাউডে দিয়ে রিসিভ করলো।

আব্বু: হ্যা মানিক কী খবর বল?

আঙ্কেল: ভালোই। বাড়িতে সবাই কেমন আছে?

আব্বু: হ্যা ভালো। ওদিকে সবাই ভালোতো?

আঙ্কেল: ভালো। আমার অনিমা মামনি নাকি মেডিকেলে চান্স পেল?

আব্বু: হ্যা ভাবিকে তো সাথে সাথেই জানিয়েছি ফোনে তুই ছিলি না।

আঙ্কেল: হ্যা ব্যাস্ত ছিলাম একটু। তা আমার ছেলেটা দেশে ফিরছে শুনেছিস?

আব্বু: হ্যা কাব্য বললতো। তা বাবু সাহেব ফিরছেন তবে?

আব্বু: হ্যা তিন বছর আগে এসছিলো একবার। তোদের বাসায় গিয়েছিল তোর সাথে দেখা করতে কিন্তু ভেতরে না ডুকেই চলে এলো আর পরদিনি ইউ কে ব্যাক করল।

আব্বু: হ্যা বলেছিলি তুই কিন্তু বাড়ির গেট অবধি এসে কিচ্ছু না জানিয়ে ফিরে কেনো গেলো বুঝতে পারছিনা।

আঙ্কেল: ওর মনে কখন কী চলে ও আর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। এবারেও ও এলে ওকে নিয়ে আসব তোর বাসায়।

আব্বু: হ্যা তাতো অবশ্যই।

আঙ্কেল: অনিমিকে আমার হয়ে কনগ্রাচুলেট করে দিস একটু ব্যস্ত আছি। রাখি।

আব্বু: হ্যা অবশ্যই। আর রাখ।

আব্বু ফোন রেখে দিল। আর আমি ভাবছি বাড়ির গেটের কাছে এসেও ফিরে গেছিলো কিচ্ছু না জানিয়ে? strange very strange.

আম্মু: কী বলল নিয়ে আসবেতো ছেলেটাকে? সেই ছোট বেলায় দেখেছি কী কিউট ছিলো, এখন দেখতে নাকি খুব সুন্দর হয়েছে?

ফুপা: আচ্ছা ও ইউ কে তে কী পড়ছিলো এতদিন?

চাচু: ইন্জিনিয়ারিং। সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার।

বাবাহ ওই ছেলে ইন্জিনিয়ার? তারমানে সত্যিই ব্রিলিয়ান্ট?

সুলতানাপ্পি: Not only that.. ইউ কে তে ওর ত্রিশ টারো বেশি প্রজেক্ট আছে আর তার ম্যাক্সিমাম প্রজেক্ট এ ন্যাশনাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ পেয়েছে। He is a gold medalist..

আমিত শুনে পুরো থ... বলে কী? আপুও অবাক হয়েছে বোঝা যাচ্ছে।

ফুপা: ওয়াও এত অল্প বয়সেই এতটা সাকসেস্?

আব্বু: শুধু তাই না boxing champion ও। almost সব রকমের গেম এ পারদর্শী 

কাব্য: specially cricket তাইনা আব্বু?

আপি: তুই থামতো। Seriously ফুপা এও সম্ভব? 

আব্বু: প্রত্যক্ষ সাক্ষি না হলে আমিও বিশ্বাস করতাম নাহ

ফুপা: ছেলেটাকে দেখার জন্য অস্হির হয়ে উঠছি।

আম্মু: আসছেই তো আমরা সবাই দেখতে পাবো ওকে।

আমি এতক্ষন ওনাদের কথা শুনছিলাম আর ভাবছিলাম একটা মানুষকে নিয়ে এত আদেক্ষেতা করার কী আছে? হয়তো একটু বেশি ট্যালেনটেড So what? এতটাও বাড়াবাড়ির কিচ্ছু নেই। হুহ।

এরপর ধিরে ধিরে যে যার যার রুমে চলে গেলাম...

আপির সাথে গল্প করতে করতে ডিনারের সময় হয়ে গেলো সেখানেও সবাই ওই ছেলের গুন কির্তন করছিলো অসহ্য। কোথায় আমি DMC তে চান্স পেলাম সবাই আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে? তা না কোন উগান্ডার প্যাচাল পারছে? প্রচন্ড বিরক্তি লাগছে। 

রাতে খাটে আধশোয়া হয়ে ভাবছি সবার বলা কথাগুলো।আচ্ছা সবাই সব বলল ছেলেটার নামতো বললনা? কী নাম ওনার? দূর! এত কিছু বলল নামটা বলতে পারলনা? আজব নাম জেনে আমি কি করব আমি কেন এত ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছি? But এত So called talented একটা ছেলের নাম কী হতে পারে? What's his name?




Infinite Love💗

Part: 03

রাতে খাটে আধশোয়া হয়ে ভাবছি সবার বলা কথাগুলো।আচ্ছা সবাই সব বলল ছেলেটার নামতো বললনা? কী নাম ওনার? দূর! এত কিছু বলল নামটা বলতে পারলনা? আজব নাম জেনে আমি কি করব আমি কেন এত ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছি? But এত So called talented একটা ছেলের নাম কী হতে পারে? What's his name?যতই বলিনা কেন,যে কোন ইন্টারেস্ট নেই কিন্তু আমারো জানতে ইচ্ছে করছে ছেলেটা দেখতে কেমন? সবাই যেভাবে ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছেলেটাকে দেখার অদম্য ইচ্ছেটাকে কিছুতেই দমাতে পারছিনা। আগেতো এরকম হয়নি? কখনো কারো সম্পর্কে নূন্যতম কিছু জানার ইচ্ছে ছিলোনা আমার। কোন জায়গায় কোন অনুষ্ঠান বা রাস্তাঘাটে কেউ যদি যেচে কথা বলতে আসলে আমার রিপ্লেগুলো শুনে পুরোদমে দমে যেত, মানে পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেত। একবার আমি পারার এক বিয়ে বাড়িতে গেছিলাম তো সেখানে একটা ছেলে এলো আলাপ করতে।

ছেলে: Hi I'm Mahbub.

আমি: So what can i do?

মাহবুব একটু ঝটকা খেল তবুও বলল 

মাহবুব: No actually পরিচিত হতে এলাম। Nice to meet you.

আমি: not for me..

মাহবুব: too much attitude.. আচ্ছা নামটাকি বলা যাবে?

আমি: আমি আমার নামের Advertise দিচ্ছি না যে জনে জনে নাম বিলি করে বেরাবো? Excuse me 

বলে চলে এলাম। পেছনে না তাকিয়েও বুঝেছিলাম যে ও পুরো বেকুব বনে গেছে.. 

কিন্তু এখন আমার হয়েছেটা কী? যেখানে আমি কোন সেলিব্রিটির Wikipedia পর্যন্ত ঘাটিনি সেখানে এই ছেলের ফুল বায়োডেটা জানতে ইচ্ছে করছে। সত্যিই কী ছেলেটা সেরকম? যেরকমটা সবাই বলছিল?

এরমধ্যেই আপি এলো এসে আমার পাশে খাটে হেলান দিয়ে বসে একটা টেডি কোলে নিয়ে এক হাতে ফোন স্ক্রল করতে করতে বলল 

আপি: কী বেপার কী ভাবো?

আমি: মানিক আঙ্কেল এর ছেলের কথা।( আনমনে)

আপি ফোন থেকে চোখ সরিয়ে অবাক হয়ে আমায় দেখছে যেনো ও পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখছে। আপুর ওমন অবাক দৃষ্টিতে বুঝতে পারলাম আমি কী বলেছি।তাই কনোরকমে বললাম

আমি:না মানে সবাই এতো আলোচনা করছে তো ওকে নিয়ে তাই.. (আর কিছু বলতে পারলাম না মাথা নিচু করে রইলাম। কারন আমি জানি এখন আর কোনো লেইম এক্সকিউস খাটবেনা)

আপি: তুমি ভাবছ? তাও একটা ছেলেকে নিয়ে? তাও সেই ছেলে যাকে তুমি দেখইনি? Like seriously?

আমি: (কি বলব ভাবছি)

আপি: যেই তুমি কিনা কেউ তোমার সামনে নাচনাচি করলেও এইটুকু ইন্টিরেস্ট দেখাওনা যে লোকটা কেনো নাচছে? সেই তুমি কী না কাউকে নিয়ে ভাবছ? interesting..

আমি: তো কী করব আপি? সেই সকাল থেকে এই বাড়িতে শুধু ওই ছেলের গুনগানই গাইছে সবাই ছেলে তো না যেনো কোথাকার কোন রাজ্যের মহান রাজা। এইজে আমি মেডিকেলে চান্স পেলাম সবাই আমার গুনগান করবে তা না? কোথাকার কোন ছেলের কীর্তন শুরু করল সবাই। isn't it disgusting?

আপি: Okay cool... এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? দেখ ছেলেটার পারসোনালিটি ভালো ট্যালেন্টেড, ফিসিকালি ফিট এতোদিন পর দেশে আসছে।তার ওপর আমাদের known Person একটুতো আলোচনা হবেই।

আমি: এটা একটু? ট্যালেন্ট কী আমাদের কারো মধ্যে নেই নাকি? তুমি, কাব্য আমি আমরা কম কিসে? মানছি উনি একটু বেশিই ট্যালেন্টেড তাই বলে এত বাড়াবাড়ির কী আছে?

আপি মুখ টিপে হাসছে তা দেখে আমি ভ্রু কুচকে বললাম

আমি: এই তুমি হাসছ কেন?

আপি: তুই যে এত হিংসুটে হয়ে গেছিস আগে জানতাম না তো?

আমি: মোটেই না আমি কেবল ফ্যাক্ট টা বলছি।

আপি: Okay fine। তা তুমি কী শুধুই বিরক্ত হচ্ছ? নাকি অন্যকিছু?

আমি: দেখোনা সবাই এত কিছু বলল অথচ নামটাই বললনা ভাললাগে? 

কিছু না ভেবেই বলে দিলাম কথাটা

আপি: ওওওও এই তবে বিরক্তির কারন?

আমি: তেমন কিছু না আসলে..

আপি: থাক বলতে আর হবে না। ছেলেটার details চাই?

আমি: আছে তোমার কাছে? (উত্তেজিত হয়ে)

আপি: বাহবা এত্ত Interest?

আমি: আমার কেন interest থাকতে যাবে বলোতো? এমনিই বললাম আরকি। তুমি কোথায় পেলে ওর ডিটেইলস?

আপি: আসলে তুমিতো জানোই আমি এসব বিষয়ে কত কৌতুহলি তাই সবার মুখে ওর কথা শুনেই সোসাল সাইন ইন্টারনেট থেকে ওর ডিটেইলস জোগার করেছি।

আমি: ওর ডিটেইলস ইন্টারনেটেও আছে?

আপি: Yup sweetheart... actually Uk তে ও যেসব প্রজেক্ট লঞ্চ করেছে তারমধ্যে অনেকগুলোই বেশ important ideas দিয়েছে। যেগুলো Software improvement এবং ICT এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা রাখবে তাই একটু popular হয়েছৈ। যদিও ও কোনো Press meeting করে না আর বেশি পাবলিসিটিও পছন্দ করেনা।

আমি: হুহ ভাব বুচ্ছ ভাব। আচ্ছা শুনি কী ডিটেইলস?

আপি: তোমার নাকি ইন্টারেস্ট নেই শুনে কী করবে?

আমি: (কী বলব এখন?) আমি কখন বললাম আমার ইন্টারেস্ট আছে? আমি তো জাস্ট এমনিই জানতে চাইলাম। ওকে না বললে নাই।

আপি: সেই আসলে ডিটেলস পেয়েই ভাবলাম তোমার সাথে ডিসকাস করি। But as you are not interested then leave..

আমি: (Damn আমিতো এমনি ভাব দেখিয়ে বললাম ইন্টারেস্ট নেই ভেবেছিলাম আপি বলে দেবে But why don't api understand যে আজ ওনার ডিটেইলস না জানলে আমার ঘুম হবেনা) interested না হলে কী বলা যায়না নাকি?

আপি: কেন বলব? তুমি যদি interested না হও তাহলে যেনে কী হবে?(ভ্রু কুচকে)

আমি: তবুও...

আপি: কোন তবুও টবুও নয় আমি গেলাম।

আপি যেতে নিলে আমি তারাতারি হাতটা ধরে ফেলি। 

আমি: আপি এমন করছ কেন বলে যাওনা।

আপি: আজবতো তুই বলছিস তুই ইন্টারেস্টেড না আবার তোর শুনতেই হবে? যেকোনো একটা বল।

আমি: Okay fine i am interested এবারতো বল। (হাত জোর করে দাতে দাত চেপে)

আপি: হয়েছে হয়েছে হাত জোর করতে হবে না বলছিতো শোন।

আমি: হ্যা বলো।

আপি: হুম। এই one minute তোদের ভর্তি কনফার্ম কবে করবি?

আমি: এইতো এই সপ্তাহেই। তুমি বলো।

আপি: বলছি। আর শোন ইসরাত আর তুই একসাথেই যাস ভালো হবে।

আমি: ওকে ওকে যাবো এবার continue করো না

আপি: করছিতো বাবা কিন্তু ঐশ্বর্য আর রিম এর খবর ও নিয়ে নিয়েছিস।

মেজাজটা প্রচুর খারাপ এমন কেন আপি?

আমি: আপি... তুমি এত কথা বলা কবে থেকে শিখলে বলোতো? ডিটেইলস বলো।

আপি: আরেহ আমিকি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি? বলছিতো। তুই ইন্টারেস্ট নেই ইন্টরেস্ট নেই বলে এখন তো শোনার জন্য অস্হির হয়ে উঠছিস।

আমি: আপু তুমিকি বলবে? কখন থেকে আজে বাজে কথা বলছ আসল কথাটা বলো না?

আপি: কী আসল কথা?

আমি: লও ঠ্যালা। জানোনা কী কথা? ছেলেটার ডিটেইলস বলো আমাকে।

আপি: ও হ্যা। আগে বলো কী দিয়ে শুরু করব?

আমি: উমম নাম দিয়েই শুরু কর। কারন সবাই almost সবি বলেছে নামটা ছাড়া।

আপি: আচ্ছা শোন তাইলে?

আমি: উফফ আপি তুমি শুরু করতো খালি বলছি শোন এসব বলে যাচ্ছ।

আপি: বাপরে রাগ করছিস কেন বলছি

ছেলের নাম আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। বয়স 25। Height 6'2". Weight জানা নেই তবে রেগুলার জিম করে, So well body fitness. ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে ইন্জিনিয়ারিং কম্প্লিট করেছে।

আমি: বাহ! আর?

আপি: ওর Discover গুলো সম্পর্কে তো জানোই। আর হ্যা Boxing championship তো আছেই। 

আমি: আর?

আপি: অন্যান্য খেলাতেও বেশ ভালো তাতো শুনেছই।

আমি: হুম আর?

আপি: আর একটা ছোট বোন আছে এবার ইন্টার ফার্সট ইয়ারে পড়ে।

আমি: বোনের কথা শুনে কী করব? ওর কথা বলো।

আপি একটু অবাক হলো তবুও নিজেকে সামলে বলল

আপি: হুম ওর একটা গবেষনা ল্যাব ও আছে সেখানে ও রিসার্জ করে আর ডিসকভার ও করে।

আমি: ওহ আর?

আপি: (ভ্রু কুচকে) ও ছেলে রচনা না যে শুরু হলে শেষ হতে চাইবে না।

আমি: আমি কখন বললাম সেটা, তাছাড়া আমার জানার কোন শখ নেই শুধুই এতো পেচাল পারলা।

আপি আহাম্মকের মত কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল

আপি: তাই? ভালো But do you know ও কিন্তু কাল বাড়িতে আসছে।

আমি: কী? সত্যি?

আপি: Why are you being so exited? তুমিতো ইন্টারেস্টেড না?

আমি: কে excited কোথায় excited?

হঠাৎ কাব্য এলো বলল আব্বু আব্বু ডাকছে আমাদের আমরা দুজনেই গেলাম।

আমি: আব্বু আসব

আব্বু: হ্যা আয় এডমিট কবে হবি?

আমি: এই সপ্তাহেই আব্বু।

আম্মু: আচ্ছা বস এই বিষয়ে কিছু আলোচন আছে।

আমি আর আপি বসলাম হঠাৎ কর এলো আব্বুর ফোন এলো।

আম্মু : কে ফোন করল এখন?

আব্বু: আদ্রিয়ান মানিকের ছেলে।

শুনেই বুকটা ধক করে উঠল। কেন তা জানা নেই আমার।

আব্বু ফোন রিসিভ করে কথা বলল কতখন লাউডে নেই তাই শুনতে পেলাম না। ফোনে কথা বলা শেষে আম্মু বলল

আম্মু: কী বলল?

আব্বু: কাল আসছে বাসায় সেই নিয়েই কথা বলল।

এরপর কিছুক্ষন কথা বলে রুমে চলে এলাম। এসে শুয়ে শুয়ে ভাবছি ছেলেটার কথা কী নাম আদ্রিয়ান আবরার জহায়ের? ওনাদের পদবিতো খান মানে পুরো নাম দারাচ্ছে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের খান? হাসি পেল খুব কারন ওর নামটা ওরি মতো পুরাই রচনা। ফেসবুক ঘাটছি হঠাৎ "people you may know" অপশনে একটা আইডি এল 'Adrian Abrar Zuhaer' বাট আইডিতে এমন কিছুই নেই যার দারা বোঝা যায় এটা ওনারি আইডি কিনা, প্রফাইল পিক ও নিজেরটা দেয় নাই scientific কিছু একটার পিক দিছে, হুহ আসছে বিজ্ঞানি আমার। হঠাৎ দেখলাম মেচুয়াল ফ্রেন্ড আপি তাই মোটামুটি সিওর হলাহ ইনিই তিনি।

যাই হোক এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম খুব excited লাগছে আজকে কেন তা জানিনা। নিচে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি আপি বসে বই পড়ছে। আমাকে দেখে বলল

আপি: Good morning কী ব্যাপার এত সকালে?

আমি: morning.আসলে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাই।

আপি: তোর ঘুম নিজে থেকে ভাঙ্গলো? seriously.

আমি: আজব ভাঙতে পারেনা?

আপি: হুম বস কফি আনছি তোর জন্য।

আমি: Better

আপি চলে গেল কফি আনতে। তারপর দুজন একসাথে কফি খেয়ে গল্প করতে করতে ব্রেকফাস্ট এর সময় হয়ে গেল। টেবিলে বসে খেতে খেতে বললাম

আমি: আচ্ছা ওরা কখন আসবে?

আম্মু: ওরা কারা?

আমি: ইয়ে.. আদ্রিয়ানরা।

আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেনো আমি অদ্ভুত কিছু একটা বলে ফেলছি। কী এমন বললাম?

আম্মু: দুপুরে খাবে বললতো।

আমি: ওহ।

কাব্য: আমি নাকি সব বেপারে over excitement দেখাই? এখন তুই কী দেখাচ্ছিস?

আমি: আজব? আমিতো জাস্ট জানতে চেয়েছি হুহ।

আব্বু: হয়েছে থামো সবাই।

এরপর সবাই চুপ করে গেল। ব্রেকফাস্ট করার পর পাইচারি করছি, হঠাৎ মাথায় এলো ওনার গার্লফ্রেন্ড আছে কীনা তা তো জানা হলোনা? আপি এতকিছু বলল ওটাই বললনা? কিছুতেই কৌতুহলটা দমাতে পারছিনা তাই নিচে গেলাম দেখলাম আপি সোফায় বসে ফোন দেখছে। জিজ্ঞেস করব? করেই ফেলি কী আর হবে? আমি গিয়ে আপির পাশে বসলাম।

আমি: আপি?

আপি: বলো। (ফোন টিপতে টিপতে)

আমি: আচ্ছা ওনার কী গার্লফ্রেন্ড আছে?

আপি: কার? (ফোনে চোখ রেখেই।

আমি: আ.. আদ্রিয়ানের।

আপি ফোন থেকে চোখ সরিয়ে যথারীতি সেই অবাক দৃষ্টি।

আপি: তা জেনে তুমি কী করবে?( মুখে দুষ্টমির হাসি দিয়ে)

আমি: না মানে এমনি।

আপি: Personally আছে কীনা জানিনা But according public information he is not single.

কেন জানি একটা ধাক্কা খেলাম। গলা আটকে এল কিন্তু কেন তা জানিনা।

আমি: মা..ননে?

আপি: মানে He is pure single..( হেসে দিয়ে)

এবার অনেকটা হালকা লাগলো নিজেকে উফফ। আবার সন্দেহ হলো এরকম একটা ছেলে বিদেশে পড়েছে অথচ কোন গার্লফ্রেন্ড নেই? এর পেছনে কি কোন কারন আছে?

আপি: হঠাৎ তুমি এসব জিজ্ঞেস করছ কেন? 

আমি: না আসলে এমনি।

বলে ওখান থেকে চলে এলাম নইলে আপি জেরা করবে।

দুপুর প্রায় হয়ে গেছে তাই গোসল সেরে একটা লাল গোল জামা পরলাম আসলে গেষ্ট দের সামনে তো আর টিশার্ট প্লাজো পরে যেতে পারবোনা। 

রেডি হয়ে নিচে এসে দেখি আম্মুর রান্না হয়ে গেছে আহ কত পদ।

আপি: বাহ সুন্দর লাগছে তোকে।

আমি: Thank you sweetheart.

এবার সবাই নিচে নেমে এল। আব্বু, ফুপা, সুলতানাপ্পি, চাচু ওহি। অনন্ত ঘুমে আছে।সবার ইন্টারেস্ট একটাই আদ্রিয়ান।সবাই অধির আগ্রহে ওর অপেক্ষা করছে।

হঠাৎ কলিং বেল বাজল। আম্মু: ওই এসেছে বোধ হয়। অনি যাও খুলে দেও।

আমি: আমি?

আব্বু: হ্যা জলদি যা ওরা দাড়িয়ে অাছে।

আপি: কী হল যা

আমি কাপাকাপা পায়ে দরজাটা খুলতে যাচ্ছি এতক্ষন যাকে নিয়ে এত কল্পনা জল্পনা সে এখন আমার সামনে হবে? বড্ড ইচ্ছে করছে আয়নায় একবার নিজেকে দেখতে কিন্তু তা সম্ভব না। আচ্ছা উনি আমায় দেখে কীভাবে রিয়াক্ট করবে? দূর কী ভাবছি উনিতো আমায় চেনেই না, আগে কখনো দেখেইনি এসব ভাবাই অবান্তর। তাই কোন রকম বুকে ফু দিয়ে দরজাটা খুললাম দরজা খুলেতো আমি অবাক।



Infinite Love💗

Part: 04

আমি কাপাকাপা পায়ে দরজাটা খুলতে যাচ্ছি এতক্ষন যাকে নিয়ে এত কল্পনা জল্পনা সে এখন আমার সামনে হবে? বড্ড ইচ্ছে করছে আয়নায় একবার নিজেকে দেখতে কিন্তু তা সম্ভব না। আচ্ছা উনি আমায় দেখে কীভাবে রিয়াক্ট করবে? দূর কী ভাবছি উনিতো আমায় চেনেই না, আগে কখনো দেখেইনি এসব ভাবাই অবান্তর। তাই কোন রকম বুকে ফু দিয়ে দরজাটা খুললাম দরজা খুলেতো আমি অবাক। শুধু অবাক নই, বড়সর ধাক্কাও খেলাম। ভাগ্যিস দূপুরে কিছু খাইনি, পেট ভরা থাকলে এতবড় ঝটকা খেয়ে অবশ্যই পেট ফেটে মারা যেতাম।

কারন আমার সামনে আদ্রিয়ান না আমার মামাতো দুই ভাই দাড়িয়ে আছে, মানে আপির দুই ভাই সজিব ভাইয়া আর অর্নব ভাইয়া। সজিব ভাইয়া আপির বড়, ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকেই মাসটার্স করেছে এখন জব করছে, আমায় বুড়ি বলে ডাকে। আর অর্নব ভাইয়া হিয়া আপুর ছোট কিন্তু আমার বড়, এবার ওনার্স করছে পলিটিকাল সাইন্স নিয়ে, পাবলিকে চাধ্স হয়নি কারন ওর পড়াশোনার চেয়ে খেলায় ইন্টারেস্ট বেশি। 

আমি ওদের দেখে অবাক এরা কত্তে এসে টপকালো?

সজীব ভাইয়া: কীরে বুড়ি ভুত দেখলি মনে হয়?

আমি: মনে হবে কেনো ভুতিতো দেখলাম। তাও এক জোরা।😆

অর্নব ভাইয়া: হারামি তোকে তো..

বলেই কানটা ধরে মুলে দিলো। আমি ঠোট ফুলিয়ে বললাম এতদিন পরে এসেও আমায় মারছো? not fare.😑

অর্নব ভাইয়া: তোকে মারতে সেই লাগে পিচ্ছি একটা।

আমি: ভাইয়া.. 

সজীব ভাইয়া: হইছে চল ভেতরে চল।

ভেতরে যাওয়ার পর ওদের দেখে সবাই অবাক হলো আবার প্রচুর খুশিও হলো। আপি গিয়ে দুই ভাইকে জড়িয়ে ধরল। 

আপি: তোমরা আসবে বলো নি তো।

সজীব ভাইয়া: সারপ্রাইজ দিলাম। আমার বুড়ি মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেল আর আমরা আসব না?

আম্মু: ভাবি আসে নি?

সজীব ভাইয়া: আসবে পরে।

অর্নব ভাইয়া: আসলে আম্মু একটু নানু বাড়ি গেছে।

এরপর দুজন বাড়ির সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। এরমধ্যেই অর্নব ভাইয়া বলে।

অর্নব ভাইয়া: ময়নাপ্পি খুদা লাগছেতো খাবার দেও।

আপি: চুপ কর পেটুক। গেষ্ট আসবে বাসায়, ওরা এলেই খাবো সবাই।

আব্বু: কিন্তু ওরা আসছেনা কেন?

আম্মু: একটা ফোন করে দেখোনা ওরা কোথায়

আব্বু: হুম দাড়াও।

এরমধ্যেই আব্বুর ফোন বাজল, ফোন রিসিভস করে আব্বু চলে গেল কথা বলতে, ফোনে কথা শেষ করে আব্বু এসে জানালো আদ্রিয়ানরা এখন আসতে পারবেনা। আদ্রিয়ান নাকি কোন কাজে আটকে গেছে বিকেলের দিকে আসবে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল হুহ আসছে কাজ দেখাতে দেশে ফিরতে না ফিরতেই কী এমন কাজ? wait a minute!!! আমি মন খারাপ কেন করছি? আর এসবিবা কেন ভাবছি? সমস্যা কী আমার, এমন সব ফিল হচ্ছে যার কারণ আমারও অজানা সত্যই অজানা।

ওরা যখন এখন আসবে না তাই সবাই মিলে খেতে বসলাম। খাবার সময় হঠাৎ কাব্য বলল

কাব্য: ওই কম কম খা এমনিতেই অনেক মুটি হয়ে গেছিস পরে বিয়ে হবেনা।

আমি: না হলে তোর বাপে.. ( চোখ গেল আব্বুর দিকে উফফ সবসময় ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলি) মানে তোর কী?

কাব্যি: ওইযে তুই আমার বোন তাই।

আমি: তুই ঠিকমত খা দিনে দিনে কাঠি হয়ে যাচ্ছিস। ছেলেরা সিক্স প্যাক বানায় আর তুই কিনা মেয়েদের মত জিরো ফিগার বানাচ্ছিস?😂😂

সবাই হাহা করে হেসে দিল আর কাব্য মুখ ফুলিয়ে বলল

কাব্য: আজ চিকন বলে

আপি: এই অনি আমার ভাইটাকে একদম জালাবিনা চুপচাপ খা।😠

অর্নব ভাইয়া: অনি তুই continue কর আমি আছি তোর সাথে।

আপি: হুহ আসছে রামের দোসর লক্ষণ জ্বী।

সজীব ভাইয়া: আমিও কিন্তু আমার বোনের পক্ষে।

আপি: হ্যা বিভিষন আসাটাই বাকি ছিল।

কাব্য:😂😂😂

অর্নব ভাইয়া সজীব ভাইয়া আর আমি মুখ গোমরা করে কিছুক্ষন বসে থেকে সবাই একসাথে হেসে দিলাম।

এভাবেই হাসি ঠাট্টায় খাওয়ার কাজ হয়ে গেল। খাওয়া শেষে আমি সোফায় বসে গান শুনছি হঠাৎ ওহি এসে বসল। সুলতানাপ্পি অন্তকেও নিয়ে এল। এরপর তিনজন রোজকার খুনশুটিতে মেতে উঠলাম।

কিছুক্ষন পর ওপর গিয়ে দেখলাম খাটে রিপেয়ারিং চলছে মানে রুমে শোয়া যাবেনা তাই কাবার্ট থেকে ব্লাক গোল হাই নেকের পাতলা একটা টিশার্ট একটা রেড প্লাজো আর ফোনটা নিয়ে নিচে একটা রুমে ঢুকে চেন্জ করে নিলাম, কারন এটা আমার অভ্যেস আমি বাড়িতে ভারি বা লং ড্রেস পরতে পারিনা আর গেস্ট বিকেলে আসবে ততোক্ষন এখানেই শুয়ে গেমস খেলি পরে ওরা এলে চেন্জ করে একবারেই যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ চেন্জ করায় আরাম লাগছে তাই আরামে শুয়ে গেমস খেলতে খেলতে কখনযে ঘুমিয়ে গেছি নিজেরি খেয়াল নেই। আমি এমনি কখন যে কোথায় ঘুমিয়ে যাই নিজেও জানিনা, আর আমার ঘুম ভাঙানো কোন যুদ্ধের চেয়েও কম না।

ঘুম ভাঙ্গার পর আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। চারপাশটা দেখে বুঝলাম সন্ধ্যা হোয়ে গেছে। Oh My Allah ওরা এসে গেছে নাকি? এতক্ষনে তো চলেও যাবার কথা, আপিরা কেউ ডাকলোনা? আর আমার যা ঘুম ডাকলেও কতটা শুনেছি কে জানে? এসব ভেবে যেই নামব বলে ভাবছি ওমনি আপি এল। কিন্তু আপির মুখে এক রহস্যময় দুষ্টুমির হাসি যার কারন আমার অজানা।

আমি: আপি ওরা কী চলে আসছে?

আপি: এসে আবার চলেও গেছে।

আমি: কীহ ডাকবেতো আমায়।😠

আপি: আমার ওপর রাগছো কেন? অনেকবার ডেকেছি তোমায় নড়াতেও পারিনি, এত ঘুম কই পাও? আর এখানে ঘুমিয়েছ কেন?

আমি: রুমের খাটে রিপেয়ারিং করছিলো।

আপি: ওহ।

আমি: ওই ছেলেটা I mean আদ্রিয়ান এসছিলো?

আপি: Of course! ওর জন্যইতো আসা ওকে রেখে আসবে কেন? 

আমি: দেখতে কী ওরকমি যেমন সবাই বলছিল? নিশ্চই না।

আপি: হুম একদমি না সবার কথা শুনে যা ইমাজিন করেছিলাম সেরকম সুন্দর না তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর আর ড্যাসিং। কাব্য ঠিকি বলেছিল চাইলেই বলিউড করতে পারত।

আমি: Really?

আপি: জ্বি।

আমি: দূর! তোমাদের ওই ওভার ট্যালেন্টেড ছেলেটাকে দেখা হলোনা।

আপি: আহারে! দুঃখ হচ্ছে? তুমি ওকে না দেখলেও ও কিন্তু তোমায় দেখেছে। (আবার সেই দুষ্টমি মাখা হাসি)

আমি: মানে? 

আপি: মানে ওর একবার ওয়াসরুমে যাবার দরকার পরেছিল তাই আমি ওকে নিয়ে এই রুমে আসি, আমিতো জানতামনা তুমি এখানে ঘুমাচ্ছ আর নিচে এই রুমটাই সবচেয়ে কাছে ছিলো তাই এই রুমটাই দেখিয়ে দিয়েছি।

আমিতো আকাশ থেকে পরলাম মানে কী?

আমি: আল্লাহ না জানি কী অবস্হায় ছিলাম, উফফ। একটু দেখে নিবা না।

আপি: আমিকি জানি নাকি?

আমি: তারপর কী হল?

আপি: তারপর ওর দেরি হচ্ছে দেখে দেখতে গেলাম কোন প্রবলেম হয়েছে নাকি, গিয়ে দেখলাম..

আমি: কী দেখলে? (ঢোক গিলে)

আপি: তোকে ঘুমোতে।

আমি: আর কিচ্ছু না? ( সন্দেহের চোখে)

আপি: আর কী হবে? কিছুইনা...

Kuchto hai tujhse raabta

Kuchto hai tujhse raabta...

আমাকে এক চোখ টিপ দিয়ে গানটা গাইতে গাইতে আপি চলে গেল। যাহ বাবা কী এমন দেখেছে আপি যে এত রোমান্টিক মুডে আছে? পুরাই বোকা বনে গেলাম আপির কথা শুনে। দূর ছেলেটাকে দেখাই হলোনা? আজ প্রথম নিজের ঘুমের ওপর খুব রাগ লাগছে এই সময়টাতেই এমন মরা ঘুম আসতে হলো? না ঘুমোলেতো দেখতে পারতাম ওকে। আচ্ছা ওকে দেখতে না পারায় আমার এত খারাপ লাগছে কেন? ইডানিং নিজের ভাবনা আর কাজে নিজেই অবাক হচ্ছি। যাই হোক আমি ওকে দেখতে পারলাম না অথচ ও আমাকে ঠিকি দেখে নিলো তাও ঘুমন্ত অবস্হায়? আল্লাহ ঘুমলেতো আমার জামা কাপরের ঠিক থাকেনা প্লাজো খানিকটা উঠে যায়, টি শার্ট ভাজ হয়ে যায় কীভাবে ছিলাম কে জানে, ওরনাওতো ছিলোনা। এসব ভাবতে ভাবতে নামতে যাবো গায়ের চাদর সরানোর সময়ই মাথায় এলো আমিতো গায়ে চাদর জরিয়ে শুই নি? গরম ছিলো তাই এসি চালিয়ে এমনিই শুয়ে পরেছিলাম তাহলে? তাহলে আর কী নিশ্চই আপি দিয়েছে আপি ছাড়া কে দেবে? বাট ছেলেটা রুমে আসার আগেই চাদরটা জরানো থাকলে ভালো হতো

যাই হোক এসব ভেবেই ড্রয়িং রুমে গেলাম। আপি আমাকে দেখে মুখ টিপে হাসছে, আজব এত হাসির কী হল? আমি সেটা ইগনর করে গিয়ে সোফায় বসলাম। কিছুক্ষণ পরেই সজীব ভাইয়া, অর্নব ভাইয়া আর কাব্য এল সাথে মোগলাই নিয়ে এসছে, আর আম্মু সবার জন্য চা বানিয়ে আনল, এরপর বাড়ির সবাই একসাথে খেতে আড্ডা দিচ্ছি, কিন্তু আজ আমি আড্ডায় মন দিতে পারছিনা মনে শুধু আদ্রিয়ান ঘুরছে, নিজের কাছেই অসহ্য লাগছে এত কেন ভাবছি ওর কথা? এসব ভাবতে ভাবতেই আম্মু বলল

আম্মু: কীহল অনি খাচ্ছোনা?

সবার দৃষ্টি এখন আমার দিকে। আমি জোর করে হেসে বললাম

আমি: এইতো খাচ্ছিতো।

খাচ্ছিতো বলে আবার সেই ভাবনায় ডুব দিলাম। এবার ওহি ডাকল।

ওহি: আপু..

আমি:

ওহি: আপু...(চিৎকার করে)

এবার আমার ধ্যান ভাঙলো।

আমি: হ্ হ্যা বলো বেবি।

সুলতানাপ্পি: কী এত ভাবছ বলোতো

আমি: কিছুনা। কী ভাবব? কীছুইনা। ও্ওহি ডাকছিলে কেন?

ওহি: খাইয়ে দাও তুমি। 

আমি: আচ্ছা দাও খাইয়ে দিচ্ছি।

এরপর সবাই আড্ডায় মাতল এবার আমিও জয়েন করলাম। এরমধ্যেই সজীব ভাইয়া বলল

সজীব ভাইয়া: গ্রামে আমাদের করা পিকনিক আর খেলার কথা আজো মনে পরে। 

আপি: হুম খেত থেকে কলই শুটি চুরি করে সেদ্ধ করে আমাদের বিশাল কাঠবাগানে বসে বসে খাওয়া।

অর্নব ভাইয়া: মাঝরাতে সবাই উঠে খিচুরি পাকিয়ে খাওয়া, ভূতের ভয় দেখানো কত কী।

কাব্য: I missed maximum things..

অর্নব ভাইয়া: সেটা তোর দোষ তুই দুনিয়াতে ডাউনলোড হতে টাইম লাগিয়েছিস আমরা কী করব।

আম্মু: সজীব এখনো লুঙ্গি পড়িস না? 😁

আম্মুর এই কথা শুনে সবাই হেসে দিলাম। কারন সবাই জানি আম্মু কেন এই প্রশ্ন করল। আমার হাসিতো থামছেই না।সবার হাসিতে সজীব ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকালো, আর আমি হাসি থামিয়ে ভয়ে ভয়ে ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার জোরে হেসে দিলাম। আর ভাইয়া আরো রেগে তাকালো আমার দিকে কারন ভাইয়ার লুঙ্গি না পড়ার আর এই লেগপুল এর জন্য দায়িতো একমাত্র দি গ্রেট আমি।

আসলে ঘটনাটা হলো তখন আমার সাত বছর বয়স। গ্রামে নানু বাসায় সবাই মজা করে ছুটি কাটাচ্ছিলাম। সবাই মানে সব মামাতো খালাতো ভাইবোনরা। তো একদিন ঠিক করলো সবাই যে কাবাডি খেলবে। তাই অর্নব ভাইয়া, সজীব ভাইয়া, আপি, আরো কাজিনস্ সবাই বাড়ির বিশাল খেলতে নামলো, দর্শক ছিলো বাড়ির সব বড়রা। আমাকেও রাখলো খেলায়, আমি সবার চেয়ে খুব ছোট ছিলাম তাই আমি ছিলাম দুধভাত you know. আমি সজীব ভাইয়ার অপজিট টিমে ছিলাম। সজীব ভাইয়া একাই একশ ছিলো।কিছুতেই ওই দলকে হারানো যাচ্ছিলোনা, ভাইয়া একে একে এসে সবাইকেই আউট করে দিচ্ছিল, বাট জিততেতো হবেই তাই আমাকে আমার এক কাজিন বুদ্ধি দিলো ভাইয়া এই পাশে এলেই ভাইয়ার লুঙ্গি ধরে টান মারতে। আমি ছোট ছিলাম তাই অত কথা বুঝিনি, ভাইয়া কাবাডি কাবাডি বলে এপাশে আসতেই দিলাম লুঙ্গিটা ধরে টান। তবে ভাগ্য ভালো লুঙ্গিটা খুলে পড়ে যাবার আগেই ভাইয়া লুঙ্গিটা কোনোরকম ধরে দৌড়। সবাইতো হাসতে হাসতে অস্হির আর আমি ভাইয়ার দৌড় দেখে বোঝার চেষ্টাতে ছিলাম যে ব্যাপারটা কী হল? 😂😂

তবে এরপর থেকে কোনদিন ভাইয়া ভূলেও আর লুঙ্গি পড়েনি।😁

বি:দ্র: শেষে উল্লেখিত লুঙ্গি বিষায়ক ঘটনাটি কিন্তু এক্কেবারে সত্যি ঘটনা😂]



Infinite Love💗

Part: 05

তবে এরপর থেকে কোনদিন ভাইয়া ভূলেও আর লুঙ্গি পড়েনি।😁

রাতে খাটে শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপটা ঘাটছি, চোখ টা ল্যাপটপে থাকলেও মনটা শুধুই আদ্রিয়ানকে নিয়ে ভাবছে, আদ্রিয়ানকে দেখতে না পাবার জন্য মনে মনে চরম আপসোস করছি। হঠাৎ আপি এসে পাশে বসে তার কাধ দিয়ে আমাকে একটু ধাক্কা মেরে বলল

আপি: কী মন খারাপ?

আমি: মন খারাপ কেন হবে? 

আপি: বারে আদ্রিয়ানকে দেখতে পাশনি বলে।

আমি: What the.. ওর দেখা না পেলে আমার কী?আমি কেন মন খারাপ করতে যাবো?

আপি: সেটাতো তুমিই ভালো জানো। তবে ভেবনা মাঝে মাঝেই আসবে ও দেখা হোয়ে যাবে।

আমি: তাতে আমার কী? হলে হবে না হলে নাই।

আপি: হুম বুঝি বুঝি দেখছি তো একেক জনেল কারবার। একজন সারদিন চিন্তায় বিভর হোয়ে আছে। আর আরেকজনতো এক্কেবারে... (এইটুকু বলেই থেমে গেল)

আমি: আরেকজন এক্কেবারে?

আপি: কিছুইনা

আমি: না কী করেছে বল? শুধুতো আমায় ঘুমানো অবস্হায় দেখেছে তাও এক্সিডেন্টলি, আরতো কিছু করেনি তাহলে এভাবে বলছ কেন?

আপি: হ্যা হ্যা তাইতো আর কী করবে?

কিছু করেনিতো! কিছুই করেনি! 😅😅

বলেই আপি কেটে পড়ল। আর আমি খালি আপির ভাবসাব দেখছি। হচ্ছেটা কী? আদ্রিয়ানরা যাবার পর থেকে আপির behavior is not normal.. কি এমন হয়েছে? আর অথৈ আর কাব্যও আমার দেখে আজব কিছু expression দিচ্ছিলো? What's going on? দূর আমার ঐশি বেবিকে ফোন করে কথা বলি,সময় কাটবে। ঐশি মানে ঐশর্য, আমার আরেক বেষ্টু, আগেই বলেছিলাম ওও আমার মেডিকেলেই চান্স হয়েছে।

ঐশি: হ্যালো কিউটিপাই। কী খবর?

আমি: বিন্দাস। তোর কী খবর?

ঐশি: সেই। আচ্ছা শোন কালকেই এডমিট হয়ে যাবো বুঝলি?

আমি: ওকে বেবি আমি রেডি হোয়ে বেরিয়ে যাবো।

ঐশি: হুম, ইশুকে (ইশরাত) কে বলে দিয়েছি।

আমি: গুড। তিনজন একসাথেই যাবো।

এইভাবেই কিছুক্ষন কথা বলে ঘুমিয়ে পরলাম।

এভাবেই আরো কয়েকটা দিন কেটে গেল, এরমধ্যেই এডমিট হওয়া আর যাবতিয় কাজ সেরে নিয়েছি, তবে এইকয়েদিনে আদ্রিয়ানকে এক্কেবারেই ভুলতে পারিনি, বাড়িতে প্রায় রোজই ওর কথা হয়, আব্বু অনেকবার আমাদের সামনেই কথা বলেছে ওর সাথে কিন্তু ছেলেটার গলার আওয়াজটাও শুনতে পেলাম না। কিন্তু ইচ্ছাটা তীব্র ছিল কিন্তু সেটা কেন নিজেই জানিনা।

আজ অরিয়েনটেশন ক্লাস আপি অনেকবার ডেকে গেছে কিন্তু আমার ওঠার নাম নেই।

আপি: অনি ওঠো কখন থেকে ডাকছি? আজ অরিয়েনটেশন ক্লাস আছে ভূলে গেলে? 😠

আমি: হুম...

আপি: কী হুম? সারে আটটা বাজে ওঠো...!!

শুনেই লাফ দিয়ে উঠলাম কী বলে? দশটায় অরিয়েন্টেশন ক্লাস আর এখন নাকি সারে আটটা বাজে? উঠবো কখন, রেডি হবো কখন, আর যাবো কখন?😟

আমি: উফফ আপি আগে ডাকবে তো!😠

আপি: কখন থেকে ডাকছি হুস আছে? যা রেডি হয়ে নে। আমি খাবার রেডি করছি।

আমি ফোন এ হাত দিতেই দেখি ইশু আর ঐশির এত্তগুলা মিসড কল। আল্লাহ ওরা তো আমায় পানি ছাড়াই গিলে খাবে। ওদেরকে কল ব্যাক করে কোনরকম সামালদিয়ে ওয়াসরুম এ গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে একটা হাটু অবধি সাদা গোল জামা, বেবি পিংক পাজামা( জিন্স না তবে দেখতে জিন্সের মত) পড়ে গলায় একটা বেবি পিংক ওরনা পেচিয়ে নিলাম তারপর ঠোটে হালকা করে বেবি পিংক লিপস্টিক দিলাম, হালকা দিলাম কারন আমার ঠোটের রংটাও ওরকমি ওরকমি, চুলটা আচরে ছেরে দিয়ে নিচে চলে এলাম ( আমার চুলগুলো ছাড়লে কোমর অবধি পরে তবে চুলের রং মোটেই কুচকুচে কালোনা, হালকা ব্রাউন)। 

নিচে গিয়ে দেখি আমার খাবার রেডি করা। ডাইনিং এ বসতেই আম্মু বলল

আম্মু: আজ একটু তাড়াতাড়ি উঠলে কী হতো? 

আমি: সরি আম্মু পারলেতো উঠতামই। এখন কথা বলুনা সময় নেই। 

আপি: হ্যা জলদি খাও। You are already late.!!

আমি আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে বেরিয়ে গেলাম। রাস্তায় গাড়ি পেতেও সময় লাগলো, বাড়ির গাড়ি আমার কপালে জোটে না, কারন বাড়ির তিনটে গাড়িই তিনজনে অফিস নিয়ে যায়। অবশেষে DMC তে এলাম কিন্তু I am already 42 min late. 

গেটের কাছে ভেতরে ঢুকতেই কারো পায়ে পারা দিয়ে ফেললাম।

ছেলেটা: উফফ্

আমি: হে দেখে চলতে পারেননা নাকি?

ছেলেটা: Excuse me. পায়ে আপনি আমার পারা দিয়েজেন।

আমি: So আপনিওতো আপনার পা টা আমার সামনে রেখেছেন।

ছেলেটা কতক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে দিল, লোকটার হাসি দেখে আমিও হেসে দিলাম।

ছেলেটা: আমি আদিব। তুমি?

আমি: অনিমা। আপনিকি স্টুডেন্ট?

আদিব: নাহ আমার এক বন্ধুর সাথে এসছি। ও আজকের অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের গেস্ট।

আমি: আপনি একটু বলবেন কোন ফ্লোরে প্রোগ্রাম?

আদিব: Sure চল পৌছে দিচ্ছি।

আমি: না না তার দরকার হবেনা আপনি জাস্ট ডিরেকশনটা বলে দিন।

আদিব: ওকে 5th flour বিল্ডিং কোনটা তাতো জানোই।

আমি: হ্যা ধন্যবাদ ভাইয়া।

আদিব: ভাইয়া বলছ আবার ধন্যবাদ দিচ্ছো?

আমি: ওহ সরি কিন্তু এখন  I'm late তাই বাই।

আদিব ভাইয়া: আচ্ছা।

তাড়াতাড়ি করে গিয়ে দেখি লিফট মহাভিজি। তাই কিছু না ভেবেই সিড়ি দিয়ে দৌড়তে শুরু করলাম। কিন্তু হটাৎ কোন এক খামবার সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে গেলাম। বেশ অনেকটা উচু থেকেই পরেছি, অনেকটা ব্যাথাও পেয়েছি কিন্ত ভাগ্য ভালো যে উলটা পালটা ভাবে পরিনি তাহলে নিশ্চিত হাত পা ভাঙতো, ঠিক এঙ্গেলে পড়ায় শুধু ব্যাথা পেয়েছি। কোন খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়লাম তা দেখার জন্য মাথা তুলে তাকাতেই আমি পুরো হা।

একটা ছেলে নামচে সিড়ি দিয়ে। বেশ ফর্সা, অনেক লম্বা 6 ফিটের বেশি হবে, একটা নেভি ব্লু টি শার্ট পরছে, আর কালো জিন্স, তারওপর গাঢ় এস কালার লেদার জ্যাকেট, ব্লু আর এস এর কম্বিনেশন এ কেচ পরেছে। চুলগুলো ব্রাউন তবে হাইলাইট না। সিড়ি দিয়ে নামছে তার তালে তালে চুলগুলোও নড়ছে। কী চমৎকার দৃশ্য,আমি হাজার চেষ্টা করেও চোখ ফেরাতে পারছিনা, একে ক্রাশ বলা যায় কীনা আমি জানিনা কিন্তু এইটুকু জানি এই ছেলে আমার আঠারো বছরের রেকর্ড ব্রেক করে দিয়েছে।এই প্রথম কোন ছেলেকে দেখে আমি এভাবে তাকিয়ে আছি। 

কিন্তুু হঠাৎ ই এই ছেলেটার কারনে পড়ে যাওয়ার কথাটা মাথায় চাড়া দিলো রেগেমেগে যেই কিছু বলতে যাবো, উনি অমনি বললেন

ছেলেটা: Hello miss are you okay?

আমি আরো একবার অবাক এত্ত সুন্দর ভয়েজ কোন ছেলের হতে পারে? তবুও নিজেকে সামলে প্রচন্ড রেগে বললাম

আমি: একেতো আপনার জন্য পরে গেলাম ধরলেনও না তারওপর আমাকে না তুলে জিজ্ঞেস করছেন, I'm okay or not? ম্যানার্স নেই কোন?

ছেলেটা এক হাটু ভেঙ্গে অামার পাশে বসল তারপর বলল

ছেলেটা: এটা কী তোমাদের I mean মেয়েদের মেয়েগত স্বভাব?

আমি: What do you mean?

ছেলেটা : I mean, আমি যদি তোমাকে তখন ধরতাম তাহলে বলতে এডভান্টেজ নিচ্ছি, এখন তুলতে এরে বলতে টাচ করার বাহানা খুজছি। এসব কিছুই করিনি বলে বলছ ম্যানার্স নেই। তোমরা নিজেরাই জানোনা তোমরা কীসে খুশি হও।

আমি পুরাই বোকা বনে গেলাম এ ছেলে বলে কী? ছেলেটা আবার বলল।

ছেলেটা: যদি উঠতে ইচ্ছে করে তাহলে হাতটা বাড়িয়ে দিতে পারো, বাট আমি নিজে থেকে হাত বাড়িয়ে কথা শুনতে পারবোনা। 

Like really? এমনও পাগল ছেলে হয় আমিও হাত বাড়াবোনা হুহ আমারকি সেলফ রেস্পেক্ট নেই নাকি?

ছেলেটা কিছুক্ষন ওয়েট করার পরেও আমি হাত বাড়ালাম না তারপর ছেলেটা বলল।

ছেলেটা: Okay fine. I'm going. থাকো তুমি এখানে বসে।

বলেই চলে গেল। এ কেমন ছেলেরে বাবা আমিতো ব্যথায় উঠতেও পারছিনা। আর ওরিয়েন্টেশনেও লেট হয়ে গেছে অনেক ভীষন কান্না পাচ্ছে। তাই ঠোট ফুলিয়ে বসে রইলাম। হঠাৎ ছেলেটা এসে আমার হাত ধরে টান মেরে দাড় করিয়ে দিল। টান মারার সময় ভীষন ব্যাথা পেলেও এখন আর করছেনা হয়তো রগে টান পরেছিল ছেলেটা টান মারায় ঠিক হয়ে গেছে। 

ছেলেটা আমার অনেকটা কাছে এসে কানের দিকে একটু ঝুকে বলল 

ছেলেটা: অন্যের কাছ থেকে হেল্প নিলে সেল্ফ রেস্পেক্ট কমে যায়না।

আমি কিছুই বলছিনা। মানে বলার কোন ভাষা নেই হেবলার মত তাকিয়ে আছি ছেলেটার দিকে। তখন টান মারার জন্য ব্যাথা পেয়েছি খুব তাই চোখে পানি চলে এসছে সেটা দেখে ছেলেটা মুখ শক্ত করেই বলল 

ছেলেটা: চোখ মোছ।

আমিতো অবাক হয়ে তাকিয়েই আছি। এত রেগে গেল কেন? 

ছেলেটা এবার ঝারি মেরে বলল

ছেলেটা: I said চোখ মোছ।😠

আমি ভয়ে তারাতারি চোখ মুছলাম। কিন্তু আমি কেন ভয় পেলাম একে? আর ওই বা কেন এত রেগে গেল?

ছেলেটা আরেকটু কাছে এসে বলল

ছেলেটা: কিছু জিনিসের মূল্য অনেক, তাই সেটা অকারনে ঝরাতে নেই। আর আমি অপচয় পছন্দ করিনা আর আমার জিনিসের অপচয় তো একেবারেই না।

বলেই সে চলে গেল আমিতো অবাকের শেষ পর্যায়ে। ওনার জিনিস মানে? আমার চোখের পানি ওনার? But how?

এসব ভেবে কাজ নেই আমি চলে গেলাম অরিয়েন্টেশন ক্লাস রুমের দিকে কারণ এখন এসব ভাবার সময় এক্কেবারেই নেই পাচতলায় অডিটোরিয়াম এ হচ্ছে প্রোগ্রামটা তাড়াহুরো করে গিয়ে ঐশি, ইশু আর আর্পি (অর্পিতা my another besti) কে খুজে বের করলাম ওরা ওদের মাঝে আমার জন্যে সিট রেখে দিয়েছে। আমি ওদের মাঝখানে গিয়ে বসলাম ওরা আমায় দেখে রেগে বলল

ঐশি: এত্ত তাড়াতাড়ি এলি যে? আরেকটু দেরিতে আসতি।

আমি: আসলে বেবি উঠতে লেট হয়ে গেছে।

ইশু: এটা আর নতুন কী?

অর্পি: তুই কী কোনদিনও মানুষ হবি না?

আমি: আমাকে দেখে কী অন্যকিছু মনে হয়?

ইশু: হইছে থাম সবাই এবার প্রোগ্রামে দেখ।

প্রোগ্রাম আর ডক্টরদের বক্তৃতা শুনে আমরা এসে ক্যান্টিনে বসলাম।

ইশু: তুইতো বেশ কিছুক্ষন আগেই ক্যাম্পাসে এসে পরেছিলি তবে এত লেট হলো কেন? 

আমি: আর বলিসনা কী কী হয়েছে।

ঐশি: কী হয়েছে?

আমি ওদের সবটা বললাম।ওরা তো হাসতে হাসতে অস্থির আর দ্বিতীয় ছেলেটার কথা শুনেই ওরা ফিদা।

অর্পি: ওয়াও ছেলেটার পার্সোনালিটি তো সেই।

আমি: থামতো। আমাকে কী ধমকটাইনা দিসে আছতো খাটাশ

ইশু: হুম শুনেতো সেই লাগলো।

ঔশি: তুইতো দেরিতে এলি আজ গেস্ট হিসেবে সেই একটা হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এসছিলো, কাজ ছিলো বলে চলে গেছে।

ইশু: হুম। তুই আসার একটু আগেই বেরিয়ে গেছে। মিস করলি।

আমি: ছাড়তো। I'm not interested..

ইশু: আরে নামটি তো শোন। ওনার নাম...

আমি: আরে বাদ দে বললামতো আমার জানার দরকার নেই।

এরপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি আসতেই একে একে সবাই প্রশ্ন করল কেমন ছিল অরিয়েন্টেশন ক্লাস। আমিও সবাইকে বললাম ভালো।

রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলাম তারপর খাটে বসে গেমস খেলছি। আপি এসে বলল

আপি: সুইটহার্ট কেমন কাটল দিনটা।

আমি: ভালোই বাট একটা ছেলের জন্য সব স্পয়েল।

আপি: কেন?

তারপর আপিকেও সব বললাম আপিও প্রচুর হাসল। কিন্তু ছেলেটার শেষের বলা কথা শুনে আপি অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল। আজব এর আবার কী হল।

আমি এবার ভাবছি, ছেলেটা দেখতে সেই আচ্ছা আদ্রিয়ান কি ওর থেকেও সুন্দর? হতে পারে সেটা? লম্বাওতো খুব আমিও কম কী? আমি 5'3"😎। কিন্তু এখন আমি ভাবছি ছেলেটার বলা কথাগুলো, প্রথমদিকে ছেলেটার বেলা কথা গুলো স্বাভাবিক ই ছিলো কিন্তু আমার চোখের পানি দেখার পর যা যা বলল তা মোটেই স্বাভাবিক নয়। প্রথম দিকের কথায় মনে হচ্ছিলো উনি আমায় চেনেননা কিন্তু আমার চোখের পানি দেখে যেভাবে কথা বললেন মনে হল উনি আমায় চেনে, একটা অধিকারবোধ ছিলো ওনার প্রতিটা কথায়। কিন্তু কেন উনিতো আমায় আগে দেখেননি না আমি দেখেছি তাহলে..



Infinite love💗

Part: 06

আমি এবার ভাবছি, ছেলেটা দেখতে সেই আচ্ছা আদ্রিয়ান কি ওর থেকেও সুন্দর? হতে পারে সেটা? লম্বাওতো খুব আমিও কম কী? আমি 5'3"😎। কিন্তু এখন আমি ভাবছি ছেলেটার বলা কথাগুলো, প্রথমদিকে ছেলেটার বলা কথা গুলো স্বাভাবিক ই ছিলো কিন্তু আমার চোখের পানি দেখার পর যা যা বলল তা মোটেই স্বাভাবিক নয়। প্রথম দিকের কথায় মনে হচ্ছিলো উনি আমায় চেনেননা কিন্তু আমার চোখের পানি দেখে যেভাবে কথা বললেন মনে হল উনি আমায় চেনে, একটা অধিকারবোধ ছিলো ওনার প্রতিটা কথায়। কিন্তু কেন উনিতো আমায় আগে দেখেননি না আমি দেখেছি তাহলে..

What does he mean by "আমার জিনিস"। আমি কবে থেকে ওনার হলাম, না উনিতো আমায় ওনার জিনিস বলেনি বলেছে আমার চোখের পানিকে, কিন্তু ব্যাপারটা তো একই হল। যাকে কখনো দেখেইনি? কখনো কথাই হয়নি প্রথম দেখায় একটা মেয়েকে I mean একটা মেয়ের চোখের জলকে নিজের বলে দিলো? He really mean it? আচ্ছা বলল তো বলল এভাবে বলার কী ছিল?? কী জোরেই না ধমকটা দিয়েছে আল্লাহ, একটু মিষ্টি করেওতো বলতে পারত Pushpa থুরি Onima I hate tears রে...আহ! কী রোমান্টিক লাগতো শুনতে। দূর কী ভাবছি উনি কেনো আমাকে এভাবে বলবে। আচ্ছা সবার বলা আদ্রিয়ানের ডিসক্রিপশনের সাথে ওনার ডিসক্রিপশন অনেকটাই মিলে যায়। কিন্তু আদ্রিয়ান কীভাবে যাবে ওখানে কেনইবা যাবে? দূর আমিওনা কীসব ভাবি।

সকালে যথারীতি আপির ডাকে ঘুম ভাঙল।আপি আর আমি কফি খেতে কিছুক্ষন গল্প করলাম। আমাকে রেডি হতে বলে আপি নিচে গেল। মেডিকেলে যাবার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামলাম। আজ একটা পিংক কালার টপস, ব্লাক জিনস আর একটা ব্লাক স্কার্ফ গলায় জরিয়ে চুলটা পনিটেল করেছি, আজ লিপস্টিক ও দেইনি। কারন বিশেষ দিন ছাড়া সাজতে ভালোলাগেনা। ডাইনিং এ বসতেই আম্মু সবাইকে খেতে দিল। আপি আর আপি পাশাপাশি খেতে বসলাম। সবাই একসাথেই বসেছি ডাইনিং এ। তখনি চাচ্চু বলল

চাচ্চু: আম্মু আজকেতো মেডিকেলের ফার্স্ট ক্লাস। 

আমি: জ্বী চাচ্চু।

চাচ্চু: মন দিয়ে ক্লাস করবে আর এটেন্টিভ থাকবে।

আমি: জ্বী।

আপি: আর প্লিস ক্লাসে অন্তত ঘুমাসনা। এটাতেতো তোর বিশাল রেকর্ড আছে।

আম্মু: আমিতো ভাবছি আমার বেচারা জামাইটার কথা কী  হাল হবে ওর।

আমি: এমন ভাবে বলছ যেন জামাই রেডি করে রেখেছো?

আম্মু: হ্যা রেখেছিতো।

আম্মুর কথা শুনে সবাই আকাশ থেকে পড়ল আব্বু,চাচু  আর পুফা বাদে।

কাব্য: সত্যিই? যাক এই আপদ তবে বিদায় হচ্ছে?

আমি: ওই চুপ কর। ঠিক করে রেখেছো মানে?

আব্বু: আরেহ এখনতো বড় হোয়েছো, বিয়েতো দিতেই হবে তাইনা? সেটাই তোমার আম্মু বলছিলো আরকি।

সজীব ভাইয়া: ইয়াহ বুড়ির বিয়েতে হেব্বি মজা হবে।

অর্নব ভাইয়া: হুম ডিজ্জে ডান্স।

আপি: প্রতিতা প্রোগ্রামে আমার কিন্তু আলাদা আলাদা ড্রেস চাই।

ওহি: ইয়ে...! ভীষণ মজা হব্বে।

সবাই এই নিয়ে হই হই লাগিয়ে দিল অন্ত ও হাসতে লাগল, সব্বার হইচইতে মনে হচ্ছে এখনই আমার বিয়ে হচ্ছে। বড় ছোট কেউ কারোর চেয়ে কম যাচ্ছেনা। এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায় দেখ। আর আমি হেবলার মত একবার এদিকে দেখছি তো আরেকবার অদিক। কিন্তু এরাতো থামছেই না। What the hell? প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছি এবার, নাহ আর সহ্য করা যাচ্ছেনা তাই জোরে চিৎকার করে বললাম 

আমি: Stop iiiiittttttt !!

সবাই থেমে গেল মূহুর্তেই সব শান্ত।

আমি: What? এখনি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ আমায়? পাত্র দেখা শেষ? বিয়ে কবে? আজ নাকি কাল? নাকি বিয়েটাই হোয়ে গেছে আজ বাসর কোনটা? বলো?

আপি: ইয়ে মানে..

আমি: What ইয়ে মানে। সবাই এমন ভাবে নাচানাচি করছ যেন এখনই আমার বিয়ে?

আম্মু: বিয়ের বয়সতো হয়েছে তাইনা?

আমি: তো আপি, অর্নব ভাইয়া, সজীব ভাইয়া, আমার আরো কত কাজিনস আছে কই তাদের বিয়ে নিয়ে তো ভাবছোনা, এতদিনতো আমার বিয়ে নিয়েও ভাবোনি। আজ কী হল?

আপি: হইছে থাম আর হাইপার হোসনা খেয়ে মেডিকেল যা লেইট হয়ে যাবি।

আমি চুপচাপ খেতে থাকলাম। উফফ কতদিন পর রাগ দেখালাম। আসলে আমি এরকম রাগ সচারচর দেখাই না আর যখন দেখাই তখন সবাই চুপ থাকে। 

আর কেউ কিছু বললোনা আমি খেয়ে চলে গেলাম মেডিকেলে।

মেডিকেলে এসে গেলাম না আজ অন্তত লেইট করিনি।  দেখলাম আমার ফ্রেন্ড নামক বান্দরনিরা বিল্ডিং এর সামনের ছোট সিড়িটাতে বসে আছে, ওদের কাছে গেলাম ওরা আমার দিকে এভাবে দেখছে যেনো ভূত থুরি আমিতো মেয়ে তাই পেত্নি দেখছে।

ঐশি: আরেহ বাহ লেইট করলি না যে আজকে? শরীর তরির ঠিক আছে য

তো?

অরু: আল্লাহ তোরে মানুষ বানাইছে আজকের জন্য।

ইশু: ব্রেকিং নিউস আমাদের দি গ্রেট অনি বেইবি আজকে ঠিক টাইমে এসছে, হাতে তালিয়া।

অর্পি: এই আনন্দে ট্রিট হোয়ে যাক।

আমি এতক্ষণ এদের তামাশা দেখছিলাম তারপর বললাম

আমি: Done? হয়ে গেছে লেগপুল করা? এবার অফ যা।

অর্পি: সত্যি কথা সবারই গায়ে লাগে হুহ।

আমি: হইছে আমার সত্যবাদী এবার চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।

ঐশি: হ্যা চল।

এরপর সবাই মিলে ক্লাস করলাম। নিচে আসার পর অর্পি বলল।

অর্পি: চলনা বুয়েট ক্যাম্পাসটা একটু ঘুরে আসি। 

আমি: কী দরকার? চল বাসায় যাই।

ইশু : আরে কাছেইতো ক্যাম্পাসটা চলনা, কী হবে?

ঐশি: হ্যা তাইতো চল।

অগত্যা যেতেই হলো হাটতে হাটতে পৌছলাম বুয়েট ক্যাম্পাস। এই প্রথম বুয়েটের ক্যাম্পাসে আসলাম ছোট হলেও বেশ সুন্দর এই ক্যাম্পাস। এখান থেকে প্রতি বছর কত ইন্জিনিয়ার বের হয়। আচ্ছা আদ্রিয়ানও তো একজন ইন্জিনিয়ার তাইনা? উফফ আমি এখানেও ওকে নিয়ে এলাম। নিজের ওপরি নিজে খুব বিরক্ত হই। এত কেন ভাবি ওর ব্যাপারে? Who is he? এমন একজন যাকে কখনও আমি দেখিই নি। আচ্ছা ঐ ছেলেটা যার জন্য আমি পরে গেছিলাম, আমাকে কাদতে দেখে ধমক দিলো উফফ কী ধমক ছিলোরে বাবা, ও কী করে? স্টুডেন্ট? নাকি অন্যকিছু? যা খুশি করুক আমার কী হুহ। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই ইশু চিৎকার দিয়ে উঠল

আমি: আহ এত চেচাচ্ছিস কেন? কানের মাথা কী খাবি নাকি?

ইশু : আরে ঐ ছেলেটা।

ঐশি: কোন ছেলেটা?

ইশু: ঐ যে দেখ

আমরা সবাই ওর ইশারা করা দিকে তাকালাম। তাকিয়েতো আমি অবাক আরে এত সেই ছেলেটা যার সাথে কালকে ধাক্কা লেগে পড়ে গেছিলাম। কিন্তু এর সেই "I said চোখ মোছ" বিখ্যাত ধমকটার কথা মনে পরতেই হালকা ভয় আর রাগ দুটোই হলো। 

 ঐশি : আরে এতে সেই ছেলেটা কালকে অরিয়েনটেশন ক্লাসে যে গেস্ট ছিলো।

ইশু: ইয়া কী ড্যাসিং না।

অর্পি: হুম কী যেন নাম হ্যা মনে পরছে...

আমি: ওই থামবি। জীবনে তোরা ছেলে দেখিসনি?

অর্পি: দেখেছি কিন্তু এরকম দেখিনি।

আমি: হুহ কী  আমার সুন্দর রে।

আমি ওই ছেলেটার দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বলছিলাম। ছেলেটা আমার দিকে এক পলক গভিরভাবে তাকিয়ে হুট করে এমনভাবে চোখ সরিয়ে নিল যেন আমাকে এর আগে দেখেইনি, I am no one to him. আজব! আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলাম সামনের দিকে। ওরাও দৌড় মারলো আমার পেছন পেছন। আমার কাছে এসে ওরা বলল 

ইশু: কীরে কী হল?

আমি: এখনো বিয়ে করিনিতো তাই কিছু  হয়নি,বিয়ে করে ভেবে দেখবো।

ঐশি: তোকে কিছু  জিজ্ঞেস করাটাই বেকার।

আমি don't care ভাব নিয়ে হাটছি হঠাৎ কলকের সেই  ভাইয়া টাকে দেখলাম কী যেন নাম হ্যা আদিব। উনি আমাকে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে এলেন। এসে বললেন

আদিব ভাইয়া: Hey মেডিকেল স্টুডেন্ট বুয়েটে? 

আমি: জ্বি ভাইয়া আসলে এমনি ঘুরতে এসছিলাম। ভালো আছেন?

আদিব ভাইয়া: খুব।তুমি?

আমি: জ্বি ভালো? আপনি এখানে? উডবি ইন্জিনিয়ার নাকি?

আদিব ভাইয়া: না না হয়ে যাওয়া ইন্জিনিয়ার।

আমি: ওহ এখান থেকেই নাকি?

আদিব: নাহ ইউকে থেকে

ইউ কে শুনেই বুকটা ধক করে উঠল আদ্রিয়ান ও তো..। ড্যাম আমি আবার ওর কথা ভাবছি? নিজেকে সামলে বললাম 

আমি: ওহ আচ্ছা তাহলে এখানে কেন?

আদিব ভাইয়া: আসলে কাল যেই ফ্রেন্ড এর কথা বললাম না তার সাথেই একটা কাজে এসছি আরকি

আমি: ওহ। আপনি কী সারাক্ষণ আপনার সেই ফ্রেন্ড এর সাথেই থাকেন নাকি?

আদিব ভাইয়া: বলতে পারো। আমরা দুজন দুজনকে ছাড়া কিছুই বুঝিনা।

আমি: ওয়াও! খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ আপনাদের?

আদিব: হ্যা। ওরা কারা তোমার ফ্রেন্ড।

আমি: জ্বি। 

এরপর একে একে এদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। এভাবেই সবাই আড্ডা দিচ্ছি হঠাৎ কয়েকটা ছেলে এল এদেরকে ঐ খাটাশ ছেলেটার সাথে দেখেছিলাম। তাদের মধ্যে একজন বলল।

একজন: কীরে এখানে কী করছিস? খুজছি তোকে আর এ কে? আর ওরা কারা। 

আদিব ভাইয়া: ও আমার বোন আর ওরা আমার বোনের ফ্রেন্ড।

আরেজন: বাহবা এসেই বোন বানিয়ে ফেললি?

আদিব: কেন কোন সমস্যা (ভ্রু কুচকে)

আরেকজন: না না কী প্রবলেম হবে পরিচয়তো করিয়ে দিবি নাকি।

এরপর আদিব ভাইয়া সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। একজনের নাম গালিব, আরেকজনের ইশরাক, আরেকজনের ইমরান আর আরেকজন হৃদয়। আমরা সবাই আড্ডা দিতে লাগলাম

 এরমধ্যেই আমাদের মাঝে ওই খাটাশ ছেলেটা এল। তখন না গেয়াল করলেও এখন খেয়াল করলাম। ছেলেটাকে আজকেও অমায়িক লাগছে। রেড টি শার্ট, ব্লাক জিন্স, হোয়াইট কেচ পরেছে, কিছু চুল কপালে পরে আছে, হাউ কিউট, একটা ছেলে এটতাও কিউট হয়? কিন্তু এ এখানে কী করছে? কী চাই টা কী এর? কীছু বলতে যাবো তার আগেই ওই ছেলেটা বলল

ছেলেটা: What is this yaar? তোদের কোথায় কোথায় খুজে বেরাচ্ছি আর তোরা মেয়েদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিস?

আদিব ভাইয়া: তুই আবার কবে থেকে  আমাদের খুজতে শুরু করলি সবসময়তো আমরাই তোকে খুজে বেরাই।

ছেলেটা: Whatever... আমার কাজ শেষ এখানে যাবিতো নাকি?

আদিব ভাইয়া: যাবোতো। ওদের সাথে একটু আড্ডা দিয়ে যাই।

 আদিব ভাইয়ার আর এনার কথা শুনে বুঝলাম উনিই আদিব ভাইয়ের সেই বন্ধু।

ছেলেটা: What? এখন আবার আড্ডা দিতে হবে?

ইশরাক ভাইয়া: আরে AD থাকনা। এমনিতেও এখনতো আর তোর কোন কাজ নেই।

গালিব: Right থাকনা AD। প্রবলেম কী?

ছেলেটার নাম তাহলে AD? নাহ যেটুকুও সন্দেহ ছিল যে এ আদ্রিয়ান হলেও হতে পারে সেটুকুও আর নেই। এর নাম তো AD। কিন্তু AD কারো নাম হয়? হয়তো শর্ট ফরম এ ডাকে। ফুল ফর্ম কী? কী আবার হবে? আদিত্য, আদনান, আদ্র এরকমি কিছু হবে হয়তো। যাকগে আমার কী?



Infinite Love💗

Part: 07

ছেলেটার নাম তাহলে AD? নাহ যেটুকুও সন্দেহ ছিল যে এ আদ্রিয়ান হলেও হতে পারে সেটুকুও আর নেই। এর নাম তো AD। কিন্তু AD কারো নাম হয়? হয়তো শর্ট ফরম এ ডাকে। ফুল ফর্ম কী? কী আবার হবে? আদিত্য, আদনান, আদ্র এরকমি কিছু হবে হয়তো। যাকগে আমার কী? কিন্তু একটা ব্যাপারে চরম আফসোস হচ্ছে এ আদ্রিয়ান নয়, এতো AD. কেন জানি মনে হচ্ছে এ আদ্রিয়ান হলে ভালো হতো খুব ভালো হতো। আমার এই অদ্ভুত ভাবনার কারন আমার নিজেরই অজানা। আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল AD এর কথায়।

.

AD: Okay fine... থাকছি আমি Happy?

All Boys: Supper happy!!

.

হুহ কত ভাব যেন কোথাকার কোন শাহাজাদা। একবারো আমাদের সাথে পরিচিত হতে চাইলনা। যেনো আমাদের ভালো করেই চেনে হুহ। একটু হেসে কথাতো বলতে পারত আমাদের সাথে। মানুষকে রেস্পেক্ট করতে জানেনা। Mannerless!

.

আদিব ভাইয়া: চল আমরা হাটতে হাটতে কথা বলি।

আমি: হুম।

.

আমরা সবাই হাটছি আর কথা বলছি, AD আমার পাশ দিয়ে হাটছে তবে বেশ দূরত্ব রেখে। তবুও কেমন জানি একটা ফিল হচ্ছে। বারবার আড় চোখে দেখছি ওকে কিন্তু ওই খাটাশটা সেদিকে হয়তো খেয়ালই নেই একমনে ফোন স্ক্রল করছে আর হাটছে। হয়তো গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে, বলুকগে আমার কী? I don't care. 

AD: You do..

হঠাৎ AD এর আওয়াজ শুনে চমকে তাকালাম তার দিকে ফোনের দিকে চোখ রেখেই বলেছে কথাটা। কিন্তু আমিতো মনে মনে বলছিলাম কথাগুলো এ শুনলো কীকরে? কীসের জন্য বলল I do. আমি নিজেকে সামলে বললাম

আমি: What?

AD: Nothing..(ফোনে চোখ রেখেই)

আমি: নাহ কিছু একটা বলছিলেন।

এবার উনি হাটা থামিয়ে ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন। ওনাকে থামতে দেখে আমিও কেন জানি থেমে গেলাম। যার জন্য বাকিরা আগে চলে গেল। AD আমার একটু কাছে এসে হালকা ঝুকে স্লো ভয়েজে বলল 

AD: বলেছিলামতো অনেক কিছুই। সব কথা কী শুনেছো আর যেটুকু শুনেছো তা কী বুঝতে পেরেছো?

আমি: মানে? ( বেশ অবাক হয়ে)

উত্তরে কিছুই বললেন না শুধু একটা বাকা হাসি দিয়ে চলে গেলেন।

আমিতো ওনার কথায় বোকার মত কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে রইলাম তারপর নিজেকে সামলে ওনাদের পেছন পেছন দৌড় মারলাম।

.

সবাই হাটতে হাটতে মজা করে আড্ডা দিচ্ছি। কিন্তু ওই খাটাশ ছেলেটা একদৃষ্টিতে ফোন দেখছে। পারলে যেনো ফোনের মধ্যে ঢুকে যেত।হুহ কী এমন আছে ফোনে? যত্তসব।হঠাৎ আদিব ভাইয়া AD কে বলল। 

.

আদিব ভাইয়া: কীরে? এত চুপচাপ কেন আছিস তুই? তুই বেশি কথা বলিসনা জানি কিন্তু এমন মৌন ব্রত্র তো পালন করিসনা। কী হয়েছে?

AD: Nothing... তোরা continue কর আমি আছিতো।

ইশরাক ভাইয়া: উফফ। প্লিস এমন সাইলেন্ট মুডে থাকিসনা।

গালিব ভাইয়া: হ্যা ইয়ার তোকে সাইলেন্ট মুডে একদম ভাল্লাগেনা।

হৃদয় ভাইয়া: হ্যা একদমি সব ফাকা লাগে।

.

হুহ এই খাটাশটাকে এত দাম দেওয়ার কী আছে? কী যেন একটা কথা আছে? হ্যা মনে পড়েছে "যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা"

.

এবার উনি ওনার সানগ্লাস টা টি শার্ট থেকে বের করে চোখে পরলেন। তারপর বললেন 

AD: হুম এবার চল।

.

আমি তো ওনাকেই দেখছি সানগ্লাসটা চোখে পড়ায় আরো কিউট লাগছে।

মুখে এক্কেবারে হালকা খোচা খোচা দারি উফফ। ছেলেদের এত সুন্দর হতে হয়? তবে কেন জানি এখন আমার মনে হচ্ছে যে উনিও আমায় দেখছে কিন্তু সানগ্লাসের জন্য সিওর হতে পারছিনা।

হঠাৎ উনি কথা বলতে শুরু করলেন।

AD: তোমরা সবাই মেডিকেল স্টুডেন্ট তাইনা?

ইশু: জ্বি ভাইয়া।

AD: ওহহ গ্রেট।


এরপর উনি একে একে সবার সাথে পরিচিত হলেন কিন্তু আমার দিকে তাকালেন ও না। সেটা দেখে প্রচুর রাগ লাগল আমার। এত ভাব কীসের? কী করেছি আমি? যে আমার সাথে কথা বলতে মন চায়না। আমিকি দেখতে এতোটাই খারাপ? লোকে ঠিকি বলে সুন্দর ছেলেদের ভাব বেশি। উনি ঐশি, অরু, ইশু সবার সাথে নানা করম কথা বলছেন আমি বাদে। আমার নিজেকে এখন অন্য গ্রহের প্রানি মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আদিব ভাইয়া আমার সাথে কথা বলতে লাগল। কিন্তু আমার খালি মনে হচ্ছে AD কথার ফাকে ফাকে আমায় দেখছে, কিন্তু ওইযে সানগ্লাস ওইটার জন্যই বুঝতে পারছিনা।

.

হঠাৎই আমার চোখ গেল ফুচকার দিকে, আমি চেচিয়ে উঠলাম 

.

আমি: আদিব ভাইয়া ফুচকা...!!! আমি ফুচকা খাবো। চলুননা! ( almost লাফাতে লাফাতে)

.

 আমার ফুচকা খাওয়ার জন্য বাচ্চামো দেখে AD চোখের সানগ্লাসটা খুলে চোখ ছোট ছোট করে বলল

AD:  তুমি ফুচকা খাবে বলে এভাবে লাফাচ্ছো? Like seriously?

আমি: হ্যা তো?

AD: এই মেয়েও নাকি মেঠিকেলে পরে। Wow! great!! ( দুবার হাতে তালি দিয়ে)

আমি: Hey! Now you are insulting me..

AD: It depends on point of view. যদি তোমার মনে হয় I'm insulting you then তাই। ( আবার সানগ্লাসটা পড়তে পড়তে)

আমি: আপনি কিন্তু...

আদিব ভাইয়া: ওকে স্টপ। তুমি ফুচকা খাবেতো চলো। তোমারাও খাবেতো?

AD বাদে সবাই একসাথে Yeah বলে চেচিয়ে উঠল।

.

তারপর গেলাম সবাই ফুচকার দোকানে গিয়ে আট প্লেট ফুচকা ওরডার দিলাম। যদিও আমরা নয়জন কিন্তু AD খাবেনা তাই আট প্লেটই ওরডার করা হলো। এই ছেলে এমন কেন? কী এমন হত সবার সাথে ফুচকা খেলে। উনি নাকি খায়না হুহ। আজাইরা ঢং।

.

ফুচকাওয়ালা মামা এটা দেখে জিজ্ঞেস করলেন

ফুচকাওয়ালা মামা: আপনেরা তো নয়জন। আটটা চাইলেনযে?

আমি: আসলে মামা এখানে একজন অসুস্হ মানুষ আছে যার ফুচকাতেও এলার্জি আছে। 


আমার কথা শুনে সবাই হেসে দিল, আর উনি সানগ্লাসটা খুলে টি শার্টে ঝুলিয়ে রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। তা দেখে আমি একটু ভয় পেলেও তা প্রকাশ করলাম না। উনি কিছুক্ষন আমায় রাগী চোখে দেখে কিছু একটা ভেবে সবার সামনেই আমার এক্কেবারে কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন

AD: তুমিতো would be doctor. আমার ট্রিটমেন্ট তুমিই করে দিও। 😉

আমি চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে একটা কাশি দিয়ে একটু দূরে সরে এলাম।

.

এরপর আমাদের সবাইকে একে একে ফুচকার প্লেট দিলো। AD ও পাশের দোকান থেকে একটা কোলড্রিংক নিয়ে খেতে লাগল। একাই খাবে তাই বতোলে মুখ লাগিয়েই খাচ্ছেন। কিন্তু বিপদ হল আমি ফুচকা মুখে দেবার পর। একটা ফুচকা খেয়েই আমি জোরে জোরে চেচাতে লাগলাম। সবাই অবাক হয়ে গেল আমার চিৎকারে। আমিতো লাফাচ্ছি চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।

.

AD তো ছুটে এল আমার কাছে তাড়াতাড়ি আমাকে ধরে চেয়ায়ে বসিয়ে আমার সামনে এক হাটু ভেঙ্গে বসে এক হাতে আমার পিঠ স্লাইড করতে করতে আর আরেক হাতে আমার গালে হাত রেখে ঝাকাতে ঝাকাতে প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে বলল 

AD: What happened Oni? Are you okay? 

আমি কিছু বলতে পারছিনা, দম আটকে আসছে, চোখ দিয়ে পানি পরছে। সেটা দেখে ওনারো চোখ ছলছল করছে, যা আমার চোখ এড়ায়নি। কিন্তু কেন? উনি কেন এত কষ্ট পাচ্ছে?

AD: কোথায় কষ্ট হচ্ছে বল আমায়। এই কথা বলছোনা কেন? Hey answer me damn it? বলোনা কী হয়েছে? ( উত্তেজিত কন্ঠে)

আমি অনেক কষ্টে বললাম 

আমি: পা..ননি..

AD: Oh shit !! এটা এতক্ষণ কীকরে বুঝলামনা? How duffer I am! এইটুকু বুঝতে আমার এত সময় লাগল যে ওর ঝাল লেগেছে! ( পাগলের মত এক নিশ্বাসে বলছে কথা গুলো)

.

আমি ওনার কাজে কথায় অবাকের ওপর অবাক হচ্ছি, এতটা ডেসপারেট কেন হলেন উনি? কিন্তু আমি কিছু বলতে পারছিনা ঝালের জন্য।

.

 আসলে আমি এক্কেবারেই ঝাল খেতে পারিনা, মানে সামান্য ঝাল আমার সহ্য হয় না, একেবারেই না, প্রচন্ড কষ্ট হয়। তাই ফুটকা, চটপটি এসব খাওয়ার সময় আমি সবসময় ঝাল ছোয়াতেই বারন করি কিন্তু আজ কথার ছলে ফুচকাওয়ালা মামাকে বলতে ভূলে গেছি, আর ঝালের পরিমানটাও বেশিই ছিল,যার ফলসরূপ এমন হল। 

.

উনি কিছু না ভেবে ওনার কিছুটা খাওয়া কোলড্রিংক এর বতোলটা মুখে ঢুকিয়ে দিলেন আমিও ঝালের জন্য কীছু না বলেই খেয়ে নিলাম। কোলড্রিংকটা ঠান্ডা ছিল আর এতে সুগার ছিলো তাই ভালোই কাজ হলো ঝালটাও অনেকটাই কমে গেল। বাহ! খাটাশটার বুদ্ধি আছে। কিন্তু আমার স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে। 

.

উনি নিজের হাত দিয়ে আলতো কর আমার  চোখদুটো মছে দিলেন তারপর ইশরাক ভাইয়াকে বললেন 

AD: ইশরাক একটু পানি আন না প্লিস।

.

ওনার কন্ঠটা কেমন যেন শোনাচ্ছে, মূহুর্তেই লোকটা পালটে গেল। ইশরাক ভাইয়া পানি আনতে গেল। আমি একবার সবার দিকে তাকালাম সবাই খুব টেনশনে পরে গেছিলো আমায় নিয়ে বেশ ভালোই বুঝলাম। শুধু বুঝতে পারলাম না আমার সামনে বসে থাকা বান্দাকে।

.

ইশরাক ভাইয়া পানি নিয়ে এল। AD তাড়াতাড়ি বতোলটা নিয়ে আমাকে খানিকটা পানি খাইয়ে দিলেন এর পর হালকা একটু পানি আমার মুখে, গলায় মাখিয়ে দিলেন, তারপর ওনার পকেট থেকে একটা রোমাল বের করে আমার মুখ গলা মুছে দিয়ে সেই রুমালটা আবার পকেটে ভরলেন ওনার কাজে আমিতো পুরাই শকড্ আমার  আর ওনার ফ্রেন্ডরা যে অবাক হয়নি তা কিন্তু না। বাট আমার সিচুউয়েশন দেখে ব্যাপারটা অতটা অস্বাভাবিক ভাবে নিলেননা। 

.

মুখ গলা পানি দিয়ে মুছে দেওয়ায় শান্তি লাগছে। আহ। তাই চেয়ারটাতে হেলানদিয়ে খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলাম। কিন্তু আজব ব্যাপার এই পুরোটা সময় AD আমার ডান হাত শক্ত করে ধরে ছিলো। একটু ভালোলাগায় চোখ মেলে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলাম।

.

ইশু: হায় আল্লাহ। আমরাতো একদমি ভূলে গেছিলাম তুই ঝাল একদমি খেতে পারিসনা।

অর্পি: হ্যা ইয়ার। একদমি খেয়াল ছিলোনা। ইস!

ঐশি: ভাইয়া না থাকলে আজ কী হত কে যানে। কীকরে যে ভূলে গেলাম

আদিব ভাইয়া: এখন ঠিক লাগছে তো?

আমি: Yeeah i'm al-alright..

ইশরাক ভাইয়া: আমরা তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। 

গালিব ভাইয়া: হ্যা কী মারাত্নক অবস্হা।

হৃদয় ভাইয়া: ভাগ্যিস AD ব্যাপারটা টেকনিক্যালি সামলেছে।


আমি ওনার দিকে তাকালাম। উনি কিছুই বলছেননা আমার সামনে ওভাবেই হাটু ভেঙ্গে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে তাছে স্হির দৃষ্টিতে। কিন্তু এতোটা শান্ত হয়ে বসে আছেন কেন উনি? এটা ঝড়ের আগের নিরবতা নয়তো? ভেবেই ঢোক গিললাম।

.

ঐশি: যাক! আল্লাহ বাচাইছে। You are alright.

.

হঠাৎই উনি দ্রুত উঠে দাড়ালেন। এতক্ষণ ওনার চোখে ভয় আর কষ্ট থাকলেও এখন শুধু রাগ অাছে, লালচে হোয়ে উঠল সুন্দর  চোখদুটো।টুলের ওপর আমাদের আটজনের ফুচকার প্লেট রাখা ছিল উনি গিয়ে হাত দিয়ে বারি মেরে সবগুলো প্লেট ফুচকাসহ নিচে ফেলে দিলেন। এতই জোরে আওয়াজ হলো আমরা সব্বাই কেপে উঠলাম। এরপর উনি ফুচকাওয়ালা মামার দিকে তাকালেন। বুঝতে পারলাম ওনার চোখ দেখেই ফুচকাওয়ালা  মামার হিশু করে দেবার মত অবস্হা, মামার কাছে গিয়ে উনি যথাসাধ্য ভদ্র তবে শান্তরাগী গলায় বললেন

AD:  ফুচকা দেবার সময় কেউ ঝাল টক মশলা কতখানি খাবে সেটা জেনে নেবেন, ব্যাবসার জন্য ভালো।

কথাটা শান্ত ভাবে বলার যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন উনি হয়তো লোকটাকে অসম্মান করতে চায়না তাই এই চেষ্টা, তবে রাগটাকেও হয়তো কন্ট্রোল করতে পারছেননা। কিন্তু ওনার এত রেগে যাবার কারন কী? ঝাল আমি খেয়েছি কিছু হলে আমার হতো,তাতে ওনার কী? উনার মানবতার খাতিরে যেটুকু করার করছেন, in fact তার চেয়ে অনেক বেশিই করছেন। তাহলে এত Over react কেন করছে? যেনো আমি ওনার খুব আপন কেউ! আমার কিছু হলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট যেন উনিই পেতেন। strange!! 

.

তারপর উনি ভীষণ রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন,এখন শুধু চোখ না ওনার ফর্সা শরীর লালচে হয়ে আছে, এতটাই রেগে অাছেন, ওনাকে এভাবে তাকাতে দেখেইতো আমার আত্না শুকিয়ে গেছে, হাত পা প্রচুর কাপছে। ফুচকাওয়ালা মামা ভয়ে জরোসরো, আমাদের ফ্রেন্ডরা, আর  উপস্হিত সকলেই শকড প্লাস ভীত। সকলেই ওনার রাগ দেখে কেপে উঠেছে, আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ যা জানি সব পড়ছি, ওনার ওই রাগী চেহারা দেখার সাহস আমার নেই, তাই জামা খামছে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি, দাড়িয়ে আছি না জানি আমার ওপর দিয়ে এখন কোন টর্নেডো যাবে..




Infinite Love💗 

Part: 8

.

তারপর উনি ভীষণ রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন,এখন শুধু চোখ না ওনার ফর্সা শরীর লালচে হয়ে আছে, এতটাই রেগে অাছেন, ওনাকে এভাবে তাকাতে দেখেইতো আমার আত্না শুকিয়ে গেছে, হাত পা প্রচুর কাপছে। ফুচকাওয়ালা মামা ভয়ে জরোসরো, আমাদের ফ্রেন্ডরা, আর উপস্হিত সকলেই শকড প্লাস ভীত। সকলেই ওনার রাগ দেখে কেপে উঠেছে, আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ যা জানি সব পড়ছি, ওনার ওই রাগী চেহারা দেখার সাহস আমার নেই, তাই জামা খামছে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি, দাড়িয়ে আছি না জানি আমার ওপর দিয়ে এখন কোন টর্নেডো যাবে..

.

উনি আমার সামনে এসে দাড়ালো, ওনার চোখে মুখে অসম্ভব রাগ স্পষ্ট। আদিব ভাইয়া কিছু বলতে যাবেন উনি রাগী চোখে তাকাতেই আদিব ভাইয়া আর কিছু বললেননা। উনি আমার হাত ধরে এক টানে ফুচকার দোকানে ছাওনির বাশের সাথে লাগিয়ে ধরলেন, বেশ জোরেই ধরেছেন হাতটা, আর বাশের সাথে ধাক্কা লাগায় পিঠেও ব্যাথা পেয়েছি খুব। এরপর আমার ওপর দিয়ে বাশের ওপর তার এক হাত রাখলেন।

.

আমি ওনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন

AD: যেটা খেতে পারোনা সেটা খাও কেন? How could you be so irresponsible damn it?? ছোট তুমি? বাচ্চা? নিজের ভালো মন্দ বোঝোনা? ঝাল তুমি সহ্য করতে পারোনা আবার পেংগুইন এর মত ফুচকা খাওয়ার জন্য লাফাতে থাকো? ঝালে সমস্যা তোমার আছে অন্য কেউ মনে করিয়ে দেবে সেটা? নিজের এটুকু খেয়াল না রাখতে পারলে বাড়ি থেকে বের হও কেন? ঘরে বসে থাকতে পারোনা? ইচ্ছেতো করছে..! Idiot কোথাকার! (বেশ ধমকেই কথাগুলো বলছেন উনি, আর ওনার ধমকে আমি কেপে কেপে উঠছিলাম। )

.

আমার আঠারো বছরের জীবনে কেউ আমায় এভাবে বকে নি, In fact কেউ কখনো ধমকো দেয়নি, আর ইনি? খুব কান্না পাচ্ছে চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছে।

.

তখনি উনি বাশের ওপর একটা বারি দিয়ে বললেন 

AD: Hey,  don't you dare to cry okay? এক ফোটাও পানি যদি চোখ থেকে বের হয় আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা।

.

ওনার কথায় আমার রেগে যাবার কথা কারন আমার সাথে কেউ এমন ব্যবহার করলে আমি মেনে নেই না, অন্য কেউ হলে এতক্ষনে ধুয়ে দিতাম কিন্তু ওনার ব্যবহারে আমি বেশ ভয় পাচ্ছি। রাগ লাগছেনা তা কিন্তু না কিন্তু এখন ভোয়টাই বেশি লাগছে তাই আমি যথেষ্ট কষ্ট করে নিজের চোখের পানি আটকে রাখার চেষ্টা করছি কিন্তু ফলসরূপ আমার ফর্সা মুখ লাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু চোখের পানি কী আটকে রাখা যায়? আমার চোখ পানিতে ভরে উঠেছে, অনেক চেষ্টা করছি আটকে রাখার তখনি উনি বললেন

.

AD: বললামনা কাদবে না? Stop crying..

.

আরে ভাঈ চেষ্টাতো করছি! কিন্তু তোমার ওই বিশ্ববিখ্যাত ধমক শোনার পর চোখের পানিকি চোখে থাকতে চায়?

.

উনি হঠাৎই চেয়ারে জোরে একটা লাথি মেরে হনহন করে ওখান থেকে চলে গেলেন, ওনার লাথিতে তিনটে চেয়ারই পরে গেল, যেটাতে লাথি মেরেছিলেন সেটাতো ফেটেই গেলো। আমি অবাক হয়ে ওনার যাওয়া দিকে তাকিয়ে আছি। বাকি সবাই্ও সেটাই দেখছে।

.

উনি চলে যাবার পর এতক্ষণ আটকে রাখা চোখের পানি ছেড়ে দিলাম। ঐশি ওরা সকলে মিলে আমাকে ধরল, আদিব ভাইয়ারাও আমার কাছে এল, কান্নার জন্য

কিছু বলতে পারছিনা শুধু কেদেই যাচ্ছি।

.

ঐশি: Come on oni. এতো কান্না কেন করছিস, কিচ্ছু হয়নি।

.

ইশু: হ্যা থাম প্লিস। আর কান্না করিসনা।

.

আদিব ভাইয়া: আ.. I mean AD এর কথায় কিছু মনে করোনা। ও ন্যাচরালি কারো সাথে এমন করে না। আজ ওর কী হল জানিনা।

.

ইশরাক ভাইয়া: হ্যা ও যথেষ্ট শান্ত একটা ছেলে কিন্তু হঠাৎ এতো হাইপার হলো কেন বুঝতে পারছি না। প্লিস আর কেদনা।

.

কে শোনে কার কথা আমিতো কেদেই যাচ্ছি।

অর্পি: আসলে ওকে কেউ কখনো এভাবে ধমকায়নিতো তাই একটু ভয় বেশি পাচ্ছে।

.

আদিব ভাইয়া: হ্যা বুঝতে পারছি। কেনযে ছেলেটা এমন করত গেল। ওয়েট আমি কল করে দেখছি কোথায় গেলো ও।

আদিব ভাইয়া ওনাকে ফোন করলেন অধেক্ষন রিং হওয়ার পর উনি ধরলেন, আদিব ভাইয়া ফোনটা রেখে বললেন 

.

আদিব ভাইয়া: ও বাড়ি চলে যাচ্ছে, আমাদের ওর জন্য ওয়েট কল করতে বারন করল। 

আমি এতক্ষন ভয়ে কান্না করলেও এখন রাগে কান্না করছি। খাটাশ, খোবিশ, বান্দর আমাকে শুধু শুধু কতগুলি বকা দিয়ে গেল। Such a irritating man..আমি চোখ মুছে বললাম 

.

আমি: বাড়ি যাবো।

.

ঐশি: হ্যা ভাইয়া ওকে বাড়ি নিয়ে যাই একটু রেষ্ট করুক। 

.

আদিব ভাইয়া: হ্যা সেটাই ভালো হবেনা চলো তোমাদের পৌছে দেই।

.

ইশু: তার কোনো দরকার হবেনা ভাইয়া আমরাই নিয়ে যেতে পারব।

.

আদিব ভাইয়া: Sure?

.

ঐশি: একদম

.

ইশারাক ভাইয়া: ওকে তাহলে আমরা আসি।

.

অর্পি: আচ্ছা।

.

আদিব ভাইয়া: সাবধানে যেও।

.

এরপর ভাইয়ারা চলে গেল। আমরাও চলে এলাম বাড়িতে। ওরা অনেকবার চেয়েছিল বাড়ির ভেতর অবধি পৌছে দিতে, কিন্তু ওদের না করেছি কারন ওদের দেখলে বাড়ির সবাই নানা প্রশ্ন করবে, যার উত্তর দেবার ইচ্ছে আমার নেই। 

.

বাড়িতে ঢোকার পরেই আম্মু সামনে পরল

আম্মু: এত দেরী করে ফিরলে যে?

.

আমি: একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম আম্মু।

.

আম্মু: কোথায় গিয়েছিলে?

.

আমি: বুয়েট ক্যাম্পাস।

.

আম্মু: ওখানেতো বেশিরভাগই ছেলে ওখানে গেছো কেনো?

.

আমি: এক্চুয়ালি মেডিকেলের ছেলেদের পছন্দ হচ্ছিলনা, তেমন হ্যান্ডসাম কেউ নেই, তাই বুয়েটে গেছিলাম তোমার জামাই খুজতে, হ্যাপি?

.

আম্মু: তা পেলে?

.

কিছু না বলেই চলে এলাম ওখান থেকে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এমন কেন আম্মু? আরে মেডিকেলে কী ছেলে নেই নাকি? আজব! সবসময়ই এমন উলটা পালটা প্রশ্ন করেন। 

.

রুমে গিয়ে এসি অন করে বালিসে  হেলান দিয়ে শুয়ে আছি। কিচ্ছু ভাললাগছেনা। How is he? মাত্র দুদিন ধরে দেখেছে আমাকে, এত অধিকারবোধ কোথা থেকে আসে? এরমধ্যেই আপি এসে ঠিক আমার পাশে বসল, যাক এখন একটু শান্ত হতে পারব, এই মেয়েটাই আমাকে শান্ত করার একমাত্র মেডিসিন। আমি ঝট করে আপির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলাম। 

.

আপি: কী হোয়েছে সুইটহার্ট? (মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

.

আমি: কী হবে?

.

আপি: কিছু না হলে এভাবে আমার কোলে মাথা রাখতিনা। তাই বলে ফেল।

.

উফ এর কাছে কিছুই লুকোনো যায়না সবই বুঝে  যায়। অগত্যা আপিকে শুরু থেকে সব বললাম। সব শুনে আপি বেশ আজব ভাবে মিনিট খানেক আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ধুর বাবা ভাল্লাগেনা এর আবার কী হলো? তাই নিরবতা ভাঙতে আমিই বললাম

.

 আমি: ওহ আপি কী হল?

.

আপি: আচ্ছা ওই ছেলেটাকি খুব লম্বা? (অন্যমনষ্ক হয়ে)

.

আমি: হ্যা ছয় ফিটের একটু উপরে হবে।

.

আপি: ফর্সা? ( চিন্তিত হয়ে)

.

আমি: জ্বি ইয়েস। বেশ ফর্সা।

.

আপি: চুলগুলো কেমন? (আমার মাথা ওর কোল থেকে উঠিয়ে)

.

আমি: ব্রাউন তবে হাইলাইট না। কেন?

.

আপি: ঠোটটা?

আমি: এগুলা কী জিজ্ঞেস কর? আর কেন করতেছো?

আপি: বলনা।

.

আমি: চিকন, বেবি পিংক অনেকটা।  কেন বলবেতো?

.

আপি: চোখ দুটো মায়া ভরা ? নাক টা খারা? খুব হালকা হালকা খোচা দাড়ি? (উত্তজিত হয়ে)

.

আমিতো অবাক। এই মেয়েতো একটা ডিসক্রিপশন বললে তিনটা বলে দিচ্ছে। কেসটা কী?

.

আপি: বলনা?

.

আমি: হ্যা তো?

এবার আপির সেই বিখ্যাত দুষ্টুমি মাখা হাসি। আর এবারো মেয়েটা কিছুই না বলে রাবতা গানের শিশ বাজাতে বাজাতে চলে গেল। অসহ্য হচ্ছেটা কী?

সন্ধ্যায় স্নাকস খাওয়ার সময় আজকেও সবাই আদ্রিয়ানকে নিয়ে আলোচনা করছে। 

.

আব্বু: আদ্রিয়ান ছেলেটা আসলেই চমৎকার। সবে দেশে এসেছে কদিন ধরে এসেই কাজে লেগে পড়েছে। দেশে অলরেডি ল্যাব বানিয়ে ফেলেছে, দেশের ইন্জিনিয়ারিং কলেজ গুলো থেকে স্টুডেন্ট নিচ্ছে ওর কাজের হেল্পের জন্যে।

.

আম্মু: সত্যিই আজকাল এমন ছেলে পাওয়া কষ্ট।

.

চাচ্চু: আবার কবে আসবে ও?

আব্বু: বলেছে তো ফ্রি টাইম পেলেই আসবে।

.

হুহ ফ্রি টাইম পেলে আসবে। কী ব্যস্ত মানুষরে আমার।

.

কাব্য: ভাইয়া তো বলেছে নেক্সট যেদিন আসবে আমায় ব্যাটিং এর কিছু স্পেশাল টেকনিক শেখাবে।

.

আপি: তুই থামবি। খালি ক্রিকেট ক্রিকেট, যা গিয়ে পরতে বস।

.

আমি খালি নিরব দর্শকের মত চুপচাপ এই আদ্রিয়ান নামক প্যাচাল শুনছি।

.

সুলতানাপ্পি: কী হয়েছে অনিমা? কিছু বলছনা যে।

.

আমি: কিছু বলার মত পাচ্ছিনা তাই।

.

অর্নব ভাইয়া: মিস বাচালনি বলার মত কিছু পাচ্ছেনা? Like really? Wow.

.

আমি: ভাইয়া...

.

অর্নব ভাইয়া: ওকে সরি সরি! খা তুই খা।

.

উফফ এই ছেলেটার পেচালিকী সারাজীবন শুনব? দেখতে পাবোনা কোনদিন? থাকে কই এই ছেলে একটু  বাড়িতে এলেওতো পারে অসহ্য।

.

রাতে শুয়ে শুয়ে একবার আদ্রিয়ানের কথা ভাবছি আরেকবার AD এর কথা। একজনকে দেখার কথা, সে কেমন হবে তার আচরণ কেমন হবে তা ভাবছি, আরেকজনের আচরনের হিসাব মেলানোর  চেষ্টা করছি। আচ্ছা যেই আমি কখনো কারো ব্যাপারে নূন্যতম ইন্টারেস্ট দেখাতামনা সেই আমি একসাথে দুটো ছেলের কথা ভাবছি ভাবা যায়?

.

কিছুক্ষন পর আপি এসে শুয়ে পরল আমার পাশে।

.

আমি: আজকে এখানে শোবে?

.

আপি: হুম তোমার সাথে গল্প করতে মন চাইল।

.

আমি: ভালোই হয়েছে আমারও ভালো লাগছেনা। গল্প করলে ভালো লাগবে।

.

আপি: তা কার কথা ভাবছিলে? আদ্রিয়ান নাকি AD? ( ভ্রু নাচিয়)

.

আমি: কারো কথাই না। (উঠে বসে)

.

আপি: আমার কাছে আর কী লুকাবে বলো? ( ইনিও উঠে বসলেন)

.

আমি: আসলে দুজনের কথাই ভাবছি। আজব ব্যাপার কী জানো?

.

আপি: কী? ( কৌতুহল নিয়ে নরেচরে বসে)

.

আমি: ওদের দুজনের কথা ভাবতে ভাবতে একসময় দুজনকেই গুলিয়ে ফেলি, একজনকে আরেকজনের সাথে মিলিয়ে ফেলি। এমন মনে হয় ওরা যেনো একি অংকের দুটো আলাদা সমীকরন, কিন্তু কিছুতেই হিসেবটা মেলাতে পারছিনা।

.

আমি: হয়তো এই অংকের সুত্রপাত যে করেছে সেই লোকটাই ভীষন জটিল?

.

আমি: মানে?

.

আপি: কিছুইনা এমনিই বললাম আরকি। ঘুমিয়ে পর, রাত হয়েছে।

.

আমি: হ্যা সেই ভালো। আমার বয়েই গেছে ওদের কথা ভাবতে।

.

আপি: হইছে থামো। একদিন এর কথা ভেবেই দিন শুরু হবে আর রাত শেষ হবে। (মুচকি হেসে)

.

আমি: কী? ( বুঝতে না পেরে)

.

আপি: Just kidding...Good night!

.

আপি: Good night! (অবাক হয়েই)

.

আপি শুয়ে পড়ল আর আমিও কিন্তু আমার মাথায়তো খালি ওই দুজনের কথাই ঘুরছে। কিছু একটাতো আছে যা আমি বুঝতে পারছিনা। কিন্তু সেটা কী? আর আপিই এরকম কেন করছে? কিছু কী জানে আপি?

আমিওনা কী ভাবি আপি কিকরে জানবে? আর জানলেই আমাকে বলবেনা কেন? ভাল্লাগেনা কিছু, এত প্রশ্ন মনে রেখে থাকা যায়।

.

হঠাৎই AD এর আজকের ব্যাবহারটা নিয়ে ভাবছি। আচ্ছা উনি আমাকে অনি বলে ডাকছিল কেন? আমার নামতো অনিমা। অনি নামেতো আমাকে আমার ফ্যামিলি আর ফ্রেন্ডরা ছাড়া কেউ ডাকেনা। ওনার সামনে তো কেউ আমার নাম ধরে ডাকেনি। হ্যা আদিব ভাইয়া ডেকেছিল কিন্তু তাতো অনিমা বলে। উফফ কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা।

কিন্তু ওনার এত ওভার রিয়াক্ট করার কী ছিলো? ঝালই তো খেয়েছিলাম তাতে ওর কী? ওখানেতো আদিব ভাইয়ারাও ছিলো কই তারাতো এমন করেনি, তাহলে ওনার এত পেরা কীসের? 

একটু সেবা করেছে বলে? কে করতে বলেছিল সেবা? না করলেই হতো।

তাহলে কী আমার জন্যে ওনার রুমালটা নষ্ট হয়েছে বলে এভাবে বকে শোধ নিলেন? আমিকি ওনাকে বলেছি নাকি যে রুমাল দিয়ে আমার মুখ গলা মুছে দিতে? যত্তসব।

 ওহ বুঝেছি, নিশ্চই ওনার সাধের কোলড্রিংটা আমায় খাওয়াতে হয়েছে তাই এভাবে বকেছে? কনজুস! বললেই পারত কিনে দিতাম একটা? হুহ, একটা কোলড্রিংক এর জন্য এত বকা...



Infinite Love💗 

Part: 9

.

ওহ বুঝেছি, নিশ্চই ওনার সাধের কোলড্রিংটা আমায় খাওয়াতে হয়েছে তাই এভাবে বকেছে? কনজুস! বললেই পারত কিনে দিতাম একটা? হুহ, একটা কোলড্রিংক এর জন্য এত বকা...

.

ভোর রাতের দিকে ফোনের রিংটনে ঘুমটা হালকা ভেঙ্গে গেল..

.

উফফ! এতো রাতে কোন ছাগল ফোন করে ইরিটেড করছে আল্লাহ মালুম। ফোন বাজছে তো বাজছেই। বাজুকগে তাতে আমার কী? ঘুম is more important. No no most important. So ঘুমানোটা বেশি দরকার। তাই যে ইচ্ছে ফোন করতে থাক আমিতো ধরছিনা।

আরেহ, এতো থামার নামই নিচ্ছেনা। কোন উগান্ডা এত ভোর বেলা নিজেও ঘুমোচ্ছেনা আমাকেও ঘুমোতে দিচ্ছেনা। ধরবোনা আমি। হুহ। আমি অর্ধেক জাগনা অর্ধেক ঘুমন্ত অবস্হায় আছি। মানে ঘুমের ঘোরেই হালকা হালকা সবই শুনতে পাচ্ছি। হঠাৎই আপি বলল

.

আপি: অনি এই অনি ফোন বাজছে তোমার ধরো।

.

আমি: হুম? (ঘুমের ঘোরে)

.

আপি: কী হুম। ফোন বাজছে। May be important...ধর! (একটু জোরে)

 বলেই আপি ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পরল।উফফ শান্তি নাই। এক ড্রাম বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিফ করে বললাম

.

আমি: হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম ( ঘুম পুরো কাটেনি তাই ভাঙা গলায়)

.

কিন্তু ওপাশ থেকে কেবল জোরে জোরে নিশ্বাসের আওয়াজ এল। কিন্তু আমার তো এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই আমার তো ঘুম পাচ্ছে খুব, তাই আবার বললাম

.

আমি: কে? কথা বলছেন না কেন (হাই দিতে দিতে)

ঘুমের ঘোর‍েও এটুকু বুঝতে পারলাম আমার কথা শুনে ওপাশ থেকে নিশ্বাসের শব্দ আরো বেরে গেল। দূর ভাল্লাগেনা আমি ওভাবেই কানে ফোন রেখে কখন ঘুমিয়ে গেলাম নিজেও জানিনা।

.

সকালে আপি ডাকে ঘুম ভাঙল। 

.

আপি: অনি তাড়াতাড়ি ওঠো। মেডিকেলে লেইট হোয়ে যাবে নইলে।

.

আমি: হুম উঠেছি।

.

আপি: তখন কে ফোন করেছিল?

.

আমি: কখন?

.

আপি: ভোরবেলা।

হঠাৎ মনে পড়ল সেই কলটার কথা তাইতো। Who was that? কে ছিল? তাড়াতাড়ি ফোন খুজতে লাগলাম, পেয়েও গেলাম, মাথার সাইডেই পরে ছিল, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম ফোনটা এখনো কাটে নি লাইনে আছে! তাড়াতাড়ি কানে নিয়ে বললাম

.

আমি: হ্যালো?

.

সাথে সাথেই ফোনটা ওপাশ থেকে কেটে দিল। কী রে বাবা? এসব পাবনা মেনটাল হসপিটালের পেসেন্ট সব আমার কপালেই জোটে? উফফ!!

.

ও মাই আল্লাহ! ফোন করেছিল ভোর চারটায় একন বাজে পনে আটটা এতক্ষন লাইনটা কাটেনি? স্ট্রেন্জ!!

.

আপি: কে ছিল?

.

আমি: Don't know api.. সেইযে ফোন দিয়েছিল এখন লাইন কাটল, কিন্তু একটা কথাও বললনা পাগল নাকি?

.

আপি: বাদ দাও! যাও ফ্রেশ হয়ে রেডি হোয়ে নিচে এসো।

.

আমি: হুম।

.

এরপর আর ঐ ফোন নিয়ে ভাবিনি। ফ্রেশ হয়ে একটা হলুদ রং এর থ্রিপিছ বের করে পরে নিলাম। চুলগুলো ছেরে দিলাম। কানে হলুদ পাথরের ছোট ঝুমকা পরে as usual না সেজেই চলে গেলাম নিচে। 

.

আমি: আম্মু জলদি নাস্তা দাও খুদা লাগছে।( চেয়ারে বসে)

.

আম্মু: তোর আবার খুদাও লাগে? (খাবার আনতে আনতে)

.

আমি: কেন অামিকি এলিয়েন নাকি?

.

কাব্য: তার চেয়ে কম কিছু না।

.

আমি: I'm not talking to you..

.

কাব্য: But I'm talking to you.

.

আপি: হইছে থামা তোদের টম এন্ড জেরি শো।

.

আম্মু খাবার সার্ভ করল আর আমি ঝটাপট খেয়ে সবাইকে বাই বলে বেরিয়ে গেলাম। তারপর একটা সি এনজি নিয়ে রওনা হলাম।

.

চলার পথে সি এন জি এর পেছন পেছন কালো একটা গাড়ি দেখে মনে হচ্ছিল আমাকে ফলো করছে গাড়িটা। দূর কেউ আমাকে কেন ফলো করবে? আমিকি স্পেশাল কেউ নাকি? ইদানিং যে মাথায় কী ঘুরছে আল্লাহ নোস্।

.

মেডিকেলে পৌছে গেলাম, যথারীতি আজকেও লেট কিন্তু ভাগ্য ভালো ক্লাস শুরু হয়নি। গিয়ে ক্লাসে আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীদের কাছে বসলাম।

.

  ঐশি: এইতো মহারানী নিজের ফরমে ব্যাক করছে..

.

ইশু: Yeah. She's ten minutes late...

.

অর্পি: এ শোধরাবার না।

.

আমি কিছুই না বলে একটা হাই তুললাম জানি কিছু বলে কোন লাভ নাই। তাই চুপ থাকাই বেটার।

.

এরপর একজন ডক্টর এলো ক্লাস করাতে, ক্লাস শেষে অর্পি বলল

.

অর্পি: ইয়ার কী দেখতে স্যারটা, আমিতো ক্রাশ খাইলাম।

.

আমি: হুহ। তুই আর তোর ক্রাশ। কখনো কোথায় কার ওপর পরে আল্লাহ মালুম।

.

 ঐশি: তা অনি ম্যাডাম আপনি আপনার রেকর্ড কবে ব্রেক করবেন?

.

আমি: সে তো কবেই ব্রেক হয়ে গেছে (আনমনে)

.

সবাই: What?(চেচিয়ে)

.

আমি: আরে! আমি তো ক্লাসে ঠিক টাইমে না আসার রেকর্ডের কথা বলছিলাম, কাল ব্রেক হলো না সেটাই আরকি

.

ঐশি: তাই বল। আমি ভাবলাম ক্রাশ এর কথা বলছিস।

.

আমি: আমি ওসব আনহাইজিনিক জিনিস খাই না। আমি স্বাহ্য সচেতন।

.

ইশু: হইছে! যেইদিন কারো ওপর ক্রাশ খাবি, সেদিন এমন ভাবে খাবি যে জীবনেও আর তাকে ছাড়তে পারবি না।

.

আমি: দেখা যাবে।

.

ইশু: এটাই হবে বাবু।

.

ক্লাস শেষে সবাই বেরিয়ে পড়লাম লক্ষ কার্জন হল।

রাস্তার সাইড দিয়ে হাটছি ঠিক তখনি দেখলাম রোডের সাইডে চায়ের দোকানে একটা জিপের কাছে আদিব ভাইয়ারা দাড়িয়ে আছে। 

.

হ্যা সাথে ওই হনুমানটাও আছে। আজকে নীল শার্ট আর কালো জিন্স পরেছে, বরাবরের মত চুলগুলো কিছুটা কপালে পরে আছে, হাতে কালো রং এর ঘরি, পায়ে ব্লাক সু। ওয়াও! কিন্তু আমিতো ফিদা হইনি একদমি হইনি।

.

আদিব ভাইয়াকে দেখে ওদিকে যাওয়ার ইচ্ছে জাগলেও ওই খাটাশটাকে দেখে সেই ইচ্ছেটা আর নেই তাই দেখেও না দেখার ভান করে হাটছিলাম।

.

কিন্তু আমার সাধের বান্ধবীরা থাকতে কী তা হতে পারে? হঠাৎই অর্পি বলল

.

অর্পি: আরে ওই ভাইয়াগুলা না?

.

আমি: তো? এটা পাবলিক প্লেস যে কেউ থাকতে পারে। এতো এক্সাইটেট হবার কী আছে?

.

 ঐশি: চল দেখা করে আসি।

.

আমি: কেন? তোর কোন কালের আত্নীয় লাগে?

.

  ইশু: উফফ এমন কেনোরে তুই?

.

হঠাৎই আদিব ভাইয়া আমাদের দেখে হাত নারল, অগত্যা এখন দেখা করতেই হবে। মুচকি একটা হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলাম ওদিকে।

.

আদিব ভাইয়া: কী ব্যাপার আজ এদিকে।

.

আমি: আসলে ভাইয়া কার্জন হলে যাচ্ছিলাম।

.

আদিব ভাইয়া: Wow! What a coincidence!! আমরাও তো ওখানেই যাবো। SE ( software engineering) ডিপার্টমেন্টে।

.

ইশু: কেন?

.

আদিব ভাইয়া: আসলে..

.

AD: ওই এখানেই কথা বলবি নাকি এগোবি?

.

আজব! বেচারাকে কথাটাও শেষ করতে দিলনা খাটাশ একটা।

.

আদিব ভাইয়া: হ্যা চল আর তোমরাও চল এক যায়গাতেই তো যাবো সব।

এই খাটাশটার সাথে যাবোনা হুহ, কালকে সবার সামনে কীভাবে ধুয়ে দিল আমায়। রেগে আছি আমি। 

.

আমি: না ভাইয়া আমাদের একটু কাজ আছে ওটা সেরে যাবো।

.

আদিব ভাইয়া: ওহ তা..

.

ইশু: ঐ মিথ্যে বলছিস কেন? না ভাইয়া আমাদের কোন কাজ নেই আপনি চলুন।

.

আমি রেগে ইশুর দিকে তাকালাম। তখনি খাটাশটা I mean Mr. AD মুখ খুললেন।

.

AD: বাচ্চাদের একা একা চলতে নেই, বিপদ থাকে।

.

What does he mean? কথাটা আমায় বলল? বলুকগে, কিন্তু আমিতো ওনার সাথে কথাই বলবনা হুহ।

.

আদাব ভাইয়া: ভা.. I mean অনিমা,চলো। একসাথেই যাই যাচ্ছিতো এক জায়গাতেই।  

.

কী আর করার গেলাম ওনাদের সাথেই। কার্জনের গেইটের সামনেই ফুচকা দেখলাম। দেখেই খাওয়ার জন্য চিৎকার করতে ইচ্ছে হল আর AD এর ভাষায় পেঙ্গুইন এর মত লাফাতে। কিন্তু এখন ওনার সামনে ফুচকা খাবার কথা বলার সাহস আমার নেই। আর চোখে ওনার দিকে তাকালাম ওমা উনিও আমার দিকে আর চোখে তাকিয়ে আছেন। থাক তাতে আমার কী? আমি সমনের দিকে হাটা দিলাম।

.

কার্জনের ভেতরে আমরা একটা জায়গায় বসলাম আর ওনারা কোন কাজে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল আমাদের ওয়েট করতে।

.

বেশ অনেক্ষন পর ওনারা বেড়িয়ে এল তারপর পুরো কার্জন হলটা ঘোরালো। কিন্তু AD বাদে আজকে ওনারা সবাই আমাকে আলাদা ভাবে ট্রিট করছে, জেনো আমি সম্পর্কে ওনাদের কাছে সম্মনীয় কেউ, আদিব ভাইয়া আর AD বাদে আপনি বলছে আমাকে সবাই, কিন্তু ঐশিদের ঠিকি তুমি বলছে। আর এই পুরোটা সময় AD সাহেব সবার সাথে কথা বললেও আমার সাথে বললেনা। কি লোকরে বাবা কালকের জন্য একটা ছোট করে সরি ও তো বলতে পারত। উলটে ভাব দেখালো হুহ।

.

বাইরে বেরোতে যাবো আমরা হঠাৎ একটা বাইক সাইড দিয়ে গিয়ে আমার ওরনা ধরে টান মারল, বাইকার লোকটাযে ইচ্ছে করে করেছে তা বোঝাই গেল। কিন্তু আমার ওরনাটা সেপটিবিন দিয়ে লাগানো লাগানো ছিলো যার ফল সরূপ ওরনাটা আমার গায়ে থাকলেও আমি পরে গেলাম আর ঘারের কাছ দিয়ে সেপটিভিন এর খোচায় খানিকটা কেটে গেল।

.

AD চিৎকার করে বলল

.

AD: ঐশর্য ওকে সামলাও! 

.

কথাটা বলেই ওখানে তিনচারটা বাইক পার্ক করা ছিল, আর দুজন বাইকের মালিক সেখানেই ছিলো, তাদের একজনকে বলল

.

AD: Give me the key! (চিৎকার করে)

.

লোকটা হেবলার মত তাকিয়ে রইল সেটা দেখে AD হাত থেকে চাবিটা ছো মেরে নিয়ে ঝড়ের বেগে বাইকটা চলে গেল ওই বাইকটার পিছে।কী জোরে গেলোরে বাবা।

.

ওরা আমাকে তুলে এক বেঞ্চে বসালো। বাট কেউ খেয়াল করেনি আমার ঘারের দিকে একটু কেটে গেছে। আমিও বলিনি ওদের।

.

ইশু: আচ্ছা ভাইয়া কোথায় গেল? 

.

আদিব: শিক্ষা দিতে।

.

 ঐশি: মানে?

.

বদলে আদিব ভাইয়া কিছুই বললোনা খালি হাসল।

.

আধ ঘন্টারো বেশি সময় পর AD এলো। লোকটাকে তার বাইক ফিরিয়ে দিল।

আমি অবাক হয়ে ওনাকে দেখছি, শার্ট ঘামে ভিজে গেছে, শার্টের বেশ কয়েকটা বোতাম খোলা, হাতা এলোমেলো ভাবে ফোল্ড করা, কলারটা উচু করা, চুলগুলো এলোমেলো, চোখ লাল হয়ে আছে, ডান হাত হালকা ছিলে গেছে, হালকা রক্ত পরছে, এ কী করে এসছে? এমন লাগছে কেন? কী করতে গেছিলো উনি..??



Infinite Love💗

Part: 10

.

আমি অবাক হয়ে ওনাকে দেখছি, শার্ট ঘামে ভিজে গেছে, শার্টের বেশ কয়েকটা বোতাম খোলা, হাতা এলোমেলো ভাবে ফোল্ড করা, কলারটা উচু করা, চুলগুলো এলোমেলো, চোখ লাল হয়ে আছে, ডান হাত হালকা ছিলে গেছে, হালকা রক্ত পরছে, এ কী করে এসছে? এমন লাগছে কেন? কী করতে গেছিলো উনি?

.

এমনিতেই অমন আকষ্মিক ঘটনায় আমি ভয় পেয়ে গেছি, তারওপর একে এভাবে দেখে আমার মাথা ঘুরছে। কিন্তু এমন এলোমেলোভাবেও কী সুন্দরই না লাগছে। কিন্তু এমন অবস্হা করল কীভাবে? রাগে ফোস ফোস করছে AD.

.

তখনি আদিব ভাইয়া ওনার কাছে গিয়ে বলল

.

আদিব ভাইয়া: কীরে এডমিট করে এসছিস না পাঠিয়ে দিয়েছিস?

.

AD: ফেলে রেখে এসছি। ( রাগে ফুসতে ফুসতে)

.

আদিব ভাইয়া: কীহ ওভাবেই ফেলে রেখে এলি? লোক দিয়ে পাঠিয়ে দিতে পারতি। 

.

AD: প্রয়োজন মনে করিনি। ( কঠোর গলায়)

.

আদিব ভাইয়া: কিন্তু জেনারেলি তুই নিজ দায়িত্বে এডমিট করিয়ে দিস।

.

AD: সব অপরাধের শাস্তি এক হয়না। (গায়ের ধুলো ঝারতে ঝারতে)

.

ইশরাক ভাইয়া: নিজে উঠতে পারবে?

.

AD: এক মাসের মধ্যে না। (কলার আর হাতা ঠিক করতে করতে)

.

আদিব ভাইয়া:  উফ তুইও না.. কজন? আর কোথায়?

.

AD: দুজন। বাংলা একাডেমি গেইটের সামনের রোডে। (হাত দিয়ে চুল সেট করে)

.

আদিব ভাইয়া হতাশাজনক একটা চাহনি দিয়ে নিজের ফোনটা বের করলেন। 

.

আর আমরা হা করে ওনাদের কথপোকথন শুনছি, আমি আর আমার বান্ধবীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেও AD এর বন্ধুদের রিয়াকশন দেখে মনে হল যেন যা হবার তাই হয়েছে। এমনটাই হবার কথা। কিন্তু হোয়েছেটা কী?

.

আদিব ভাইয়া কোথায় যেন ফোন করল, ফোনে বলল।

.

আদিব ভাইয়া: বাংলা একাডেমির সামনে দুজন আহত অবস্হায় পরে আছে অবস্হা ক্রিটিকাল, এসে নিয়ে যান।

.

বলেই ফোনটা কেটে দিল, এখন আমার কাছে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হতে লাগল। That means AD ওই দুজনকে? কিন্তু কেন? জাস্ট আমার ওরনায় হাত দিয়েছে  বলে? কে হই আমি ওনার? শুধুই মানবতার খাতিরে? নাকি হিরোগিরি দেখাতে? তাই হবে তাছাড়া আর কী?

.

হঠাৎই AD এসে আমার হাত ধরল তারপর আমাকে টানতে টানতে কোথাও নিয়ে যেতে লাগল। সবাই আমাদের পেছন পেছন আসছে, সবাই বোঝার চেষ্টায় আছে কী হয়েছে কী? এডির মুখ চোখ দেখে কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আর সেদিকেই যাচ্ছি যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে।

.

আমাকে নিয়ে একটা ফার্মিসিতে ঢুকলো সে, তারপর বলল

.

AD: একটি ফার্সট এইড বক্স দিন।

.

ফার্সট এইড বক্স নিয়ে সে আমায় ওখানেই হাত ধরে বসালেন আমি অবাক চোখে তাকে দেখছি। ওরাও নিরব দর্শকের মত ব্যাপারটা দেখছে। উনি বললেন

.

AD: ওরনাটা সরাও।

.

আমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। সে পাত্তা না দিয়ে নিজেই আমার কাধের কাছ ধেকে হালকা করে ওরনাটা সরিয়ে দিল। তারপর আস্তে করে আমার কাটা জায়গাটায় ঔষধ লাগিয়ে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিল।

.

 আজব! উনি কিকরে দেখলেন এটা? আমিতো ঢেকে রেখেছিলাম। আর কাউকে বলিওনি তাহলে?

.

AD: নিজের যত্ন না করতে পারলে অন্যের সেবা করবে কীভাবে? 

.

বলেই উঠে যাচ্ছিলেন কিন্তু আমি ওনার হাত ধরে ফেললাম, উনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, বাকিরা তো অলমোস্ট হা করে তাকিয়ে আছে। আমি নিজেও জানিনা আমি কী করছি আর কেন করছি।

.

আমি টেনে তাকে বসিয়ে দিলাম, সেতো অবাক চোখে তাকিয়েই আছে। আমি ওনার ডান হাত ধরে উনার ছিলে যাওয়া অংশটাতে আলতো হাতে পরিস্কার করে মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলাম, তারপর ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি নিজেকে সামলে বললাম।

.

আমি: অন্যের খেয়াল রাখার সাথে সাথে নিজের খেয়ালতাও রাখতে হয়।

.

উনি কিছুই বলছেননা একবার আমার দিকে আরেকবার ব্যান্ডেজের দিকে দেখছেন, ব্যাপারটা হজম করতে পারেনি হয়তো।

.

ইশরাক ভাইয়া: ভাবি বাড়ি যাবেনতো নাকি?

.

আমি: হ্যা যা.. কীহ? কী বললেন?

.

হঠাৎ AD এর কাশি উঠে গেল আর কনোরকমে কাশি থামিয়ে ও রাগী চোখে ইশরাক ভাইয়ার দিকে তাকালেন। ইশরাক ভাইয়া থতমত থেয়ে বললেন।

.

ইশরাক ভাইয়া: নাহ মানে.. ওই মুখে এসে পরেছে, আজকে আমার বাসায় আমার ভাবি এসছে তো তাই আরকি বেরিয়ে গেছে মুখ থেকে।

.

আমি: ওহ

.

আমি ব্যাপারটা অতটা গুরত্ব দিলামনা। তারপর যে যার মত ফিরে গেলাম বাড়িতে।

.

ওরনা দিয়ে ব্যান্ডেজটা ঢেকে রাখার কারনে বাড়িতে কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি। কিন্তু আপিকে সবটাই বল্লাম আর আপি এই নিয়ে একদফা হাসল।

.

রাতে একটু জর আসায় পরেরদিন মেডিকেলে গেলামনা.. সকালে দশটার দিকে আপি ডাকতে এল কফি নিয়ে।

.

অাপি: অনি! জরটা কমেছে ( কপালে হাত দিয়ে)

.

আমি: হুম অনেকটাই কমে গেছে। (আপির হাত থেকে কফিটা নিয়ে)

.

আপি : ব্যাথা আছে? ( আমার পাশে বসে)

.

আমি: নাহ এখন আর নেই।

.

আপি: তা থাকবে কেন?  কেউ খুব যত্ন করে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে যে। 

.

আমি: মানে?

.

আপি: নাহ এমনিই বললাম আরকি

.

আমি: তুমি আজকাল এমনি এমনি সব কিছু বলছ, ব্যাপারটা কী?

.

আপি: কী আর ব্যাপার হবে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো।

.

বলেই আপি চলে গেল আর আমিও ফ্রেশ হয়ে নিলাম, চেন্জ করলামনা যেহেতু বাড়িতেই আছি, একটা সফট অ্যাস কালার টি শার্ট, আর কালো প্লাজো প্যান্ট পড়া ছিলাম, খোলা চুলটা কোনোরকম হাত দিয়ে সেট করে, হাতে একটা ওরনা নিয়েই নিচে গেলাম।

.

নিচে গিয়ে দেখলাম বাসায় ছেলেরা কেউ নেই। তাই ওরনাটা সোফায় ফেলে রাখলাম, আপি ডাইনিং টেবিলে বসে ফোন টিপছে, আমিও আপির পাশে বসে বললাম।

.

আমি: আম্মু আমাদের ব্রেকফাস্ট দাও।

.

আম্মু কিচেন থেকে হাক ছেড়ে বলল

.

আম্মু: এখন না পড়ে খাবার পাবে।

.

আমিতো বড়সর ঝটকা খেলাম, যেই আম্মু দেড়িতে খাওয়ার জন্যে এত বকে সেই আজ দেরিতে খেতে বলছে? Like seriously?

.

অবাক হয়ে আপির দিকে তাকালাম আপি একটা মুচকি হাসি দিল। আমি ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপার কী? আপি ফিসফিসিয়ে বলল

.

আপি: দেখতেই পাবে।

.

দূর সবিই পাগল হয়ে গেছে নাকি? ইদানিং ঘরে বাইরে খালি একেকজন পাগলের মত বিহেভ করছে? আল্লাহ আমি ডাক্তার ঠিকি হতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাগলের নয়, প্লিস বাচান আমাকে।

.

সোফায় বসে ফোন টিপে বোর হচ্ছি? আম্মু খেতেও ডাকছেনা, আপি আর সুলতানাপ্পিও রান্না ঘরে সেটে আছে, হচ্ছেটা কী? উফ!

.

বিরক্ত হয়ে গেলাম রান্নাঘরে গিয়ে দেখি পদের অভাব নেই, ব্রেকফাস্টে এত পদ? তাই অবাক হয়েই আম্মুকেবললাম। 

.

আমি: এত রান্না, এত রান্নাতো মানুষ জামাই আদর করতে রান্না করে, তুমি কার জন্য করছ? তোমার তো জামাই নেই

.

আম্মু: তোমার জানতে হবেনা যাও এখান থেকে কাজ করতে দাও।

.

আপি আর সুলতানাপ্পি মুখ টিপে হাসছে। আজব আজকাল দামিই নেই আমার কোন? গিয়ে গাল ফুলিয়ে সোফায় আধশোয়া হয়ে গেমস খেলছি। আপি এসে পাশে বসে বলল।

.

আপি: এত অধৈর্য কেন তুমি?

.

আমি: কারন হেয়ালিটা তোমরা একটু বেশিই কর।

.

আপি: আরে শোনোতো..

হঠাৎই আম্মুর ডাক এল আর আপি কিচেনে চলে গেল। আমি আবার গেইমস এ মন দিলাম।

.

কিছুক্ষন পর কলিং বেল বাজল, নিশ্চই অহি এসছে, এই সময় ও ছাড়া আর কে আসবে? ভাল্লাগেনা এখন আবার উঠতে, আম্মু হাক দিলো দরজা খোলার জন্য, তাই একগাদা বিরক্তি নিয়ে যেভাবে আছি সেভাবেই গেলাম দরজা খুলতে

দরজা খুলে  সামনে না তাকিয়েই বললাম..



Infinite Love💗

Part: 11

.

আমি: দেখো ওহি স্কুল থেকে এসছো এখন একদম ছোটাছুটি করবেনা, আর কোথাও বসবেও না রুমে গিয়ে ডিরেক্ট জামাটা চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে তবেই নিচে এসে বসবে। Get it?

.

বলেই সামনে না তাকিয়ে এলোমেলো চুলগুলো নারতে নারতে বড় সোফায় আধশোয়া হোয়ে এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে আবার গেইমস খেলায় মনোযোগ দিলাম । হঠাৎ ফিল করলাম যে সামনের সিঙ্গেল সোফায় কেউ বসল। নিশ্চই ওহি! উফ এই মেয়েটা একটা কথাও শোনেনা। তাই বিরক্ত হয়েই বললাম

.

আমি: ওহি আমি তোমাকে চেন্জ করে তারপর বসতে বলেছি। ( ফোনে চোখ রেখেই)

.

কিন্তু কোন সাড়া পেলাম না। তাই এবার একটু রেগেই তাকালাম আর তাকিয়েই আমি সেটাই দেখলাম যেটা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুুত ছিলাম না, আমি এমন চমকালাম যে আমার হাত থেকে মোবাইলটা পরে গেল আর মুখ থেকে সেই বিশ্ববিখ্যাত 'আআ' নামক চিৎকার বেরিয়ে এল। যেটা শোনার পর যে কেউ ঘাবড়ে  যাবে কিন্তু আমার সামনের ব্যাক্তিটি ঘাবড়ালো তো নাই বরং বিরক্ত হয়ে তাকালো।

.

আসলে ব্যাপারটা হল এই যে আমি তাকাতেই দেখলাম মিস্টার হিরো I mean AD সাহেব পায়ের ওপর পা তুলে হেলান দিয়ে বসে এক দৃষ্টিতে আমাকে পা থেকে মাথা অবধি স্কান করছে। তাই চমকে গিয়ে চিৎকার মারলাম আরকি।

.

কিন্তু এ বেচারার ফেস রিয়াকশন দেখে বুঝলাম, এই চিৎকার এর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। তাই বিরক্তি নিয়েই বলল

.

AD: What the hell? এভাবে চেচালে কেনো? 

.

কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার নিজের অবস্হার কথা মাথায় এলো, আল্লাহ আমিতো টি শার্ট আর প্লাজো পরা, তাও হাই নেকের টি শার্ট, চুলটাওতো এলোমেলো, ওরনা? ওরনা কই আমার? ড্যাম! আমিতো আমার অবস্হা দেখে, লজ্জায় ওনার দিকে তাকাতেই পারছিনা আর এখন চেন্জ করতে গেলেও ব্যাপারটা হাস্যকর হবে, তাই সোফার ওপর থেকে তাড়াতাড়ি ওরনাটা গায়ে জরিয়ে, চুলগুলো হাত দিয়ে সেট করে নিলাম।

.

ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, হয়তো আমার কান্ডকারখানা দেখছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল

.

AD: চেচালে কেন ওভাবে?

.

আমি: আ..আপনাকে দেখে ভয় পপেয়ে গেছিলাম।

.

AD: আমাকে দেখে ভয় পাবার কী আছে? আমি বাঘ ভাল্লুক রাক্ষস নাকি দানব কোনটা?

.

আমি: তার চেয়ে কম কিছুওনা।

.

 AD: What?

.

আমি: Nothing...! I.. I mean আপনি এখ্খানে কী করছেন?

.

AD: তোতলানো বন্ধ করো I don't like it..

.

হুহ I don't like it.. তোমার লাইক আনলাইক দিয়ে আমি কি করব ভাই?

.

AD: আর দাওয়াত দিয়ে এনে জিজ্ঞেস করছ কেন এসেছি?

.

আমি: কিহ! আমার কী খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই যে আপনাকে দাওয়াত করব?

.

AD: তুমি করোনি তোমার ফ্যামিলি মেমবাররা করেছে।

.

আমি: ওরা কেন আপনাকে ইনভাইট করবে? Who are you? কে হন আমাদের? আত্নীয় হলে ঠিকি চিনতাম তাহলে?

.

AD: আমি..

.

তখনি আপি এসে বলল 

.

আপি: কীরে এভাবে চেচালি কেন?

.

আমি: দেখোনা আপি..

.

আমি কথা শেষ করার আগেই আপি AD এর দিকে তাকিয়ে বলল।

.

আপি: আরেহ এসে পোরেছো তুমি? এত দেরি করলে যে?

.

AD: আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল। কেমন আছো?

.

আপি: এইতো। তুমি?

.

AD: বিন্দাস! 

.

আপি: ওয়েট ময়নাপ্পিকে ডাকছি।

.

AD: একদম ব্যস্ত হতে হবেনা। এখানেই আছি আমি। Where is my junior champion?

.

আপি: কে কাব্য?

.

AD: Yeah..

.

আপি: ওহ প্রাইভেট পরতে গেছে এক্ষুনি চলে আসবে।

.

আমি অবাক হয়ে এদের দেখছি। তারমানে দুজন দুজনকে চেনে? আম্মুও তো চেনে মনে হচ্ছে। খালি আমিই চিনিনা? আর ওনাকে দেখেও মনে হচ্ছেনা আমাকে এখানে দেখে উনি অবাক হয়েছেন, তাই আমি আপিকে জিজ্ঞেস করলাম

.

আমি: আপি তুমি চেনো একে?

.

আপি: চিনবোনা কেন? ও তো..

.

তখনি আম্মু কি হোয়েছে জিজ্ঞেস করতে করতে এলো এসে AD কে দেখেই বলল

আম্মু: আরে বাবা? তুমি এসেছো? এত দেরি করে আসে কেউ? কখন থেকে ওয়েট করছি।

.

AD আম্মুর সামনে গিয়ে বলল।

.

AD: আসসালামুয়ালাইকুম মামনী। 

.

এরপর পেছনে গিয়ে আম্মুর দুই কাধে হাত রেখে বলল

.

AD: And I'm so sorry! সব দোষ ঘুমের, ওই ভাঙতে লেইট করেছে, আমার একদমি দোষ নেই। ( বাচ্চাদের মত করে)

.

আম্মু AD এর কান ধরে বলল

.

আম্মু: আমার সাথে ফাজলামি, বাদর ছেলে।

.

AD: তোমারিতো। কেমন আছো বলো। আর আঙ্কেল কোথায়?

.

আম্মু: খুব ভালো আর একটু বাজারে গেছে। বাকিরাও এলে ভালো লাগতো আসলনা কেন।

.

AD: একটু ব্যস্ত তবে ফ্রি হলে আসতে পারে।

.

আমি খালি হা করে সব শুনছি, এমন ভাবে কথা বলছে দুজন জেনো মা ছেলে। ঢং।  সবকিছুই তামিল সিনেমার মত লাগছে। সবি দেখছি, সবি শুনছি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিনা। আম্মুর সাথে তো খুব ভালো সম্পর্ক মনে হচ্ছে, মামনী বলে ডাকছে? আব্বুকেও চেনে? আমাদের কোন আত্নীয় নাকি এ? উফফ কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।

তখনি সুলতানাপ্পি এসে বলল

.

সুলতানাপ্পি: আরে তুমি কখন এলে? 

.

AD: এইমাত্র।

.

বলেই সুলতাপ্পিকে এক হাতে আলতো করে হাগ করে বলল

.

AD: কেমন আছো ফুপিমনি?

.

ফুপিমনি? সুলতানাপ্পিকেও চেনে? আল্লাহ নিজেকে এখন সত্যিই এলিয়েন মনে হচ্ছে।

.

সুলতানাপ্পি: খুব ভালো এত লেইট করতে হয়?

.

AD: অন্ত ওহি কই?

.

সুলতানাপ্পি: অন্ত ঘুমোচ্ছে আর ওহি স্কুলে এখনি চলে আসবে। আর কেউ আসেনি।

.

AD: নাহ! একটু বিজি আছে।

.

আম্মু: বলোনা ওদের দূপুরে চলে আসতে। 

.

হঠাৎই আব্বুর আগমন হল আর আব্বু বলল 

.

আব্বু: বলো না, বলে দিয়েছি আর ওরা আসছে দূপুরে।

.

আব্বুকে দেখেই আদ্রিয়ান এগিয়ে গেল আব্বুর হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে সোজা কিচেনে রেখে এল। বাহবা কী কেয়ারিং?

এসেই আব্বুকে বলল 

.

AD: আসসালামুয়ালাইকুম আঙ্কেল। 

.

আব্বু: ওয়ালাইকুমাসালাম! ইয়াং ম্যান!!

বলেই দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরল। বাপরে কোন জন্মের বাপ ছেলে এরা? এত আদিক্ষেতা কীসের, কিছুই মাথায় ঢুকছে না!

.

AD: তো? কেমন আছো? Feet?

.

আব্বু: As usual.. 

.

AD: হুম দিন দিন ইয়াং হয়ে যাচ্ছো? 

.

আব্বু: হাহা তাই নাকি? 

AD: একদম! 

.

আব্বু: আঙ্কেলটা কার দেখতে হবে তো।

.

AD: Point আছে!

.

উফফ এগারোটার বেশি বাজে এরাকি খাবেনা নাকি? খুব খুদা লাগছে। তারওপর এদের এই পেচাল। যার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। চরম বিরক্তি লাগছে। কিন্তু এডি সামনে বলে কিছু বলতেও পারছিনা আর এদের কথা শেষি হচ্ছেনা।

.

তাই ওপরে গিয়ে টি শার্ট টা চেন্জ করে একটা সাদা লং টপ পরলাম। আর টি শার্টটা একটা আছাড় মারলাম এর জন্যই আজ আমার প্রেসটিজ পানচার হলো। কেনযে এগুলো পড়ে নিচে নামলাম ভাল্লাগেনা। গাল ফুলিয়ে বসে আছি, আর ভাবছি AD এর সাথে আমাদের ফ্যামিলির কী সম্পর্ক? সবাই ওকে কীকরে চেনে? আর সবার সাথে কী সুন্দর ফ্রি ভাবে কথা বলছে? উফ কিছুই ভাবতে পারছিনা। কিছুদিন যাবদ যা যা হচ্ছে কিছুই আমার মাথায় ঢুকছেনা। পাগল হয়ে যাবো আমি।

.

নাহ খিদেটা আর সহ্য করা যাচ্ছেনা। তাই নিচে গিয়ে আম্মুকে বললাম 

আমি: আম্মু? খেতে দেবে আজকে? ( চিৎকার করে)

আম্মু: কী হচ্ছে কী অনি? বাড়িতে একজন মেহমান এসছে! সে খেতে না বসলে তোমাকে কীভাবে খেতে দেই।

আমি: তো তোমার মেহমান কে বলোনা খেতে বসতে!

আম্মু: তোমার কী মনে হয়? বলি নাই আমি? ওহি আর কাব্য এলেই খাবে বলল।

.

আল্লাহগো এত মেনার্স কই রাখমু?

.

আমি: আমাকেতো খেতে দাও?

.

আম্মু: যাও এখান থেকে সময় হলে আমিই ডাকবো।

.

আমি: আরেহ ক্ষিদে পেয়েছে তো।

.

আম্মু: যেতে বলছি আমি।

.

রেগেমেগে চলে এলাম হচ্ছেটা কী? আমার কোন মূল্যই নেই। কে ওই AD. কোন কালের আত্নীয় আমাদের? ওর জন্যে এত কিছু? এতো আদিক্ষেতার কী আছে? এসব ভাবছি আর হাটছি। AD এর চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করতে করতে হাটছি হঠাৎই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম।

.

আমি: কোন কানারে চোখে দেখতে পাওনা নাকি। আমার কপালটা গেল রে! কপালের আর কী দোষ? দোষতো আমার কপালের লেখার। আল্লাহ এই কপাল উঠাইয়া নাও। এই কপাল নিয়া আর বাচতে ইচ্ছে করে না। 

.

এসব বলে সামনে তাকাতেই দেখি মি: হিরো দুই হাত ভাজ করে ভ্রুটা যথারীতি কুচকে দাড়িয়ে আছে। আর বোকার মত আমি ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আর ও এক হাত দিয়ে নিজের থুতনি ধরে আমাকে স্কান করছে। 

.

সেটা দেখে আমি ভ্রু কুচকে বললাম।


আমি: What?

AD: No I'm thinking that তোমার প্রবলেমটা একচুয়ালি কোথায়? মাথায় নাকি চোখে? নাকি অন্য কোথাও?

আমি: মানেহ?

AD: মানে এই যে হাটার সময় খালি ধাক্কা খেয়ে পরে যাও, যদি বল দেখতে পাওনি তাহলে ভাবব চোখে সমস্যা আর যদি বল ইচ্ছে করেই কর তাহলে ভাবব মাথায় সমস্যা।

আমি: কীহ?

AD: হুম। আর তুমিতো বাচ্চা একটা মেয়ে। যে কিনা নিজের খেয়ালটাও রাখতে পারোনা। মেডিকেল তোমাকে কিকরে চান্স দিলো বলোতো?  

.

মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এভাবে অপমান? ভিষণ রেগে বললাম 

.

আমি: দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে আবার অপমান করছেন।

.

AD: আগেই বলেছি it depends on point of view. তাছাড়াও ভুলতো কিছু বলিনি? তোমার মত বোকা একটা মেয়ে ডাক্তার হবে? কীভাবে?

.

শুনেই মাথাটা গরম হয়ে গেল। খাটাশ একটা, আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কাব্যর একটা ব্যাট পাশেই রাখা, আমি সেটা তুলে তেড়ে গেলাম ওর দিকে, আমার বুদ্ধি নিয়ে রসিকতা? দেখাচ্ছি!!

.

তখনই আপি এসে আমাকে আটকালো, আমি আপিকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম 

.

আমি: আপি ছাড়ো আমাকে,আজ আমি এর মাথাই ফাটিয়ে দেব, আমিও দেখবো এর মাথায় কত বুদ্ধি! আমার বুদ্ধি নিয়ে মজা করা?

.

এডি আগের মতই দুই হাত ভাজ করে, ডান হাতটা থুতনিতে রেখে দাড়িয়ে আছে।

যেনো ব্যাপারটায় ভীষণ মজা পাচ্ছে। বের করছি ওর মজা ওয়েট!

.

আপি: আরেহ অনি কী করছিস বলত? মেহমানের সাথে কেউ এমন করে? রাখ এটা! ( ধমকে)

.

আমি: মেহমান? কীসের মেহমান? এক্চুয়ালি কী হয় ও আমাদের? যে এত খাতির? এত যত্ন? কে এ হ্যা? কে এ ( আপির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে)

.

আপি: তুই এখনো বুঝিসনি ও কে? (অবাক হয়ে)

.

আপির হাত হালকা হয়ে গেল আর আমি আপিকে ছাড়িয়ে AD এর দিকে এগোতে এগোতে বললাম।

.

আমি: না বুঝিনি আর বুঝতেও চাইনা, আমার বুদ্ধি নিয়ে কথা? এরেতো আমি? 

.

বলে ব্যাটটা উচু করলাম মারার জন্য, আর AD এবার একটু নড়েচড়ে দাড়ালো তখনি আপি বলল

.

আপি: আরে ও আদ্রিয়ান।

.

আমি: আদ্রিয়ান হবে ও ওর বাড়িতে তাতে আ..

এটুকুবলেই থমকে গেলাম, কী নাম বলল আপি? আদ্রিয়ান? ভূল শুনলাম নাতো? এই সেই আদ্রিয়ান? তারমানে AD ই আদ্রিয়ান? আর আদ্রিয়ানই AD? আমি একজন বক্সিং, কেরাটে প্লাস মার্সাল আর্ট চ্যাম্পিয়ানকে, আমার এই 45 kg ওজনের শরীর নিয়ে ব্যাট দিয়ে মারতে যাচ্ছিলাম? ভাবতেই বড়সর একটা ঢোক গিললাম।


Infinite Love💗

Part: 12

এটুকুবলেই থমকে গেলাম, কী নাম বলল আপি? আদ্রিয়ান? ভূল শুনলাম নাতো? এই সেই আদ্রিয়ান? তারমানে AD ই আদ্রিয়ান? আর আদ্রিয়ানই AD? আমি একজন বক্সিং, কেরাটে প্লাস মার্সাল আর্ট চ্যাম্পিয়ানকে, আমার এই 45 kg ওজনের শরীর নিয়ে ব্যাট দিয়ে মারতে যাচ্ছিলাম? ভাবতেই বড়সর একটা ঢোক গিললাম।

.

এর এক হাতের শক্তিইতো আমার জন্য যথেষ্ট নট যথেষ্ট তার চেয়ে অনেক বেশিই! আব তেরা কেয়া হোগা অনি?

.

আমি একবার আপির দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার AD মানে আদ্রিয়ানের দিকে। আপি অসহায় প্লাস বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! কিন্তু আদ্রিয়ানের ফেস রিয়াকশন দেখে বুঝতে পারছিনা যে রেগে আছে, বিরক্ত হয়েছে নাকি মজা পেয়েছে। আমি ব্যাটটা ফেলে অসহায় ভাবে আপির দিকে তাকিয়ে বললাম

.

আমি : অআদ্ আদ্রিয়ান? 

.

আপি: জ্বি! ( বিরক্ত হয়ে)

.

আমি: You mean Adrian Abrar Zuhayer?

.

আপি: Yes I mean it.

.

আমি এবার আরেক দফা অসহায় লুক নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম।

.

আমি: আপনিই আদ্রিয়ান? ( মেকি হাসি দিয়ে কোনো রকম ব্যাপারটা ঘোরানোর চেষ্টা আরকি!)

.

আদ্রিয়ান: জ্বি হ্যা। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের ওরফে A..D..( বাকা হেসে)

.

আমি: ওহ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া ( আবারো মেকি হেসে)

.

কেন জানি রেগে গেল উনি, চোয়ালটা শক্ত হয়ে গেল,  কই এতক্ষন তো এমন লাগেনি। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বলল

.

আদ্রিয়ান: ওয়ালাই কুমুস সালাম !

.

হঠিৎই আম্মুর ডাক পরল। যাক এই প্রথম আম্মুর ডাকটা শুনে এত শান্তি লাগছে, একদম ঠিক সময় ডেকে আমাকে বাঁচিয়ে দিল। লাভ ইউ আম্মু!

.

তিনজনেই নিচে গেলাম গিয়ে দেখি কাব্য, আর ওহিও চলে এসছে। ওহি আদ্রিয়ানকে দেখেই ছুটে এলো, আদ্রিয়ানো ওকে কোলে তুলে নিলো। তারপর বলল

.

আদ্রিয়ান: কেমন আছে আমার আপুমনিটা?

.

ওহি: খুব ভালো, তুমি?

.

আদ্রিয়ান: আমিতো দারুন আছি! 

.

ওহি: কী এনেছো আমার জন্যে? ( উৎসুক হয়ে)

.

 আদ্রিয়ান: এইরে কিছুতো আনতে মনে নেই একদম ভুলে গেছি।

.

ওহি: it's ok ( মন খারাপ করে)

.

আদ্রিয়ান ওহিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে ওর সামনে হাটু গেরে বসে বলল 

.

আদ্রিয়ান: হুমমম। আমার আপুমনিটার মন খারাপ হয়েছে দেন কিছুতো একটা করতে হয়.. কী করা যায় কী করা যায়? ইয়েস! দেখোতো তোমার স্কুল ব্যাগে কিছু পাও কিনা।

.

ওহি ব্যাগ খুলতেই দেখলো ব্যাগের পকেটে তিনটা চটলেট রাখা, দেখেই খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল

ওহি: চকলেট?

.

আদ্রিয়ান: Yes chocolate!! এখন আমার আপুটা হ্যাপি?

.

ওহি: অননেক!

.

নিজের অজান্তে মুখে হাসি ফুটে উঠল আমার। আসলে চকলেটগুলো আদ্রিয়ানই রেখেছে। যখন ওকে কোলে নিয়েছিল তখনি পকেট থেকে বের করে ওহির স্কুল ব্যাগে রেখেছে। যেটা আমরা সবাই দেখলেও উলটো দিকে ঘুরে থাকার কারনে ওহি দেখতে পায় নি।

.

 কী মিষ্টি করে বাচ্চাদের সাথে কথা বলে আদ্রিয়ান, সত্যিই এত পারফেক্ট মানুষ হয়?

.

তখনই কাব্য বলল 

.

কাব্য: ভাইয়া ভালো আছো?

.

আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে কাব্যকে হাগ করে বলল

.

আদ্রিয়ান: একদম! তুমি?

.

কাব্য: সেই! 

.

আদ্রিয়ান: পড়ালেখা কেমন চলছে?

.

কাব্য: As usual...

.

আদ্রিয়ান: It should be better!

.

তখন ওহি একটা চকলেট ছিড়তে নিচ্ছিল তখনই আদ্রিয়ান ওকে আটকালো।

.

আদ্রিয়ান: No.. এখন না। আগে ব্রেকফাস্ট করবে তারপর এসব।

.

আরো একবার মুগ্ধ হলাম আমি! এ সত্যিই সবার কেয়ার করতে পারে।

.

আদ্রিয়ান: কিন্তু তার আগে উপরে গিয়ে, ফ্রেশ হয়ে, চেন্জ করে তবেই নিচে নামবে get it !! ( আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে)

.

বেশ বুঝতে পারলাম বেটা আমাকে কপি করে ব্যাঙ্গ করল। শয়তান ছেলে খালি আমাকে লেগপুল করার বাহানা খোজে। তোমার কপালে একটা ইরেটেটিং বউ পরবে যাকে সামলাতে সামলাতেই তোমার জীবন যাবে অভিশাপ দিলাম আমি!

.

হঠাৎ আম্মু বলল

.

আম্মু: তোরা এতক্ষণ ওপরে কী করছিলি রে?

.

আপি: আসলে..

.

আদ্রিয়ান: আসলে মামনী তোমার মেয়ে ক্রিকেট খেলছিল সেটাই দেখছিলাম।

.

 বলেই ফিক করে হেসে দিল।

.

আমি হা করে তাকিয়ে ওর হাসি দেখছি, এই প্রথম ও আমার সামনে এভাবে হাসল এর আগে বাকা হাসি দিয়েছিল কিন্ত এরকম হাসি দেয়নি ! আপি মিথ্যে বলেছিল সত্যিই মিথ্যে বলেছিল, এর হাসি মারাত্নক নয়, একদমি নয় বরং মারাত্নক কে হোল কিউব করলেও এই হাসিকে ব্যাখা করা যাবেনা। ছেলেদের হাসিও এত সুন্দর হয়?

এবার আমি ওর দিকে ভালোভাবে তাকালাম, একটা হোয়াইট পান্জাবী পরেছে, পান্জাবীটা ছোট আর ফিটিং আর গোল্ডেন কাজ করা , তার সাথে কালো একটা জিন্স পরেছে। পান্জাবীর হাতা ফোল্ড করা, হাতে কালো ঘরি, চুলগুলো আজকে বেশি করেই কপালে পরে আছে, তারওপর ওর এই হাসি।

এভাবে কেন হাসলো ও? এত সুন্দর করে হাসার কী খুব দরকার ছিল? ও কী জানে ওর এই হাসি থেকে আমি চোখ সরাতে পারছিনা?

.

আম্মু: মানে?

.

আদ্রিয়ান: মানে তোমার মেয়ে ছিক্স মারতে গিয়ে নো বলে আউট হয়ে গেছে।

.

বলেই আপি আর ও মিলে জোরে জোরে হাসছে। কিন্তু আমি একটুও রাগ করতে পারছিনা আমিতো মুগ্ধ হয়ে আদ্রিয়ানের হাসি দেখছি!

.

আম্মু কিছুই বুঝলনা তাই কথা বারালো না। ওহি আর কাব্য ও ফ্রেশ হয়ে এলো। অবশেষে আমরা খেতে বসলাম উফফ!

.

খাওয়ার সময় আদ্রিয়ান একবারো আমার দিকে তাকায়নি সবার সাথে বিভিন্ন কথা বলেছে আর খেয়েছে, তাতে আমার কী? আমি আমার মত খেয়ে যাচ্ছি। ও তাকালেই আমার কী না তাকালেই আমার কী? হুহ।

.

খাওয়া শেষে যেই উপরে উঠতে যাবো আম্মুর করা নির্দেশ এখন উপরে যাওয়া যাবে না। আজব হঠাৎ হঠাৎ আম্মুর কী হয় কে জানে? ভাল্লাগেনা। নিচে কেন বসে থাকতে হবে?

.

সোফায় বসে বসে হিসেব মেলানোর চেষ্টায় আছি! ও যদি আদ্রিয়ানই হয় তাহলে ওর বন্ধুরা ওকে AD বলছিল কেন? ওহ নো! Adrian নামটাই তো শর্ট ফরমে AD হয় এটুকু ঢুকলোনা আমার মাথায়? তারপর আদ্রিয়ানের সাথে ওর ডেসক্রিপশন মিলে যাওয়া, আব্বু বলেছিল ও ইন্জিনিয়ারিং কলেজগুলো থেকে স্টুডেন্টস নিয়ে কিছু একটা কাজ করছে, আর ওকেও বুয়েট আর কার্জনে দেখা, এতকিছুর পরেও বুঝলামনা? How duffer I am!

.

অনেকক্ষণ পর আদ্রিয়ান এসে আম্মুকে বলল

.

আদ্রিয়ান: মামনী আমি একটু ছাদে যেতাম আরকি, দরজাটা কোন দিকে?

.

 আম্মু: অনি আদ্রিয়ানকে একটু ছাদে নিয়ে যাও তো।

.

আমিতো আকাশ থেকে পড়লাম। আমিই কেন? ও কী বাচ্চা নাকি যে হাত ধরে নিয়ে যেতে হবে? আমি যাবোনা ওর সাথে। তাই বললাম

.

আমি: আআমি? আমি কেন? আপি বা কাব্যকে বলোনা!

.

আপি: আমি কাজ করছি দেখছোনা। কাব্যকে বল।

.

কাব্য: আমারো হোম ওয়ার্ক আছে।

.

আমি: আআমারো পড়া আছে! এসাইনমেন্ট দিয়েছে.. আমি যাই!

.

আম্মু: মার খাবে অনি  যেতে বলছি যাও! এত কথা বারাচ্ছো কেনো?

.

উফফ এদের সব কাজ এখনি পড়লো? সব আমার ঘর শত্রু বিভিষনের দল! আমাকেই যেতে হবে এই খাটাশটার সাথে! যদি তখনকার জন্য কিছু বলে?

.

আমি: ওকেহ চলুন!

.

 তখনি আদ্রিয়ান কাব্যকে বলল

.

আদ্রিয়ান: কাব্য তোমার সবচেয়ে শক্ত ব্যাট টা নিয়ে এসো তো।

.

ওমা ব্যাট দিয়ে কে করবে? আমায় মারবে নাকি? আল্লাহ আমি জীবনেও আর কাউকে মারতে যাবোনা এবারের মত বাচিয়ে দাও!

.

কাব্য: কী করবে ব্যাট দিয়ে?

.

 আদ্রিয়ান: কাজ আছে নিয়ে এসো।

.

কাব্য ব্যাট আনতে চলে গেল!

.

আমি: ছাদে ব্যাট দিয়ে কী করবেন?

.

আদ্রিয়ান:  দেখতেই পাবে! ( রহস্যজনক হাসি দিয়ে)

.

যা দেখেই আমার আত্মা শুকিয়ে এল।

.

এরমধ্যেই কাব্য ব্যাট নিয়ে এল। আদ্রিয়ান কাব্যর থেকে ব্যাটটা নিয়ে আমার দিকে একটা হাসি দিয়ে তাকালো। যা দেখে আমি একটা শুকনা ঢোক গিললাম।

.

আদ্রিয়ান: চলো?

.

আমি: হু! ও হ্যা চচলুন।

.

 হঠাৎই আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে ছাদে। ও আল্লাহ তারমানে ও ছাদের দরজা চেনে? তাহলে তখন ওটা কেন বলল? আমাকে ওর সাথে নেওয়ার জন্য? এবার আমাকে কে বাচাবে?

.

 ভাবতেই পা দুটো থেমে গেল কিন্তু খাটাশটা একবার আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আবারো টেনে নিয়ে যেতে থাকলো।

.

ছাদে এনে আমাকে দাড় করিয়েই ছাদের দরজা লক করে দিল! যা দেখে আমার ভয় আরো বেরে গেল! কী করবে এ? আদ্রিয়ান আমার দিকে এগোতে লাগল আর আমি শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছি কারন এখন পেছোনোটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না! আদ্রিয়ান একদম আমার সামনে এসে ব্যাটটা উঠিয়ে..




💗Infinite Love💗

Part: 13

.

ছাদে এনে আমাকে দাড় করিয়েই ছাদের দরজা লক করে দিল! যা দেখে আমার ভয় আরো বেরে গেল! কী করবে এ? আদ্রিয়ান আমার দিকে এগোতে লাগল আর আমি শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছি কারন এখন পেছোনোটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না! আদ্রিয়ান একদম আমার সামনে এসে ব্যাটটা উঠিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিল তারপর বলল..

.

আদ্রিয়ান: Hit me. 

.

আমিতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এ ছেলে পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি? আমি কেন একে হিট করব? কেউ ঠিকি বলেছিল ট্যালেন্টেড লোকেদের মাথায় গন্ডোগোল থাকে। 

.

আদ্রিয়ান : What happened? Hit me! (শক্ত গলায়)

.

আমি: আআমি ককেন আপনাকে হিট করততে যাববো?

.

আদ্রিয়ান: আবার তোতলাচ্ছো? বলেছিনা আমি পছন্দ করিনা? 

এনিওয়ে তখন বলছিলেনা যে আমার মাথা ফাটাবে? ব্যাট ও তোমার হাতে, আমার মাথাটাও তোমার সামনে, বাধা দেওয়ার জন্য হিয়া নেই, So do it..

.

আমি: সেটাতো আমি..

.

আদ্রিয়ান: সেটা যে কারণেই হোক হয়েছে তো? (রাগী চোখে তাকিয়ে)

.

বুঝলাম অবস্হা খারাপ! এতো ফুল ফরমে আছে, ভাগ অনিমা ভাগ

যেই সাইড করে যেতে নেবো উনি হাত উচু করে আটকে দিলেন!

.

আদ্রিয়ান:  তোমার কী মনে হয় তুমি চাইলেই যেতে পারবে? আমার পারমিশন ছাড়াই?

.

আমি: দদেখুন..

.

আদ্রিয়ান এবার আরো এগোতে লাগল আর আমাকে বাধ্য হয়েই পেছাতে হলো। কারন নইলে আমার গায়ের সাথে লেগে যাবে, ও হয়তো চাইছে আমি পিছিয়ে যাই তাই যথেষ্ট কাছে থাকার পরেও আরো এগোচ্ছে। ও এগোতো এগোতেই বলল।

.

আদ্রিয়ান: দেখবোতো, তবে সময় হলে। এবার বল তখন কী যেন বলছিলে? ইয়েস! আমার মাথা ফাটাবে, দেখে নেবে, মজা বোঝাবে আর কী কী জেনো?

.

আমি: আসলে আমিতো ভূল করে..( পেছাতে পেছাতে)

.

আদ্রিয়ান: ভূল করে আমার মাথা ফাটিয়ে কত বুদ্ধি আছে দেখতে চেয়েছিলে, তাই তো? তো দেখোনা? মারো! go for it!( এখনো এগোচ্ছে)

.

আমি ছাদের রেলিং এর সাথে লেগে গেলাম। আর উনি এসে আমার দুপাশে হাত রাখল।

.

আমি: I'm sorry! ( মাথা নিচু করে)

.

আদ্রিয়ান: উহুম সরিতে হবেনা। You have to hit me otherwise....

.

আমি: Otherwise??

.

আদ্রিয়ান: I will hit you...

.

ও মাই আল্লাহ এই ছেলে বলে কী? এর যা বডি, আমাকে একটা বারি মারলে তো আমাকে ইহকালের মায়া ত্যাগ করতে হবে! আল্লাহ বাচাও!

.

আদ্রিয়ান: এখন তুমি  ঠিক কর কোনটা ভালো হবে? ( ভ্রু নাচিয়ে)

আমি: আপনিইতো বলেন যে আমি বাচ্চা! বাচ্চা মানুষ ভূল করে ফেলেছি মাফ করে দিননা।

.

আদ্রিয়ান: বাচ্চারা বুঝি বড়দের ব্যাট দিয়ে মারতে যায়? তাদের মাথা ফাটাতে চায়? হুম? ( একটু জোরেই বলল)

.

আমি: সরি বললামতো এবারের মত ছেড়ে দিন! (কাদোকাদো হোয়ে)

.

আদ্রিয়ান আমার হাত থেকে ব্যাট টা নিলো। নিশ্চই আমাকে মারবে এখন! আল্লাহ আমার কী হবে? তাই চোখ বন্ধ করে একদমে বললাম

.

আমি: দেখুন আপনি মানিক আঙ্কেলের ছেলে, আর মানিক আঙ্কেল আব্বুর বন্ধু, আর আমি আমার আব্বুর মেয়ে, বন্ধু বন্ধু হলো ভাই ভাই, আর দুই ভাইয়ের ছেলে মেয়েও ভাই ভাই, থুরি আই মিন ভাই বোন। তো বোন ভেবে মাফ করে দিননা!

.

চোখ বন্ধ করেই বলছিলাম কথা গুলো কোন রেসপন্স না পেয়ে প্রথমে একচোখ খুললাম কিন্তু কিছু বুঝতে না পায়ার দুইচোখ খুলে দেখি উনি কমোরে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

.

আদ্রিয়ান: Like Seriously? তোমার  আমাকে ভা..

.

তখনি ছাদের দরজায় নক পড়ল! ওপাশ থেকে আপি বলল। 

.

আপি: অনি? আদ্রিয়ান? নিচে এসো ময়নাপ্পি ডাকছে! 

.

আদ্রিয়ান আমার দিকে একবার তাকিয়ে দরজা খুলে নিচে চলে গেল। আমিও পেছন পেছন দৌড় মারলাম। যাক বাবাহ আজকের মত বেচে গেলাম!

.

নিচে গিয়ে দেখি উজ্জ্বল কাকু, সজীব আর অর্নব ভাইয়া চলে এসছে। আদ্রিয়ানকে দেখেই তিনজন এসে হাগ করল তারপর বিভিন্ন রকম কথা বলতে বলতে বলতে ছোফায় বসল। ওরা নানারকম কথা বলছে আর আমি আর আপি সোফার পাশে দাড়িয়ে শুনছি!

.

চাচ্চু: আদ্রিয়ান তা এখন কী করছ?

.

আদ্রিয়ান: এখন আপাদত আমার ল্যাব নিয়ে কাছ শুরু করেছি খুব জলদি অফিস অপেন করব।

.

চাচ্চু:  ইন্জিনিয়ারস আর স্টাফ কোথায় পাচ্ছ?

.

আদ্রিয়ান: আসলে সদ্য পাশ করা স্টুডেন্ট দের দিয়েই শুরূ করছি!

.

আব্বু: তাহ তোমার বাবার বিজনেসটা ও তো দেখতে হবে তাইনা? তার একমাত্র ছেলে তুমি! 

.

আদ্রিয়ান: অবশ্যই দেখবো আঙ্কেল! কিন্তু তার আগে আমি নিজের একটা ফিল্ড করতে চাই! আর তারপর জাবিন (আদ্রিয়ানের বোন) যখন পড়ালেখা কমপ্লিট করবে তখন বাবার কম্পানিটাতো ওরি হবে! ও যদি সামলাতে না পারে তখন আমি খালি সাহায্য করব।

.

আব্বু: Thats like my boy.

.

আমি আরো একবার মোহিত হলাম ওর মতই ওর চিন্তাধারাও কত সুন্দর! আজকাল এভাবে কজন ভাবে।

.

সজীব ভাইয়া: তা আদ্রিয়ান বিয়ে কবে করছ?

.

এটা শুনেই আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকালো। আজব আমার দিকে কেন তাকালো? আমিকি ওর পাত্রি খুজে দেব নাকি!

.

আদ্রিয়ান: That's not fare ভাইয়া! তুমি আমার তিন বছরের বড় নিজে বিয়ে না করে আমাকে বলছ?

.

হাহা ভাইয়া নিজের কথায় নিজেই ফেসে গেছে। 

.

অর্ণব ভাইয়া: গার্লফ্রেন্ড ও নেই?

.

আদ্রিয়ান: নাউজুবিল্লাহ কী বল এগুলা। আল্লাহ পাপ দিব পাপ!

.

সবাই হেসে দিল ওর কথায়। তখনি কলিং বেল বাজল। আমাকেই যেতে হল দরজা খুলতে!

.

দরজা খুলে সামনে তাকিয়েই দেখলাম আদ্রিয়ানের বাবা মা আর দাড়িয়ে আছে! 

.

আমি: আসসালামুয়ালাইকুম আঙ্কেল, আন্টি!

.

মানিক আঙ্কেল: ওয়ালাইকুমাসালাম। মামনী কেমন আছো?

.

আমি: ভালো তোমরা?

.

আন্টি: ভালো সোনা! কেমন চলছে মেডিকেল লাইফ?

.

আমি: খুব ভালো তোমরা ভেতরে এসোনা!

.

এরপর ভেতরে গেলাম। ওনারা সবাই মিলে একে ওপরের সাথে কুশল বিনিময় করছে আর আমরা দেখছি দাড়িয়ে দাড়িয়ে 

.

ঠিক তখনি হঠাৎ একটা মেয়ে আমাকে এসে জরিয়ে ধরে বলল।

.

মেয়েটি: ভাবি... কেমন আছো?

.

ভাবি? আমাকে দেখে এর ভাবি মনে হয়? কোন এঙ্গেল থেকে মনে হয় যে আমি ম্যারিড? স্ট্রেন্জ!!!

.

ওর ভাবি ডাক শুনে বাকি সবাই অবাক হলেও। আব্বুর কাশি উঠে গেছে! আম্মু আর আন্টি একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। মানিক আঙ্কেল নড়েচড়ে বসল! আর আদ্রিয়ান পারলে মেয়েটাকে খেয়ে ফেলে!

.

তখনি আন্টি বলল 

.

আন্টি: জাবিন ওকে ভাবি বলছ কেন? ( চোখ গরম করে)

.

জাবিন জিবে কামড় দিয়ে বলল

.

জাবিন: সরি আম্মু। আর সরি আপু মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে।

.

 আমি: ইটস ওকে! 

.

জাবিন: ভালো আছো?

.

আমি: হ্যা! তুমি?

.

জাবিন: খুব ভালো।

.

আদ্রিয়ান : তোর মুখে ট্যাপ লাগিয়ে রাখতে হয় বাচাল।

.

জাবিন: দেখ ভাইয়া একদম আমাকে বাচাল বলবি না। 

.

আদ্রিয়ান: হ্যা এখন বাচালকেও অন্য কিছু বলতে হবে! 

.

জাবিন: আম্মু.. কিছু বলছোনা কেন? 

.

আদ্রিয়ান: আম্মু কী বলবে চুপচাপ বস!

.

জাবিন মুখ বাকিয়ে বসে পড়ল আমি এতক্ষন মজা নিয়ে এদের ঝগড়া দেখছিলাম।

.

এরপর সবাই একসাথে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলাম। খাওয়ার টেবিলে এবার মিস্টার আদ্রিয়ান এক্কেবারে আমার অপজিট টেবিলে বসেছে! সবাই নানারকম কথা বলছে আর আমি চুপচাপ শুনছি আর খাচ্ছি, এরমধ্যেই দুবার আদ্রিয়ানের সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গেছে। আমাকেই দেখছে নাকি?

.

মানিক আঙ্কেল: কামরুল আমার ছেলেটাকে বোঝা তো যেন আমার  বিজনেস টা এবার একটু দেখে আমি একটু অবসর পাই।

.

আব্বু: ছেলেটা নিজে কিছু করতে চাইছে করতে দে। এতদিন দেখেছিস আর কটা দিন দেখ, ও দেখবে বলেছেতো। কয়েকটা দিন সময় দে ওকে!

.

আদ্রিয়ান: এক্সাক্টলি! বোঝাও তো আঙ্কেল আব্বুকে?

.

আন্টি: হ্যা ছেলেটাকে আর প্রেসার দিওনাতো! ওকে ওর মত থাকতে দাও!

.

এরপর সবাই চুপচাপ খেতে থাকলাম। 

.

 হঠাৎ আমি কিছু একটা ফিল করলাম আমার পায়ে হালকা সুরসুরি লাগছে, যা ধীরে ধীরে গারো হচ্ছে। এমন কেন হচ্ছে? আমার সামনে তো আদ্রিয়ান বসে আছে, তারমানে? 

.

আমি চমকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম! দেখলাম ও একমনে খাচ্ছে, জেনো কিছুই জানেনা ! একে তো ভালো ভেবেছিলাম! ভেবেছিলাম এ একটু খাটাশ হলেও সভাব ভালো, কিন্তু এ ব্যাটা তো মিচকে শয়তান! দ্বারা দেখাচ্ছি মজা।

.

পায়ে সুরসুরিটা ফিল করলামনা বুঝলাম থেমে গেছে। এবার আমি খুব জোরেই ওর পায়ে একটা পাড়া দিলাম ও আহ বলে খাওয়া ছেড়ে উটে দাড়ালো! সবাই কী হয়েছে বলে এগিয়ে গেল। 

.

আপি: আদ্রিয়ান! কী হল?

.

আম্মু: হ্যা। এভাবে চেচালে কেন? সমস্যা?

আদ্রিয়ান রাগী চোখে আমার দিকে তাকালো, তাতে আমার কী? হুহ উচিত শিক্ষা দিয়েছি একটা। ভেবেই মনে মনে ভীষন খুশি হলাম।

.

তখনি আমার পায়র কাছ থেকে একটা বেড়াল 'মেয়াও' 'মেয়াও' করতে করতে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। ও মাই আল্লাহ তারমানে ওটা বিড়াল ছিলো? এসব এই বেড়ালটার কাজ? আদ্রিয়ান কিছু করেনি!  

.

ভেবেই ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! যেনো এখনি খেয়ে ফেলবে। আর আমি যথারীতি ভাবছি এবার আমার কি হবে….


💗Infinite Love💗

Part: 14

.

ভেবেই ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! যেনো এখনি খেয়ে ফেলবে। আর আমি যথারীতি ভাবছি এবার আমার কী হবে?

আমার দিকে রেগে তাকিয়ে বলল

.

আদ্রিয়ান: নাহ কিছুনা। ওই বেড়ালটা আচড় কেটেছে। It's alright..তোমরা খাও! 

.

কীহ আমি বেড়াল? শয়তান ছেলে আমাকে বেড়াল বানিয়ে দিল। বেশ করেছি পাড়া মেরেছি! কিন্তু আমার পাড়ায় এত ব্যাথা পেল? নাকি অন্য কোন কেস আছে? যাই হোক এই ছেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এর থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে। না জানি অাবার কী করে!

.

খাওয়া শেষে আমি শুধু আপির সাথে সাথে সাথে ঘুরছি আর আদ্রিয়ান কে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি। কিন্তু ঐ মহাশয় তো দিব্বি আড্ডা মারছে, তবুও সাবধানের মার নেই। 

.

আপি: কী ব্যাপার? তুমি আমার পেছন পেছন ঘুরছো কেন? কী চাই?

.

আমি: কীছু চাই না তো কী আবার চাইব?

.

তখনি আম্মুর ডাক পড়ল 

.

অাম্মু: অনিমা? জাবিন কে নিয়ে তোর রুমে যাহ! 

.

এই মুহুর্তে আমার আম্মুকে একটা কিস করতে ইচ্ছে করছে। কী সুন্দর আমার বাচার রাস্তাটা বলে দিল! তাড়াতাড়ি ড্রয়িং রুমে গিয়ে জাবিনকে বললাম।

.

আমি: জাবিন চলো রুমে চলো, গল্প করি।

.

এটা শুনে আদ্রিয়ান আমার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার আড্ডায় মনোযোগ দিল।

.

জাবিন: ওকেহ চল। 

.

এরপর উপরে গিয়ে খাটে বসলাম দুজন। জাবিন বলল

.

জাবিন: আপু তুমিতো মেডিকেলে আছো। Right?

.

আমি: হুম। তুমি ইন্টার ফার্সট ইয়ার তাইতো।

.

জাবিন: একদম! সত্যি যতটা শুনেছি তার চেয়েও বেশি সুন্দর তুমি! 

.

আমি ভ্রু কুচকে বললাম 

.

আমি: কার কাছে শুনেছো?

.

জাবিন: ইয়ে.. আব্বু হ্যা আব্বুই তো! আব্বুই বলেছে! ( আমতা আমতা করে)

.

আমি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। সেটা দেখে ও বলল।

.

জাবিন: বাদ দাও তো এটা বল তুমি ভাইয়াকে প্রথম কোথায় দেখেছো? 

.

 আমি: DMC তে, কেনো?

.

জাবিন: নাহ এমনি। ভাইয়া কে কেমন লাগে তোমার?

.

এগুলো কী জিজ্ঞেস করছে এই মেয়ে? ওর ওই খাটাশ ভাইকে নিয়ে পরল কেন?

.

আমি: ভভালোই! ( কচু! শয়তান খবিশ একটা)

.

জাবিন: জানি একটু অন্যরকম। আসলে ওর মনে কী চলে ও নিজে না বললে কেউ বুঝতে পারেনা। 

.

আমি: ওহ। 

.

জাবিন: আর ভাইয়া ছোট বেলা থেকেই ভীষন ট্যালেন্টেড! কলেজে তো সবার ক্রাশ ছিলো। ইউ কে তে গিয়ে কত মেয়েকে পাগল করেছে আল্লাহ নোস্।

.

এই মেয়ে নিজের ভাইয়ের পেচাল পিটে যাচ্ছে আর আমি অসহায়ের মত বসে বসে হু হা করছি। কজ আপাদত আমার কাছে আর কোন অপশন নেই।

.

হঠাৎ দরজায় নক পড়ল, আমি গিয়ে খুলতেই  দেখলাম আদ্রিয়ান, ওকে দেখেই বুকটা ধক করে উঠল, ও আমার রুমে কেনো এসেছে? কী চাই কী ওর?

.

আদ্রিয়ান জাবিনকে বলল

.

আদ্রিয়ান: তোকে আম্মু ডাকছে নিচে যাহ।

.

জাবিন : এখনি তো এলাম।

.

আদ্রিয়ান: যেতে  বলছি যাহ।

.

জাবিন চলে গেল।

ওহ নো জাবিন চলে গেলেতো আমি একা হয়ে যাবো! তাই আমিও জাবিনের পিছে পিছে দৌড় দিতে যাবো উনি আমার হাত ধরলেন।

.

আদ্রিয়ান: ওকে ডেকেছে, তোমাকে নাহ।

.

আমি: আমার কাজ আছে নিচে! 

.

আদ্রিয়ান: হুম যাবে  আগে অামার সাথে কথা বলে যাও!

.

আমি: কী কথা?

.

আদ্রিয়ান: তখন ওভাবে পায়ে পাড়া মারলে কেন?

.

আমি: আসলে.. ( কী বলব বুঝতে পারছিনা)

.

আদ্রিয়ান এবার হেসে দিল, আর ওর হাসি দেখে আমার কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেল। উফ এত সুন্দর করে হাসে কেনো ছেলেটা?

.

আদ্রিয়ান: তুমি ভেবেছিল আমি তোমার পায়ে.. seriously? (হাসতে হাসতে)

.

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম 

.

আমি: আমি কীকরে জানবো ওটা বেড়াল ছিল?

.

ও হঠাৎ করেই আমার কোমর ধরে ওর কাছে নিয়ে এলো। আমার হার্ট এবার ফুল স্পিডে বিট করছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে অাছি ওর দিকে? আমার দুই হাত ওর বুকে, ও আমার ঘারের কাছে মুখটা এনে বলল

.

আদ্রিয়ান: আমি কখনো লুকিয়ে কিছু করিনা, যা করার সামনা সামনিই করি। 

.

আমিতো ফ্রিজ হয়ে আছি নড়ার সামান্য ক্ষমতাটাও আমার নেই। ও আরেক হাত দিয়ে আমার কপালের চুলগুলো  সরিয়ে দিল, ও মুখটা একটু এগোতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কিছুক্ষন পর ফিল করলাম যে ও আমার কোমর ছেড়ে দিল তাই চোখ খুলে তাকালাম তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।

.

যাহ বাবা ভাবলাম কী হল কী? ভেবেছিলাম ওর পায়ে পাড়া মেরেছি বলে আমার ব্যান্ড বাজাবে কিন্তু এ তো উল্টে... আচ্ছা একটা ছেলে আমার এত কাছে এলো কিন্তু আমি একবারো বাধা দিলাম না? উল্টে নিজের চোখ বন্ধ করে নিলাম? কী হয়েছিল আমার?

.

তখনি আপি আসল

.

আপি: কিরে কী ভাবছিস?

.

আমি: কিছুনা এমনিই!

আপি: নিচে চল আদ্রিয়ানরা চলে যাচ্ছে।

.

শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু হল সেটা জানিনা। মুড অফ করেই নিচে নামলাম। দেখলাম আঙ্কেল আন্টি বিদায় নিচ্ছে সবার কাছে, আর আদ্রিয়ান আর জাবিন একসাথে ফোনে কিছু একটা মনোযোগ সহকারে দেখছে!

.

আমাকে দেখে মানিক আঙ্কেল ডাকলেন, আমি ওনার কাছে গেলাম, তারপর মাথায় হাত রেখে বলল

.

আঙ্কেল: আসছি মামনী। নিজের যত্ন নিও আর সময় করে বাড়ি এসো কিন্তু!

.

আন্টি: হ্যাঁ ! না এলে খুব রাগ করব কিন্তু! 

.

আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম

.

আমি: আচ্ছা আসবো। কিন্তু আজ থেকে  যেতে পারতে?

.

আম্মু: হ্যা সেই আপা থাকতে পারতে! 

.

আন্টি: না অন্য একদিন থাকবো, আজ কাছ আছে!

.

আব্বু: এমনিতেতো আসেনিনা, আবার কবে আসবেন ঠিক আছে?

.

আঙ্কেল: আরে এতদিনের কথা আর এখনকার কথা এক হল নাকি? এখন তো প্রায়ই আসতে হবে, অন্তত শুভ কাজটা হবার আগ পর্যন্ত! 

.

শুভকাজ? কীসের শুভ কাজ? কীসের কথা বলছে এরা? তখনি আন্টি বলল

.

আন্টি:  উফ এতো কথা কেনো বলোতো? যাবেতো নাকি?

.

জাবিন এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল 

.

জাবিন: বাই আপু.. টেইক কেয়ার, তাড়াতাড়ি দেখা হবে।

.

আমি: হুম ভালো থেকো!

.

এরপর ওরা বেড়িয়ে গেল আর আমি দৌড় আমার রুমের বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম.. নিচে তাকিয়ে দেখলাম আঙ্কেল আন্টি আর জাবিন একটা গাড়িতে উঠে চলে গেল! 

.

আর আদ্রিয়ান আব্বুকে জরিয়ে ধরল, তারপর আম্মুকে এক হাতে হাগ করে। আরেকটি গাড়ির দরজা খুলে আমার রুমের বেলকনিতে তাকালো, দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল, আমি চেষ্টা করেও চোখ সরাতে পারলাম না। আদ্রিয়ান একটা মুচকি হাসি দিয়ে সানগ্লাসটা পরে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসল, তারপর আরেক দফা তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেল। একা একটা গাড়িতে গেল? যাগগে আমার কী? আমি ততক্ষণ গাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম যতক্ষন গাড়িটা দেখা যাচ্ছিলো!

.

হঠাৎই কেউ কুনুই দিয়ে অমায় খোচা মেরে বলল 

"ও চলে গেছে"

.

তাকিয়ে দেখলাম আপি দুই হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে! আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

.

আমি: কে চলে গেছে? ( আপির হাত থেকে কফি নিয়ে)

.

আপি: কেনো আদ্রিয়ান

.

 আমি: তাতে আমার কী? ( কফিতে চুমুক দিয়ে)

.

আপি: নাহ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেতো তাই মনে করিয়ে দিলাম যে ও চলে গেছে আর তাকিয়ে থাকতে হবেনা।

.

আমি: বয়েই গেছে। বাই দা ওয়ে তুমি কখন এলে?

.

আপি: যখন তুমি হা করে অন্য কাউকে দেখছিলে!

.

আমি: উফ আপি অফ যাও তো!

.

আপি: হুম এখন তো আমাকেই চুপ করাবা।

.

 আমি: আচ্ছা আপি? ওরা আবার কবে আসবে?

.

আপি: ওরা.. নাকি শুধু ও কোনটা? ( চোখ মেরে)

আমি: আপি.. টু মাচ্!

.

আপি: ওরা কবে আসবে জানিনা বাট আমরা খুব তাড়াতাড়ি যাচ্ছি ওদের বাড়ি।

.

আমি: কেনো?

.

আপি: সামনের শুক্রবার আদ্রিয়ানের বার্থডে। 

.

আমি: কীহ! এই শুক্রবার? আদ্রিয়ানের বার্থডে? সিরিয়াসলি?

.

আপি: ইয়েস বেবি, দেশে আসার পর প্রথম বার্থডে তাই খুব বড় করে সেলিব্রেট করবে! আর তাছাড়া..

.

আমি: তাছাড়া?

.

আপি: ওইদিন ওর লাইফের একটা গুরত্বপূর্ণ এনাউসমেন্ট করা হবে! 

.

আমি: এনাউসমেন্ট?

.

আপি: জ্বি। শুধু এনাউসমেন্ট না কাজটাও হবে যতটুকু জানি।

.

আমি: কী কাজ?

.

আপি: সবিই জানতে পারবে সুইটহার্ট! আগে আগে দেখো হোতাহ্যা কেয়া।

.

বলেই আপি রুমে চলে গেলো।

.

আজব তো আদ্রিয়ানের বার্থডে এর দিন কীসের এনাউসমেন্ট হবে? আর কী কাজই বা সারবে? যাহ খুশি করুক তাতে আমার কী? আমি কফি খাই।



Infinite Love💗

Part: 15

.

আজব তো আদ্রিয়ানের বার্থডে এর দিন কীসের এনাউসমেন্ট হবে? আর কী কাজই বা সারবে? যাহ খুশি করুক তাতে আমার কী? আমি কফি খাই।

.

রাতে সোফায় বসে বসে ল্যাপটপে মুভি দেখছি! তখনি আপি, কাব্য, অর্ণব ভাইয়া, সজীব ভাইয়া পাশে এসে বসল। আপি চানাচুরের ডিব্বাটা এনে আমার দিকে এগিয়ে দিলো, তারপর সবাই চানাচুর খেতে খেতে  মুভি দেখছি খেয়াল করলাম সবাই আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আমি ভ্রু কুচকে বললাম

.

আমি: কী?

.

সবাই কিছু না বলে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি অবাক হয়ে বললাম

.

আমি: আজব! কী হয়েছে।

.

এবার সবাই জোরে জোরে হাসতে লাগল, আমি বিরক্ত হয়ে বললাম..

.

আমি: মিরাক্কেল সিজন এগারো শুরু হয়ে গেছে নাকি? সবাই এত হাসছ কেনো?

.

আমার কথায় সবাই আরো জোরে হাসতে লাগল।

.

আমি: আজব এত হাসির কী হল? আমাকেও বল আমিও হাসি!

.

এবার আপি হাসতে হাসতে বলল

.

আপি: লাইক সিরিয়াসলি অনি? তুই বুঝতেই পারিসনি যে AD ই আদ্রিয়ান।

.

আমি: আজব আমিকি আগে দেখেছিলাম নাকি? 

.

অর্ণব ভাইয়া: তোর সামনে আদ্রিয়ান ভাইয়ার যে ডেসক্রিপশন দেয়া হয়েছিল, আর ওনার সম্পর্কে যে পরিমাণ আলোচনা করা হয়েছে যে কেউ বুঝতে পারবে! 

.

আমি: হুহ ওমন ডেসক্রিপশনের ছেলে কী আর নেই নাকি?

.

অর্ণব ভাইয়া: খুবই রেয়ার!

.

সজীব ভাইয়া: বাড়িতে আসার পর তো তোর বোঝা উচিত ছিল।

.

আমি: হয়েছে থামোতো!

.

আপি: তারপর আবার ব্যাট দিয়ে মারতে যাচ্ছিলে ছেলেটাকে।

.

সবাই আরেক দফা হেসে নিল এই কথায়, আর আমি গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। 

.

কাব্য: সিরিয়াসলি আপু? তুই যদি সত্যিই ভাইয়াকে আমার ব্যাট দিয়ে বাড়ি মারতি তাহলে কী হতো?

.

আমি: কী আর হতো ব্যাথা পেতো!

.

কাব্য: আরেহ আমি আমার ব্যাটটার কথা বলতাছি! বেচারা ব্যাটটা অকালে শহীদ হতো।

.

সবাই হেসে দিল।

.

আপি: এটা ঠিক বলছে।

কাব্য: আমি ঠিকি বলি।

.

আমি: ওই থামবি, ভাইয়াকা চামচা!

.

কাব্য: এটা হলো সম্পর্কের টান!

.

আমি: কীসের সম্পর্ক? হুম?

.

কাব্য: আরে জি..

.

তখনি আপি কাব্যকে বলতে না দিয়ে বলল..

.

আপি: ভাই! ভাই ভাইয়ের সম্পর্ক তাইনা কাব্য?

.

কাব্য: হু হ্যা সেটাই!

.

আমি একবার ওদের দিকে সূক্ষভাবে তাকিয়ে আবার মুভিতে মনোযোগ দিলাম।

.

আজ মেডিকেল থেকে এসেই আপিকে জরিয়ে ধরলাম।

.

আপি: কী ব্যাপার? এত সোহাগ? কিছু চাই?

.

আমি: তুমি এভাবে বলতে পারলে? আমার কিছু দরকার হলেই কী আমি তোমায় সোহাগ দেখাই?

.

আপি: হইছে ড্রামা বন্ধ কর আর পয়েন্টে আয়!

.

আমি: আসলে আপি! কালকেতো নবীন বরণ অনুষ্ঠান। প্লিজ আমাকে একটা শাড়ি সিলেক্ট করে দিও আর পড়িয়ে দিও প্লিজ প্লিজ প্লিজ!

.

আপি: ওহ এই ব্যাপার, Don't worry, I will handle it!

.

আমি: Thank you so... much. love you..

.

আপি: হইছে যাহ ফ্রেশ হোয়ে লান্চ করে নে!

.

লান্চ শেষে রুমে এসে দেখি আপি কারো সাথে ফোনে কথা বলছে জাস্ট এটুকুই শুনতে পেলাম আপি বলল

.

আপি: আচ্ছা যেটা পাঠাবে সেটাই পড়াবো।

.

আমি: কে কী পাঠাবে? আর কী পড়াবে?

.

আপি আমাকে দেখে ফোন কেটে বলল 

.

আপি: ও কিছুনা! কাল সন্ধ্যের পরে প্রোগ্রাম তো? 

.

আমি: হুম।

.

আপি: দুপুরের শাড়ি এসে যাবে!

.

আমি: এসে যাবে?

.

আপি: I mean সিলেক্ট হয়ে যাবে!

.

আমি: ওহ ওকে!

.

পরেরদিন দুপুরে খাটে বসে ফোন টিপছি! আপি এসে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল আমার হাতে!

.

আমি: কী এটা?

.

আপি: খুলে দেখো।

.

আমি প্যকেটটা খুলে চমকে গেলাম, অসম্ভব সুন্দর একটা নীল শাড়ি, শাড়িটা জরজেট, সুতি বা জামদানি নাহ। কেমন একটা কাপড় যেনো! কাপড় সম্পর্কে আমার ধারনা না থাকায় বুঝতে পারলাম না। শাড়িটাতে সিলভার স্টোনের ডিজাইনার পাড় দেওয়া, অনেক সুন্দর লাগছে!

.

আমি: ওয়াও আপি! কী সুন্দর শাড়িটা is this mine?

.

আপি: ইয়াপ বেইবি। 

.

আমি: কিন্তু এতো এক্সপেনসিভ?

.

আপি: সেটা তোমাকে ভাবতে হবেনা! পছন্দ হয়েছে?

.

আমি: ভীষন! এত ভালো শাড়ি চুজ করেছো.. Thanks a lot..

.

আপি: দিয়ে দেবো!

.

আমি: কী দিয়ে দেবে?

.

আপি: Thanks!

.

আমি: কাকে?

.

আপি: কাউকে না বাদ দাও।

.

আমি: কিন্তু..

.

আপি: কোনো কিন্তু না। চল লান্চ করে তারপর তোমাকে রেডি করে দেই!

.

আমি: হুম চলো!

.

লান্চের টেবিলে সবাই খেতে খেতে নানান কথা বলছি তখন আব্বু বলল

.

আব্বু: মামনি তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো!

.

আমি: বলেন!

.

আম্মু: আসলে তুই কী? i mean..

.

আমি এবার ভ্রু কুচকে বললাম 

.

আমি: কী?

.

আব্বু: মানে তুমিতো এখন বড় হয়েছো! আর এখন তো...

.

আম্মু: হ্যা মানে.. এখন তুমি এডাল্ট তাই।

.

আমি: তাই?

.

আব্বু: আসলে..

.

আমি: আসলে নকলে বাদ দিয়ে একটু ঝেড়ে কাশেন ! এক্সাক্টলি কি বলতে চাইছেন?

.

আব্বু: তোমার কাউকে ভালোলাগে?

.

আমি: হ্যা লাগেতো! আপনাকে লাগে, আম্মুকে লাগে আপিকে লাগে কাব্যকে লাগে, এখানে যারা বসে আছেন সবাইকেই ভালো লাগে!

.

সবাই হেসে দিল আমার কথায়।

.

আম্মু: আরে সেই ভালোলাগা না!

.

আমি: ভলোলাগারো আবার প্রকারভেদ আছে? আচ্ছা বলো কীরকম?

.

আব্বু: মানে তোমার পছন্দের কেউ আছে?

.

আমি: তোমরা কী আমার অপছন্দের নাকি?

.

আব্বু: মানে লাইফ পার্টনার হিসেবে পছন্দের কেউ আছে?

.

আমি তো অবাক! হঠাৎ এসব প্রশ্ন কেনো করছে? আমি আপির দিকে তাকালাম, আপি চোখ সরিয়ে হাসতে লাগলো! আমি অবাক হয়েই বললাম

.

আমি: মানেহ?

.

আম্মু: মানে, কাউকে ভালোলাগে, as a life partner?

.

হায় আল্লাহ এই দিনো দেখা বাকি ছিলো আমার? আমি বিরক্ত হয়ে বললাম।

.

আমি: এখনো না!

.

শুনে মনে হলো ওনারা একটু শান্তি পেল, হুট করে কিছু একটা ভেবে আম্মু বলল

.

আম্মু: আর কোন রিলেশনে আছো? মানে কমিটমেন্ট এন্ড অল।

.

আমিতো অবাকের শেষ ধাপে কী বলছে এরা এসব? পাগল হয়ে গেলো নাতো? আমি এবার অসহায় ভাবে আপির দিকে তাকালাম আপি হাসছে, তারপর সবার দিকে তাকলাম বাকিরাও হাসছে, আমি অসহায় গলায় বললাম।

.

আমি: কী বলছ এসব?

.

আব্বু: না থাকতেই পারে এটাতো দোষের কিছু না তাইনা! থাকলে বলে ফেলনা! আমরাই তো।

.

আমি: না নেই!

.

আম্মু: সত্যিই নেই?

.

এবার আমি রেগে গিয়ে বললাম।

.

আমি: না আমি কোনো রিলেশনে আছি, আর না আমার কাউকে পছন্দ। Now please stop!

.

আমার কথা শুনে ওনারা যেনো সস্তির নিশ্বাস নিলো, তারপর আব্বু বলল

.

 আব্বু: তারমানে আমি যদি তোমার জন্য কাউকে সিলেক্ট করি তো তোমার কোনো প্রবলেম হবে না? কোনো আপত্তি থাকবেনা তাই তো?

.

আমি: প্রবলেম কেনো হবে? আর এখন এসব কথা কেনো বলছেন?

.

আব্বু: Are you sure? যে কোনো আপত্তি হবে না?

.

আমি চরম বিরক্তি নিয়ে বললাম 

.

আমি: নাহ হবে না, কিন্তু এখন এসব কথা কেনো?

.

আব্বু চোখে মুখে ভীষন খুশি দেখতে পেলাম, আব্বু বলল

.

আব্বু: নাহ এমনিই তুমি খাও।

.

আমি খাচ্ছি আর ভাবছি হলোটা কী এদের? হঠাৎ এসব আজগুবি প্রশ্ন কেনো করল? কী চলছে এদের মনে? এইসব টপিক নিয়েতো আগে কোনোদিন কথা হয়নি?




Infinite love💗

Part: 16

.


আমি খাচ্ছি আর ভাবছি হলোটা কী এদের? হঠাৎ এসব আজগুবি প্রশ্ন কেনো করল? কী চলছে এদের মনে? এইসব টপিক নিয়েতো আগে কোনোদিন কথা হয়নি?

.

খাওয়া শেষে ঘন্টা খানেক রেস্ট নেবার পর আপু এলো রেডি করাতে। আপু আমাকে শাড়ি পড়াতে লাগল

.

আমি: আচ্ছা আপু আব্বু আম্মুর কী হয়েছে গো?

.

আপি: ছি! ছি! কী বলছিস? এই বয়সে আবার কী হবে?

.

আমি: আপি.. তুমিওনা! আমি নিচে ওদের বলা কথাগুলোর কথা বলছি!

.

আপি: ও আচ্ছা! মেয়ে বড় হলে বাবা মা এসব নিয়ে একটু ভাবেই।

.

আমি: ও হ্যালো? তুমি কী বাচ্চা নাকি? তুমিতো আমার চেয়েও বড়! তোমাকে নিয়ে তো মামা মামি বা আব্বু আম্মু কেউই এসব বলেনা, আমাকে বলল কেনো? 

.

আপি: আমি যখন তোর বয়সী ছিলাম অমাকেও বলেছে! 

.

আমি: সত্যি?

.

আপি: হুম একদম। কিন্তু তুই যে বললি তোর পছন্দের কেউ নেই, সত্যিই নেই?

.

আমি: আজব থাকলেতো বলতামি!

.

আপি: তুই আদ্রিয়ানকে পছন্দ করিসনা?

.

আমি: হ্যা, আমার ওর পারসোনালিটি ভালোলাগে, কিন্তু কাউকে ভালোলাগা মানেইতো তাকে লাইফ পার্টনার বানানো নয়!

.

আপি: ভালোলাগা থেকেই কিন্তু ভালোবাসা হয়। 

.

আমি: আপিই কী বলছ বলোতো?

.

আপি: ভুল বললাম কিছু?

.

আমি: অবশ্যই। তুমি কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছ।

.

আপি: নো বেবি! আমি যেখানকার কথা সেখানেই রাখছি, আর খুব তাড়াতাড়ি সেটা তুমিও বুঝতে পারবে।

.

আমি: হয়েছে এবার শাড়িতে  কনসিনক্রিয়েট করো!

.

আপি: হুম, সেই ভালো!

.

আপি খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়েছে, আচলটা ভেঙ্গে পড়িয়েছে, আমিই বলেছি এভাবে পড়াতে কারন আমার সব বান্ধবীরা এভাবেই পড়ব

.

এরমধ্যেই আপি একঝাক মেকাপ কিট নিয়ে এলো যা দেখে আমি বললাম 

.

আমি: প্লিজ আপি আমাকে ভুত সাজাতে বসোনা প্লিজ!

.

আপি: একটু সাজাবো, শাড়ি পড়েছিস না সাজলে ভালো লাগবে না! 

.

আমি: জাস্ট হালকা ওকে? যেটুকু না দিলেই না সেটুকুই।

.

আপি: আচ্ছা বাবা ঠিকাছে! এবার বস! কী মেয়েরে বাবা,কোনো মেয়ের যে সাজের প্রতি এতো অনিহা থাকে তোকে না দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করতাম না! 

.

এরপর আপি আমার চুলগুলো চাইনা কাটা দিয়ে সুন্দর করে খোপা করে দিল, আর সামনের কান অবধি কাটা চুলগুলো সাইডে সিথি করে বের করে রাখল, মুখে হালকা ফেসপাউডার, ঠোটে হালকা পিঙ্ক লিপস্টিক, গালে এক্কেবারে হালকা ব্লাসন,চোখে কাজল, চোখের ওপরেচিকন করে আই লাইনার আর হালকা সেডো দিয়ে দিল।

.

আমি: দিবানা দিবানা করে কতকিছু দিলা! মাসকারা বাদ রাখলা কেনো?

.

আপি: তোমার আইলেশ এমনিই খুব ঘন আর বড় বড়, দরকার পরেনা।

.

আমি: হয়েছে? যেতে পারি?

.

আপি: ওয়েট ওয়েট!

.

আমি: আবার কী?

.

আপি একটা বাক্স বের করল  তাতে সিলভার হোয়াইট স্টোনের কানের ঝুমকা, হাতের এক মোট চুরি, আর নীল আর সিলভার এর  কম্বিনেশনে একটা পেন্ডেন্ট, নীলের ওপর সিলভার হোয়াইট স্টোনের একটা সুন্দর ঘরি

.

আমি অবাক হয়ে বললাম 

.

আমি: ওয়াও.. এত্তো কিউট কিউট ওর্নামেন্টস?

.

আপি: পছন্দ হয়েছে?

.

আমি: খুব। কিন্তু এগুলাতো তোমার বা আমার কারোরি না, কোথায় পেলে?

.

আপি: সেটা জেনে তোমার কি কাজ? এসো সব পড়িয়ে দেই!

.

আমি: শাড়িটার ব্যাপারেও কিছু বললেনা! এতো হেয়ালির কী আছে, বুঝিনা!

.

আপি: বুঝতে হবেনা চুপচাপ বসো!

.

এরপর আপি আমাকে একে একে সব পরিয়ে দিল! এরপর আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলাম, নট ব্যাড! 

.

এরপর আপিকে একটা হাগ করে, নিচে গিয়ে সবাইকে বাই বলে চলে গেলাম মেডিকেলে, আর যথারীতি লেইট করেই গেলাম। গিয়ে দেখি ওরা সাইডে দাড়িয়ে আছে! আমি এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে!

.

ঐশি: এই এলেন আমাদের লেইট লতিফ!

.

আমি:ওটা লতিফা হবে! গ্রামার পড়িসনি মুর্খ! লিঙ্গ পড়বি!

.

ইশু: থাম মেরি মা তোকে কিছু বলাই ভূল আমাদের!

.

আমি: তাহলে বলিস কেনো?

.

অর্পি: চুপ কর! তুই সেজেছিস? রিয়েলি?

.

আমি: আপি জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে!

.

ঐশি: অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোকে!

.

অর্পি: একদম নীল পরী! আজকেতো যে কেউ তোকে দেখে ক্রাশ খাবে।

.

আমি: তোদেরকেও কম সুন্দর লাগছে নাকি? কিন্তু তিনজনেই নেভি ব্লু পরেছিস! আমিই এলিয়েনের মত নীল পরলাম।

.

ঐশি: তোকে নীলেই খুব সুন্দর লাগছে!

.

আমি: হইছে থাম! এনিওয়ে রিমু আজ আসতে পারত! প্রোগ্রামের সময় তো যে কেউ আসতে পারে!

.

ঐশি: বলেছিলাম, বাট আসেনি! কাজ আছে নাকি!

.

অর্পি: আসলে ভালোই হতো!

.

তারপর সবাই মিলে হাটতে লাগলাম এগোতে লাগলাম, হঠাৎই আমার মাথায় কেউ টোকা মারল! পেছনে ফিরে দেখি আদিব ভাইয়া! 

.

আমি: আরেহ ভাইয়া আপনি এখানে?

.

আদিব ভাইয়া: শুধু আমি না আমরা সবাই এসছি!

.

শুনেই চমকে গেলাম। সবাই মানে আদ্রিয়ান ও এসছে?

.

আমি: প্রোগ্রাম দেখতে?

.

আদিব ভাইয়া: হুম। তারওপর আমাদের ইনভাইট করা হয়েছে, স্পেশিয়ালি আদ্রিয়ানকে, ওহ আদ্রিয়ান বললেতো চিনবে না AD কে!

.

এই নামটা আগে বললে তো আর এতো কিছু হতো নারে ভাই! বলল কখন যখন আমি সবটাই জানি।

.

আমি: ওহ।

.

আদিব ভাইয়া: খুব সুন্দর লাগছে আজকে! তোমাদের সবাইকেই

.

আমি: কেনো? প্রতিদিন লাগেনা?

.

আদিব ভাইয়া: লাগে তবে আজকে বেশি সুন্দর লাগছে।

.

আমি: হাহা তাই?

.

আদিব ভাইয়া: হুম চলো এগোই।

.

এরপর আমরা এগোতেই দেখলাম আদ্রিয়ান আর ওর বন্ধুরা দাড়িয়ে কথা বলছে!

.

 সবাই আমাকে দেখে নানা রকম কথা বললেও আদ্রিয়ান একবার তাকিয়ে আমার দিকে দ্বিতীয়বার তাকায়নি! আজব! আমাকে কী এতটাই খারাপ লাগছে দেখতে যে দ্বিতীয়বার তাকাতেই ইচ্ছে করলনা?

.

আদ্রিয়ান: আদিব তোরা থাক আমি আসছি!

.

আমিতো অবাক, ইগনোর করল আমাকে? কী করেছি আমি? ধ্যাত যা খুশি করুক আমার কী?

.

বেশ কিছুক্ষন পর দেখলাম তিন চারটা ছেলেকে  ধরাধরি করে কারা যেনো নিয়ে যাচ্ছে! আমি অবাক হয়ে বললাম।

.

আমি: এদের আবার কী হলো?

.

হঠাৎই আদিব ভাইয়া বলল

.

আদিব ভাইয়া: ওহ সিট!

.

বলেই দৌড়ে চলে গেলো! পিছন পিছন ওনার বন্ধুরাও গেলো! আমরা অবাক হয়েই তাকিয়ে আছি ব্যাপারটা কী?

.

ঐশি: কেসটা কী হল?

.

ইশু: সেটাইতো! এভাবে ছুটলো কেনো সব?

.

আমি: যা খুশী হোক চলতো।

.

তারপর আমরা প্রোগ্রাম দেখতে বসলাম, কিন্তু ওনাদের দেখতে পেলাম না, বেশ কিছুক্ষন পরে আদ্রিয়ানকে স্টেজে ডাকলো স্পিচ দেবার জন্য! আদ্রিয়ান কোনো রকমে স্পিচ দিয়ে চলে গেলো, কিন্তু তবুও স্পিচটা সুন্দর ছিলো

.

অনেকক্ষন প্রোগ্রাম দেখে ভাবলাম যাই একটু হেটে আসি, আমি আবার একজায়গায় বেশিক্ষন বসতে পারিনা। হাটাহাটি করছি এমন সময় আদ্রিয়ান এসে আমার হাত ধরল হাত ধরে টানতে লাগল! আমি বারবার জিজ্ঞেস করছি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? কিন্তু উনি কিছুই বললেন না নিজের মত করে নিয়ে যাচ্ছে আমায়!

.

আমি: আদ্রিয়ান কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়ুন!

.

কিন্তু উনি কোন উত্তর না দিয়ে একটা রুমে  এনে দরজাটা আওয়াজ করে লক করে দিল! আমার কলিজাটা কেপে উঠল! আচ্ছা? আমিকি কোন ভুল করেছি? মানে সিনেমাতে যেমন দেখি হিরোয়িন রা কোন ভুল করলে হিরোরা এভাবেই নিয়ে এসে শাস্তি দেয়! হিরোরা তো কিস করে দেয় উনিও  কি? ছি! ছি! কী ভাবছি হিরোরাতো হিরোয়িনদের ভালোবাসে কিন্তু আদ্রিয়ানতো আর আমায় ভালোটালো বাসেনা, আমার তো মনে হয় পছন্দই করেনা আমায়। তাহলে?

.

দেখলাম উনি এগিয়ে আসছেন আমার দিকে, আমার পেছোনোর জায়গা নেই কারন পেছনে দেয়াল, আমি দেয়ালের সাথেই লেগে আছি

.

আমি: অআপনি এভাবে এগগিয়ে আসছেন কেনো? আআর আমাখে এখাননে কেনো আনলেন?

.

আদ্রিয়ান কোন উত্তর না দিয়ে আমার খুব কাছে চলে আসল

.

আমার তো বুক কাপছে ভয়ে! কী করতে চাইছে এ? সত্যিই কি আমাকে.. না না ওসব কেনো করতে যাবে, কিন্তু এভাবে আসছে কেনো?

.

আদ্রিয়ান একদম কাছে এসে আমার কাধের শাড়ির আচলের দিকে হাত বারাতো লাগল, আমিতো পুরো জমে যাচ্ছি ভয়ে, বাধা দেবার শক্তিও পাচ্ছিনা আর কিছু বলতেও পারছিনা! উনিকি আমার সাথে? এসব ভাবতে ভাবতেই উনি আমার আচলটা ধরলেন, আর আমি খিচে চোখ বন্ধ করে নিলাম।


💗Infinite Love💗

Part: 17

.

আদ্রিয়ান একদম কাছে এসে আমার কাধের শাড়ির আচলের দিকে হাত বারাতো লাগল, আমিতো পুরো জমে যাচ্ছি ভয়ে, বাধা দেবার শক্তিও পাচ্ছিনা আর কিছু বলতেও পারছিনা! উনিকি আমার সাথে? এসব ভাবতে ভাবতেই উনি আমার আচলটা ধরলেন, আর আমি খিচে চোখ বন্ধ করে নিলাম।

আমার এখন কেদে দেবার মত অবস্হা, কারণ আমি আদ্রিয়ানের কাছ থেকে এরকমটা আশা করিনি! কিন্তু আমিতো ওকে আটকাতেও পারছিনা কেনো জানিনা সেই শক্তিটাই পাচ্ছিনা আমি, কিন্তু ও কেনো করছে অামার সাথে এরকম? চোখ বন্ধ থাকা অবস্হাতেই এগুলো ভাবছিলাম।

.

তারপর আদ্রিয়ান সেটাই করল যেটা আমি ভাবতেও পারিনি, আদ্রিয়ান হুট করে আমার আচলের সেফটিপিন খুলে ফেলল! না ব্লাউজের সাথে যেই সেফটিপিন লাগানো আছে সেটা না, আচলটা ভেঙ্গে যেই সেফটিপিন লাগিয়েছিলাম সেটাই খুলেছে ও! তারপর আমার আচলটা আলতো হাতে আমার হাতের ওপর ছড়িয়ে দিল, তারপর আমার কোমর ধরে ওর কাছে নিয়ে এলো, আমিতো অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে ওকে দেখছি। ও আমার  চুলের চাইনা কাটাটা এক টানে খুলে ফেলল, তারপর চুলগুলো আমার পিঠে ছড়িয়ে দিল, হাতের আঙ্গুল দিয়ে সামনে দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দিল, এরপর আমার বুকের আচলটা আরো একটু ওপরে উঠিয়ে দিলো যার ফলে আমার গলার খানিকটা নিচে পাশাপাশি 180 ডিগ্রি এঙ্গেলে জোরা দুটো তিল আছে, তিল দুটোর মধ্যকার ডিসটেন্স দুই ইঞ্চির মতো সেই তিল দুটো ঢেকে গেলো! যদিও আচলটা আগেও বেশ উপরেই ছিল কিন্তু তিল দুটো বেড়িয়ে ছিলো!

.

আমি বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আমি খালি ওর কাজ দেখছি! তারপর ও খুব ঠান্ডা গলায় বলল

.

আদ্রিয়ান: আর কখনো যেনো শাড়ির আচল ভেঙ্গে পড়তে না দেখি! আর এত বড় করে পিঠ দিয়ে ব্লাউজ পড়বে না কখনো! এতো স্টাইলিং এর দরকার নেই

.

আমি কী বলব বুঝতে পারছিনা! কথাগুলো শান্ত ভাবে বললেও তাতে চেপে রাখা রাগটা স্পষ্ট! কখন আবার চেপে রাখা বোম ব্লাস্ট হয়, তাই চুপ থাকাই ভালো।

.

আদ্রিয়ান: আর হ্যা! বাইরে কখনো হাই নেকের ড্রেস পড়বে না! পড়লেও এই তিল দুটো যেনো কেউ দেখতে না পায়। 

.

আমি কিছুই বলছিনা ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। ছেলেটাকি সত্যিই পাগল?

.

আদ্রিয়ান: আমি কি সেটা পরে ভেবো। Now come with me...

.

বলেই আমার হাত ধরে প্রোগ্রামের ওখানে নিয়ে গেলো গিয়ে দেখি আদিব ভাইয়ারা আর ঐশি, ইশু, অর্পিও ওখানেই দাড়িয়ে আছে,উনি ওদের সামনেই আমার হাত ধরে দাড়িয়ে রইলেন যেটা ওদের কারো চোখ এড়ায়নি। ওরা মিটমিট করে হাসছে। কিন্তু উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাতটা ধরে দাড়িয়ে আছে।

.

আলোতে আশার পর আমি এবার ওনাকে একবার স্কান করলাম, একটা পান্জাবী পরেছে, অদ্ভুদভাবে ওনার পান্জাবী আর আমার শাড়ির কালারটা এক্কেবারে ম্যাচ করে গেছে! ওনার পান্জাবীটাও নীলের মধ্যে সিলভার হোয়াইট কাজ করা, সিলভার হোয়াইট জিন্স পড়েছে, ঘরিটার কালারো সেইম। তবে চুলগুলো আজ কপালে পরে নেই, বরাবরের মতই অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে! আশেপাশে তাকিয়ে যা বুঝলাম অলমোস্ট 80% মেয়ে ক্রাশ নামক বাশ খেয়ে বসে আছে!

.

আমি: হাতটা ছাড়ুননা। সবাই কী ভাবছে?

.

আদ্রিয়ান: ভাবুক I don't care.

.

আমি: But I do. হাত ছাড়ুন।

.

এবার উনি একটু ঝুকে আসতে করে বললেন 

.

আদ্রিয়ান: আবার ওই রুমে যেতে চাও?

.

আমি অসহায় ভাবে ওনার দিকে তাকিয়ে  একটা ঢোক গিলে মাথা নেড়ে বললাম না।

.

আদ্রিয়ান: তাহলে চুপ থাকো!

.

পুরোটা প্রোগ্রাম উনি আমার হাত ধরে ছিলেন যেনো ছেড়ে দিলেই আমি পালিয়ে যাবো! যেখানে গেছে সেখানেই আমাকে নিয়ে গেছে হাত ধরে, আমার আর ওনার বন্ধুরা  যথারীতি মুচকি হাসছে। আর আশেপাশের অনেকেই অন্যরকম ভাবে তাকিয়েছে। তবে আমার মজা লেগেছে ওই মেয়েগুলোর ফেস রিয়াকশন দেখে যারা ওনার ওপর বাশ থুরি ক্রাশ খেয়েছে!

.

আমি: অনেক রাত হয়েছে এবার আমরা যাবো।

.

ঐশি: হ্যা ভাইয়া! এবার যেতে হবে।

.

আদ্রিয়ান: আদিব! তুই ওদের তিনজনকে ড্রপ করে দে।

.

আমি: ওকে তোরা তিনজন আদিব ভাইয়ার সাথে যা আমিও যাই নইলে গাড়ি পাবোনা।

.

কিন্তু আদ্রিয়ান আমার হাত ছাড়ছেনা আমি একটু করুন সরে বললাম

.

আমি: এবারতো ছাড়ুন প্লিজ!

.

আদ্রিয়ান: তোমাকে আমি ড্রপ করে দেবো।

.

আমি: ওহ! কীহ? 

.

আদ্রিয়ান: জ্বি। 

.

আমি: কিন্তু..

.

আদ্রিয়ান: চলো! আদিব ওদের সাবধানে পৌছে দিস।

.

বলেই আমার কোন কথা না শুনে আমার হাত ধরেই এনে গাড়ির দরজা খুলে দীর্ঘ দুই ঘন্টা পর হাতটা ছেড়ে বলল

.

আদ্রিয়ান: Sit

.

আমিও লক্ষী মেয়ের মত গাড়িতে বসে পড়লাম, উনিও বসে আমি সিটবেল্ট বাধতে যাবো তারআগে নিজেই বেধে দিলেন তারপর গাড়ি স্টার্ট করে চালাতে লাগলো! দুজনেই চুপচাপ বসে আছি! খানিক্ষণ পর উনি একটা গান প্লে করল। " পেহলা নেশা"। আমি গানটা শুনে ওনার দিকে তাকালাম উনিও তাকালেন আমার দিকে চোখাচোখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে বাইরে তাকালাম, উনিও ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো। পুরটা রাস্তা কেউ কারো সাথে কথা বলিনি চুপচাপ বসে ছিলাম, তবে আড়চোখে দুজন দুজনকে দেখেছি! চোখাচোখি হলেই চোখ সরিয়ে নিয়েছি।

বাড়িতে গেইটে আসার পর উনি নিজেই গাড়ির দরজা খুলে আমাকে নামতে বলল, আমি নেমে ভদ্রতার খাতিরে বললাম

.

আমি: বাড়িতে আসুন না।

.

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল 

.

আদ্রিয়ান: আরেকদিন! এন্ড টেইক কেয়ার।

.

বলেই গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে চলে গলো! আমি কিছুক্ষন যাওয়ার দিকে থাকিয়ে থেকে বাড়িতে ঢুকলাম।

.

বাড়িতে ঢুকে বসে আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি টিপ অফ বান্দর, মানে আপি, কাব্য, সজীব ভাইয়া অর্নব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি মুচকি হাসছে! আমি ভ্রু কুচকে বললাম 

.

আমি: এখন আবার হাসছো কেনো তোমরা?

.

সজীব ভাইয়া: এমনি! এত রাতে কিভাবে এলি? একা একা? ( মুচকি হেসে)

.

আমি: আব্ কিভাবে আসবো গাড়ি করে!

.

আপি: কী গাড়ি? (দুষ্টু হাসি দিয়ে)

.

আমি কী বলব সেটাই ভাবছি!

.

অর্নব ভাইয়া: কী হলো বল? কেউ দিয়ে গেলো বুঝি?

.

আমি এবার বেশ বুঝতে পারলাম যে আদ্রিয়ানকে ওরা দেখে ফেলেছে তাই এখন লুকোনোর কিছুই নেই!

.

আমি: হ্যাঁ।

.

আপি: কে?

.

আমি: আদ্রিয়ান।

.

সবাই: ওওওওওও

.

আমি: হোয়াট ও? তোমরা সবাই এখানে কী করছ বের হও আমি ফ্রেশ হবো

.

সজীব ভাইয়া: হ্যা এখনতো আমাদেরকেই তাড়বি, মনে লাড্ডু ফুটছে।

.

আমি: এই তুমি না আমার বড় ভাই? লজ্জা করেনা ছোট বোনকে এসব বলতে।

.

অর্ণব ভাইয়া: তুই করবি আমরা বললেই দোষ?

.

আমি: হ্যা যত পারো বলো, আপনা টাইমডভি আয়েগা! 

.

কাব্য: তোর আবার টাইম।

.

আমি: Shut up and get lost 

.

বলেই আপি বাদে সবগুলোকে ধাক্কিয়ে বের করে দরজা লক করে খাটে এসে বসে ওর্নামেন্টস খুলতে লাগলাম।

.

আপি: কী কী হলো আজ? (আমাকে হেল্প করতে করতে)

.

আমি: হলোতো অনেক কিছুই! কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি!

.

আপি: সবটাই বলো। ওয়েট ওয়েট! তোমার শাড়িটাতো আমি অন্যভাবে পড়িয়েছিলাম এভাবে পড়লে কখন? আমিতো প্রথমে এভাবেই হাতা ছেড়ে পড়াতে চেয়েছিলাম প্রথমে। 

.

আমি: আসলে আপি..

.

আপি: কী?

.

তারপরে আপিকে সবটা খুলে বললাম, সবশুনে আপি আজ একটুকুও হাসলো না। বরং কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিক তাকিয়ে থাকল তারপর আমার কপালে একটা কিস করে জোরে জরিয়ে ধরল। আমিতো অবাক যে আপির আবার কী হলো?

.

আমি: কী হলো আপি?

.

আপি: কিছুনা যাও ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পর কালতো ক্লাস নেই?

.

আমি: নাহ।

.

আপি: যাক ভালোই হলো পরশু আবার শুক্রবার।

.

আমি: এমন ভাবে বলছ যেনো পরশু আমার বিয়ে।

.

আপি কিছু না বলে হাসল, আমিও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পরলাম! 

.

আজ শুক্রবার কিন্তু সবার কার্যক্রম আমার অবাক লাগছে, সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছে আর আমি গেলেই সব থেমে যাচ্ছে, আমি খালি ভাবছি যে হচ্ছেটা কী? আপিকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিv লাভ হয়নি!

.

বিকেলে আপি একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো আমার হাতে! আমি সেটা খুলে দেখি কালো ভারি লেহেঙ্গা যার মধ্যে নিখুত হোয়াইট স্টোনের কাজ করা আছে। 

.

আমি: আপি এটা আবার কোথায় পেলে?

.

আপি: সবসময় এতো প্রশ্ন কেনো করিস বলতো? এটা এখন তোর আর এটা পরেই আজ আদ্রিয়ানের বার্থডে পার্টি তে যাবি!

.

আমি: এতো ভারিটা পরে?

.

আপি: ভারি না হলে স্পেশাল লাগবে কীকর‍ে?

.

আমি: হ্যালো বার্থডে আমার না!

.

আপি: চুপচাপ এটা পরে নেও আমি রেডি করে আসছি!

.

বলেই আপি চলে গেলো আর আমি আহাম্মকের মত কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পরে নিলাম লেহেঙ্গাটা। তারপর আপি এবারো কিছু ওর্ণামেন্টস নিয়ে এল। সবগুলোই হোয়াইট স্টোন আর পুতির কম্বিনেশনে তৈরী। গলার নেকলেস, কানের বড় একজোরা দুল, হাতের মোটা চারটা চুরি, একটা ঘরি সবই সাদা  পাথর আর পুতির। আমি কিছু জিজ্ঞেস করব তখনি আপি বলল

.

আপি: প্লিজ এখন আর কিচ্ছু জিজ্ঞাসা করবে না।

.

আমি চুপ হয়ে গেলাম। আপি আমাকে হালকা মেকাপ করে ঠোটে লাল লিপস্টিক, স্মোকি আই করে সাজিয়ে দিল! চুলগুলো সাইডে সিথি করে ছেড়ে দিল কিন্তু মাথার তালুর অংশের কয়েকটা চুল আচলে পেছনে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিল।

.

আমি: এত কেনো সাজাচ্ছো আপি? বার্থডে আমার না!

.

আপি: যারি হোক বার্থডেতো।

.

এরপর আপি আমাকে ওর্নামেন্টস গুলো পড়িয়ে নিচে নিয়ে এলো। এরপর সবাই যেতে নেবো তখনি আব্বু বলল।

.

আব্বু: অনি তুমি সিওর আমি যাকে সিলেক্ট করব তোমার জন্য তাকে মানতে তোমার কোন আপত্তি নেই?

.

আমি: আব্বু এখন এসব কথা কেনো?

.

আম্মু: না বলো।

.

আমি: না নেই এবার চলেনতো!

.

এরপর সবাই গাড়ি করে চলে গেলাম আদ্রিয়ানদের বাড়ি! গাড়ি থেকে নেমে আমি একবার তাকালাম বাড়িটার দিকে, এই প্রথম এলাম এই বাড়িতে, বিশাল বাড়ি এত সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে মনে হচ্ছে যেনো কারো বিয়ে। মানিক আঙ্কেল এসে  আমাদের সবাইকে ভেতরে নিয়ে গেলো, আমি খালি লোক আর ডেকোরেশন দেখছি, শুধু বার্থডে তে এত বড় এরেন্জমেন্ট? যদিও আপি বলেছিল আরকটা কী হবে! কিন্তু কী? হঠাৎই দেখলাম আদ্রিয়ান সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে অবাক করা বিষয় আজকেও ওর সাথে আমার ড্রেসের কালার কম্প্লিটলি মিলে গেছে।

ও একটা হোয়াইট শার্ট, কালো প্যান্ট, কালো ব্লেজার, আর রেড টাই পরেছে, কালো ঘরি পরেছে, চুলগুলো হালকা উচু করে সেট করা। অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে।

.

নিচে এসে আব্বুকে জরিয়ে ধরল ও, তারপর আম্মু, আপি, সবার সাথে নানারকম কথা বলতে লাগল তারপর আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো একবার তাকালো অবধি না? এই ছেলে এমন কেনো আজ অবধি অামার দিকে ভালোভাবে তাকায়ও না, প্রসংসাতো দূরে থাক। মানছি ও খুব সুন্দর তাই বলে এত অহংকার।

.

বেশ কিছুক্ষন পর কেক কাটার সময় হবে তখন মানিক আঙ্কেল মাইক্রোফোন হাতে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলল

.

আঙ্কেল: লেডিস এন্ড জেন্টালম্যান, আপনারা আজ এখানে আমার একমাত্র ছেলে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের বার্থডে পার্টিতে এসেছেন, তারজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। কিন্তু আজকের পার্টির উদ্যেশ্য কেবল বার্থ সেলিব্রেশন নয় বরং আজকের পার্টিতে আমার ছেলে আদ্রিয়ানের জীবনের আরেকটা খুব গুরত্বপূর্ন দিন।

.

সবাঈ উৎসুক হয়ে আছে, এমনকি আমিও ভাবছি ব্যাপারটা কী! কী হবে আজ। মানিক আঙ্কেল বললেন 

.

আঙ্কেল: আজ আমার ছেলে আদ্রিয়ানের বার্থডে সেলিব্রেশনের সাথে আজ engagement পার্টিও...আর আমার ছেলে নিজের ইচ্ছতেই নিজের পছন্দ করা মেয়েকেই নিজের life partner করছে

.

সবাই জোরে হাততালি দিয়ে উঠল, আর আদ্রিয়ানকে অভিনন্দন জানাতে লাগল।

.

কিন্তু আমার সবকিছু ফাকা লাগছে, কেনো জানিনা বুকের ভেতর কোথাও একটা কষ্ট হচ্ছে, আমার মনে হচ্ছে আমি কিছু হারিয়ে ফেললাম। কিন্তু কেনো? আমিতো আদ্রিয়ানকে ভালোবাসিনা, না আদ্রিয়ান আমাকে বাসে, তবুও এত কষ্ট কেনো হচ্ছে, হ্যা ওকে আমার ভালোলাগে, কিন্তু সেটা শুধুই ভালোলাগা, তাহলে কেনো নিজেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছে? কেনো? কেনো? কেনো?



Infinite Love💗

Part: 18

.

আমার এখন খুব অসস্তি লাগছে, আমি আদ্রিয়ানের দিকে একবার তাকালাম, ও ভীষন খুশি হয়েই সবার সাথে কথা বলছে, হবে নাই বা কেনো? আঙ্কেলতো বলল ও ওর পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করছে, খুশি না হবারতো কোনো কারন নেই! কিন্তু আমার মন খারাপের কারনটা আমার জানা নেই, ভেতর থেকে একটা চাপা কষ্ট লাগছে, খুব অসহ্য লাগছে আমার, যদি গার্লফ্রেন্ড থেকেই থাকে তাহলে এতদিন আমার ওপর এত জোর কেনো খাটালো, এত কেয়ার কেনো?

.

 ধুর কী ভাবছি অামি এগুলা? আর তাছাড়া ওর বিয়ে হলে আমার কী? এমনতোনা যে আমি ওকে ভালোবাসি, খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে তা কিন্তু না, কিন্তু মনটা অশান্ত খুব অশান্ত হোয়ে আছে। কিচ্ছু ভালোলাগছে  না, চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলাম নিজেকে শান্ত করতে।

.

হঠাৎ আপি এসে বলল 

.

আপি: এবার বুঝেছো কীসের কথা বলেছি?

.

আমি: হুম বুঝলাম।

.

আপি: মন খারাপ? এভাবে কথা বলছো কেনো?

.

আমি: মন খারাপ কেনো হবে? 

.

আপি: সেটাতো তুমিই ভালো জানো।

.

আমি: আচ্ছা আপি, মেয়েটাকি দেখেছো তুমি? খুব সুন্দর?

.

আপি: হুম দেখেছিতো, খুব সুন্দর।

.

আমি: ওদের দুজনকে একসাথে খুব মানায় তাইনা?

.

আপি: খুব মানায়। পুরো রাজজোটক।

.

আমি: ওহ।

.

ওখান থেকে একটা নিরিবিলি জায়গায় চলে এলাম, কিচ্ছু ভালোলাগছেনা। অসহ্য! আমার কেনো এমন লাগছে সেটাই বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ আদিব ভাইয়া এসে দাড়ালো আমার পাশে!

.

আদিব ভাইয়া: কখন এলে?

.

আমি: কিছুক্ষন।

.

আদিব ভাইয়া: এনাউসমেন্ট শুনেছো?

.

আমি: হুম।

.

আদিব ভাইয়া: তোমার কী mood off?

.

আমি: না তা কেনো হবে।

.

আদিব ভাইয়া: তাহলে চল আদ্রিয়ানকে কনগ্রাচুলেট করে এসো!

.

আমি: না ভাইয়া আমি..

.

আদিব ভাইয়া : আরেহ চলোতো।

.

বলেই আমার কোনো কথা না শুনে ভাইয়া আমাকে নিয়ে গেল আদ্রিয়ানের কাছে, আদ্রিয়ান কথা বলছিল গেস্ট দের সাথে। আমার দিকে একবার তাকিয়ে আদিব ভাইয়াকে বলল 

.

আদ্রিয়ান: কিছু বলবি? ( ফোন টিপটে টিপতে)

.

আদিব: কীহল অনিমা বলো!

.

নিজেকে সামলে কোনো রকমে বললাম

.

আমি: কনগ্রাচুলেশন আদ্রিয়ান ভাইয়া!

.

আদ্রিয়ান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রু কুচকে একবার আমার দিকে তাকালো তারপর আদিব ভাইয়ার দিকে তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল

.

আদ্রিয়ান: লাইক সিরিয়াসলি? তুমি নিজে...

.

তখনি আঙ্কেল আদ্রিয়ানকে ডাকলো, আদিব ভাইয়াও চলে গেলো আদ্রিয়ানের সাথে! আমিতো অবাক এভাবে হাসার মতো কী বললাম। গেইটের দিকে তাকিয়ে আমি চমকে গেলাম, ঐশি,ইশু, অর্পি সবাই এসেছে, এসে তিনজনেই আমাকে জরিয়ে ধরল, আমিতো অবাক হয়ে বললাম 

.

আমি: তোরা এখানে কী করছিস? 

.

ঐশি: তুই যা করতে এসছিস।

.

আমি: মানে?

.

ইশু: মানে বার্থডে প্লাস এনগেইজমেন্ট পার্টিতে এসেছি। 

.

 আমি: কিন্তু আমি যতদূর জানি তোরা কেউ আদ্রিয়ানের রিলেটিভ বা ফ্রেন্ড নস তাহলে?

.

অর্পি: আরেহ এখানে কী শুধু ছেলের রিলেটিভ এসছে? মেয়ের পক্ষেরও লোক আসছে! 

.

আমি: তোরা মেয়ের পরিচিত কেউ?

.

অর্পি: হ্যা আমরাতো ওর বান্ধবী বোন ও বলতে পারিস!

.

আমি: তোদের বান্ধবী আর আমি চিনি না?

.

ঐশি: তুইও চিনিস!

.

আমি: আমি চিনি? কে সে?

.

 ঐশি: দেখতেই পাবি! By the way you are looking so pretty..

.

আমি: You guys are also...

.

এরপর সবাই কিছুক্ষন গল্প করলাম, ওদের সাথে গল্প করায় একটু ভালোলাগছে, সেই চাপা খারাপ লাগাটা আর নেই!

.

হঠাৎ আঙ্কেল আন্টি ডাকলেন আমাকে 

.

আঙ্কেল: মামনী তোমার সাথে তো কথাই হলোনা, কেমন লাগছে?

.

আমি: ভভালো! 

.

আন্টি: হুম পার্টি এনজয় করো ঠিকাছে?

.

আমি: হুম।

.

হঠাৎ পেছন থেকে একজন এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল "আপু.. কেমন আছো?" তাকিয়ে দেখলাম জাবিন, আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম

.

আমি: ভালো! তুমি?

.

জাবিন: ভালো! ওয়াও তোমাকে আজ যা লাগছেনা ভাইয়াতো পাগল হয়ে গেছে মে বি!

.

আমি: মানে?

.

জাবিন চমকে গিয়ে বলল

.

জাবিন: না মানে,আমি আমার উড বি জিজুর কথা বলছি, তোমার বয়ফ্রেন্ড! 

.

আমি: আমারতো কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই! 

.

জাবিন: কী বলো সত্যিই নেই?

.

আমি: জ্বী না।

.

জাবিন : ওকে তুমি থাকো আমি আসছি, বলেই চলে গেলো!

.

আমি ভাবছি কেক কেনো কাটছেনা সেই কখন বলেছে কাটবে,আমি যেই আপির কাছে যেতে নেবো তখনি আঙ্কেল আদ্রিয়ানকে ডাকলো কেক কাটার জন্য, আদ্রিয়ান গিয়ে ওর বার্থডে কেক কাটলো। আঙ্কেল আন্টিকে কেক খাইয়ে দিলো, কিন্তু অবাক করা বিষয় ওর উড বি কে কে দেখলাম না, অন্তত কেক কাটার সময় তো থাকবে? আমি আপির কাছে গিয়ে বললাম

.

আমি: আপি ওর উডবি কোথায়?

.

আপি: আমার সামনে !

.

আমি: কীহ? কই?

.

আপি: ছিলো কিছুক্ষন আগে এখন আর নেই!

.

আমি: আপি তুমিও না।

.

আপি: তুই দারা আমি আসছি!

.

আপি চলে গেলো, আজব সবাই আমায় ইগনোর করছে কেনো? তখনি মানিক আঙ্কেল মাইক্রোফোনে বলল

.

আঙ্কেল: এবার সময় হোয়ে গেছে সেই শুভ কাজটা সেরে ফেলার তাই বেশি সময় নষ্ট করবোনা। আপনারা সবাই নিশ্চই আমার ছেলের হবু বউ, আমার হবু পুত্রবধুর কে সেটা জানতে উৎসুক হয়ে আছেন?

.

সবাই জানার আগ্রহ প্রকাশ করল, আমারো জানতে মন চাইছে যে মেয়েটা কে! তাই ভীষন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি।

.

আঙ্কেল: সে আর কেউ না আমার সবচেয়ে কাজের বন্ধু, মোঃ কামরুল হাসান কোতোয়াল এর একমাত্র মেয়ে অনিমা কোতোয়াল..

সকলেই হাততালি দিয়ে উঠলো, আমি চমকে তাকালাম, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা, আমার মাথা বন বন করে  ঘুরছে, আমি অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম ও আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল, আমি তাকাতেই ও একটা হাসি দিল। আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, ও চোখ সরিয়ে নিলো,

.

 আমি এবার আপির দিকে তাকালাম, আপি হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে, আব্বুর আম্মুর দিকে তাকাতেই ওনারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।

.

আমি আপির কাছে গিয়ে বললাম

.

আমি: আপি এসব কী হচ্ছে?

.

আপি: যা শুনছো যা দেখছো তাই হচ্ছে!

.

আমি: হোয়াট? আমার এনগেইজমেন্ট? আদ্রিয়ানের সাথে।

.

আপি: সেটাইতো শুনলে

.

আমি: মজা পেয়েছো? আমার এনগেইজমেন্ট? আমি জানতাম না? জানলাম কখন? যখন এনাউসমেন্ট হয়ে গেছে!

.

আপি: আমাকে বলছিস কেনো আমিকি জানি? ফুপাতো তোকে জিজ্ঞেস করেছিল তোর কোনো আপত্তি আছে কি না, তুই বলেছিস নেই।

.

আমি: আজব! আমিকি জানতাম যে এখনি করবে এসব। অন্ত্যত একবার বলবে তো। দাড়াও আব্বুকেই ধরছি।

আপি: আরে অনি শোনতো!

.

আমি গিয়ে আব্বুকে বললাম

.

আমি: আব্বু? কী হচ্ছে এসব?

.

আব্বু: কী হচ্ছে?

.

আমি: আপনি আমার এনগেইজমেন্ট করাচ্ছেন আমিই জানিনা? আমাকে জানানোর প্রোয়োজন মনে করলেন না?

.

আব্বু: আমরা তো জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তোমার কোন পছন্দ বা সম্পর্ক আছে কী না, তুমিই না করেছো।

.

আমি: হ্যা করেছি কিন্তু তাই বলে আমাকে একটিবার জিজ্ঞেস করারো প্রোয়োজন মনে করলেন না?

.

আম্মু: তুমিই তো বললে যে আমরা যাকে খুশি সিলেক্ট করতে পারি তুমি আপত্তি করবেনা।

.

আমি: আমিকি জানি নাকি যে এখনি তোমরা এসব করছ! আমি করছি না এনগেইজমেন্ট ব্যাস।

.

আব্বু আমার হাত ধরে একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে গেলো! পেছন পেছন আম্মু আর আপিও এলো, তারপর বলল

.

আব্বু: মামনী আমি কিন্তু তোমাকে আগেও জিজ্ঞেস করেছিলাম এই  বিষয়ে!

.

আমি: কী জিজ্ঞেস করেছিলেন?  এনগেইজমেন্ট এর বিষয়ে কিছু বলেছেন আমায়?

.

আম্মু: দেখ মা।

.

আমি: কী দেখবো তোমরা হুট করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ আমি এখন বিয়ে করছিনা।

.

আব্বু: আরেহ এখন বিয়ে হবে তোমায় কে বলল? বিয়েতে দেরী আছে এখন খালি এনগেইজমেন্ট হচ্ছে।

.

আমি: যাই হোক না কেনো আপনাদের উচিত ছিলো আমাকে আগে থেকে জানানো!

.

আপি: আচ্ছা এখন এসব বলেকি লাভ আছে?

.

আমি: আছে মানে? অবশ্যই আছে! আমি কোন এনগেইজমেন্ট করছিনা ব্যাস।

.

আব্বু: অনিমা তুমি কিন্তু কথার খেলাপ করছ। তোমার কথার ভরসাতেই আমি মানিককে হ্যা বলেছি।

.

বুঝলাম আব্বু রাগ করেছে আব্বু আমাকে তখনি নাম ধরে ডাকে যখন রাগ করে, কিন্তু আমিওতো হুট করে এসব মানতে পারছিনা। তাই মাথা নিচু করে রইলাম। সেটা দেখে আব্বু ঠান্ডা গলায় বলল

.

আব্বু: মামনী এমন কেনো করছো? আমার পছন্দের ওপর ভরসা নেই তোমার?

.

 আমি: সেরকম কিছু না আব্বু কিন্তু আমি সবে আঠারোতে পা রাখলাম। তাছাড়া আমার চেয়ে বড় আমার অনেক কাজিনস দেরো এখনো বিয়ে হয়নি। আর আপনি!

.

আব্বু: মামনী বিয়েতো হচ্ছেনা এখন! আর আদ্রিয়ান ছেলেটাও খারাপ না।

.

আমি: কিন্তু..

.

তখনি আঙ্কেল আর আন্টি আসল আঙ্কেল বলল

.

আঙ্কেল: মামনী আমার ছেলেটাকি ছেলে হিসেবে খারাপ?

.

আমি মাথা নেড়ে না বললাম।

.

আন্টি: দেখতে খারাপ?

.

এবারো মাথা নিচু করে মাথা নাড়লাম

.

আঙ্কেল: তাহলে কী বাবা মা হিসেবে আমাদের পছন্দ হয়নি? 

.

আমি: না না আঙ্কেল, আপনারা তো খুবি ভালো।

.

আঙ্কেল: তাহলে?

.

আমি: আসলে।

.

আন্টি: দেখো মা আমি শুনেছি তোমার সমস্যাটা, আজতো শুধুই এনগেইজমেন্ট হবে! বিয়ের দেরী আছে।

.

আমি: বুঝতে পারছি আন্টি কিন্তু

.

আম্মু: আসবিনা আমার মেয়ে হয়ে?

.

এখন আর না করার মত ভাষা পাচ্ছিনা, আদ্রিয়ানের মতো হাজবেন্ড, এদের মতো শশুর শাশুড়ি পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার, কিন্তু হুট করে এসব হওয়াতেই মানতে কষ্ট হচ্ছে আমার। কিন্তু আব্বুর ওপরেও ভরসা আছে যে উনি আমার জন্য বেষ্ট টাই চুজ করবে।

.

আব্বু: আর এখনতো এনাউসমেন্টও হয়ে গেছে, যদি এনগেইজমেন্ট না হয় তবে কী হবে ভেবে দেখেছো?  তোমার মানিক আঙ্কেলকে কতটা ছোট হতে হবে?

.

আমি এবার অসহায় ভাবে একবার আব্বু একবার আঙ্কলের দিকে তাকালাম। তারপর মাথা নিচু করে বললাম 

.

আমি: আচ্ছা তোমরা যা ভালো মনে করো।

.

আমার কথায় খুশি হয়ে দুই বন্ধু হাগ করল, আন্টি আর আম্মুও আমাকে জরিয়ে ধরল আপি এসে জরিয়ে ধরে বলল 

.

আপি: That's like my sweetheart !!

এরপর সবাই গেলো। আব্বু গিয়ে আদ্রিয়ানকে কী জেনো বলতেই আদ্রিয়ান খুব খুশি হয়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরল, আঙ্কেলকেও জরিয়ে ধরল। আচ্ছা আমাকে সত্যিই ওর এত পছন্দ?

.

এখনি রিং পড়ানোর জন্য ডাকবে আমি আপির হাত শক্ত করে ধরে আছি! রাগ, অসস্তি, নার্ভাসনেস সব মিশ্রিত অনভুতি হচ্ছে আমার..

.

আঙ্কেল এবার বললেন।

.

আঙ্কেল : অনেকক্ষন অপেক্ষা করিয়েছি আপনাদের আর করাবোনা..

.

বলেই আদ্রিয়ানকে ডাকল আদ্রিয়ান ওনার একপাশে দাড়ালো তারপর আমাকে ডাকলো, আমিতো ঠায় দাড়িয়ে আছি, আপি ঠেলে পাঠালো আমায়। এরপর আমি আঙ্কেলের আরেক পাশে দাড়লাম। আব্বু আম্মু আন্টি আপি সবাই কাছে এলো। আদিব ভাইয়ারা, ঐশিরা, সব চারপাশে জরো হল। কারো মুখেই অবাক হবার ছাপ নেই তারমানে এরা সবাই সব জানত সব? হুহ কাউকে ছাড়বোনা। মিঃ আদ্রিয়ানকেতো নাই! 

.

এরপর আন্টি একটা রিং আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো, রিংটা ডায়মন্ড এর, ছোট ছোট হোয়াইট ডায়মন্ড বসিয়ে গোল ডিজাইন করা, তার চারোপাশে একটু ফাকা ফাকা করে ছোট ব্লাক ডায়মন্ড বসানো, মাঝখানে একটা মিডিয়াম সাইজ লাল পাথর, বেশ সুন্দর

.

 আদ্রিয়ান রিংটা হাতে নিয়ে আমার বা হাত ধরল, তখনি আমার হার্টবিট তীব্র গতিতে ছুটতে লাগল, বুঝতে পারলাম আমি ঘামছি, তারপর ও আমার দিকে তাকালো আমি চোখ সরিয়ে নিলাম, ও মুচকি হেসে আমার আঙ্গুলে রিংটা পড়িয়ে দিল, আমি পুরো জমে আছি এমন কেনো লাগছে আমার

.

তারপর আপি একটা রিং দিল আমায়, এই রিংটা কে কীভাবে বর্ণণা করব নিজেই জানিনা, সিলভার কালার তবে সাদা কালো মিক্সড পাথরের ডিজাইন আছে

.

 আমি রিংটা ধরে দাড়িয়ে আছি, আদ্রিয়ান নিজেই হাতটা এগিয়ে দিলো সেটা দেখে আমি ওর দিকে তাকাতেই ও মুচকি হেসে চোখ দিয়ে আমায় ইশারা করল পড়ানোর জন্য, আমি চোখ নামিয়ে নিলাম, কী ছেলেরা বাবা ! 

.

তারপর আমিও ওকে রিংটা পড়িয়ে দিলাম। সবাই জোরে হাততালি দিয়ে উঠল।ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল, আপি আমাকে জরিয়ে ধরে কনগ্রেস বলল।

.

বাহ কী সিনেমাটিক ব্যাপার স্যাপার, কী থেকে কী হয়ে গেলো? হঠাৎ করে আমার জীবনটা একটা নতুন মোর নিলো আমি এখন এনগেইজড? লাইক রিয়েলি? মানে আমি আদ্রিয়ানের হবু বউ?  ভেবেই তাকালাম ওর দিকে....




Infinite Love💗

Part: 19

.

বাহ কী সিনেমাটিক ব্যাপার স্যাপার, কী থেকে কী হয়ে গেলো? হঠাৎ করে আমার জীবনটা একটা নতুন মোর নিলো আমি এখন এনগেইজড? লাইক রিয়েলি? মানে আমি আদ্রিয়ানের হবু বউ? ভেবেই তাকালাম ওর দিকে ও আমার দিকেই তাকি আছে।  দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো আর আদিব ভাইয়া ওই মুহুর্তটাকেও ক্যামেরা বন্দি করে ফেলল। আমি চোখ  নামিয়ে নিলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম যে উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন! আমি খালি ভাবছি কী হচ্ছে আমার সাথে? আমি সপ্নেও ভাবিনি এক মুহুর্তে আমার জীবনটা এভাবে বদলে যাবে। এই বদলটাযে আমার খুব বেশি খারাপ লাগছে তা কিন্তু না!

.

এরপর আরেকটা কেক নিয়ে আসা হলো। জ্বী ইটাই আমাদের এনগেইজমেন্টের কেক! এরপর আন্টি আদ্রিয়ানের হাতে একটা নাইফ দিলো। আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে কেকের সামনে এনে নাইফটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমার পেছনে পিঠ গেসে দাড়িয়ে আমার হাতের ওপর হাত রাখল। আমি অবাক হয়ে হালকা মাথা ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম ওও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল, আদিব ভাইয়া এই মুহূর্ত টাকেও ভালো করে বন্দী করে নিলেন। সবাই মিটমিট করে হাসছে, লজ্জায় পরে গেলাম আমি, এই ছেলের কী একটুও লজ্জা নেই? সকলের সামনে বিনা সংকোচে কীভাবে করে এগুলো? কেক কাটার জন্য ও একটু ঝুকলো যার ফলে ওর নিশ্বাস আমার কানে কাধে বাড়ি খাচ্ছে আমি একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছি, এক অদ্ভুত অনুভূতি, ও আমার হাতের ওপর হাত রেখেই কেকটা কাটলো। এরপর একটুকরো কেক নিজেই আমার দিকে এগিয়ে দিলো আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়েই আছি, আপির খোচাতে হুস এলো ওর চোখে চোখ রেখেই কেকটা অর্ধেকের মতো খেলাম, আমার কী হলো জানিনা আমি ওর হাত থেকে আমার অর্ধেক খাওয়া কেকের টুকরোটা নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম, যেটা দেখে ও অদ্ভুত এক হাসি দিলো যেনো এভারেস্ট জয় করেছে! তারপর আমার হাত ধরেই কেকের টুকরোটা সম্পূর্ণ খেয়ে ফেললো যার ফলে ওর ঠোট আমার আঙ্গুল স্পর্শ করল, আমি কেপে উঠলাম। আর এই সব মুমেন্ট এর ছবিগুলোই আদিব ভাইয়া বিভিন্ন এঙ্গেলে যত্ন সহকারে তুলেছে।

.

আমার এসবে একটুও খারাপ লাখছেনা, কোথাও মনে একটা ভালো লাগা কাজ করছে, আচ্ছা আমিকি সবটা মন থেকে মেনে নিচ্ছি? মেনে নিচ্ছি আদ্রিয়ানকে? তবে একটা জিনিসতো ঠিকি যে আদ্রিয়ান এখন আমার হবু স্বামী, আমরা এনগেইজড, আমার বুকড করে নেওয়া প্রপারটি, রিয়েলি? আমার? এই মুডি, চার্মিং, চকলেট বয় এখন আমার? ভাবতেই শরীর শিওরে উঠলো।

.

ওয়ান মিনিট! এসব কী করছি আমি? এত সহজে মেনে নিচ্ছি? সবাই আমাকে এভাবে উল্লু বানালো, বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এনগেইজড করে দিল, আমার এই বিন্দাস ফ্রি লাইফটাকে বেধে দিলো, আর আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো? নেভার!

.

কেক কাটার পর্ব শেষ হতেই আমাদের সবাইকে বসালো একটা টেবিলে ডিনার করাতে, আমরা দুইটা টেবিল নিয়েছি, বাকি সব টেবিলে গেস্টরা বসছে।  আমাকে আদ্রিয়ানের পাশেই বসানো হলো, আমাদের টেবিলে সব ছোটরা বসছে আপি, কাব্য, ওহি, সজীব ভাইয়া, অর্নব ভাইয়া, জাবিন, ঐশি, অরু, ইশু আর আদিব ভাইয়ারা আরেক টেবিলে সব বড়রা আব্বু, আম্মু, আঙ্কেল, আন্টি, চাচু, ফুপা, সুলানাপ্পি,আর আদ্রিয়ানের দাদা, দাদি, আরো দুই একজন।

.

আমার টেবিলে সব বান্ধরের দল থাকায় সবাই নানারকম হাসি ঠাট্টা করছে আর আমি মাথা নিচু করে খালি শুনছি, আদ্রিয়ান সাহেবও চুপ তবে মাঝে মাঝে দুই একটা কথার উত্তর দিচ্ছে।

.

আপি: অনিতো ভাবতেই পারেনি যে এরকম কিছু হবে।

.

আদিব ভাইয়া: ও তো ডিরেক্ট আদ্রিয়ানকে কনগ্রাচুলেট করতে গেছিলো।

.

সবাই হেসে দিলো, তার সাথে আমার জামাই মানে হবু জামাইও যোগ দিলো। আমি রেগে ভাইয়ার দিকে তাকালাম, নিজেই আমাকে জোর করে নিয়ে গেলো এখন নিজেই জোক মারছে। 

আমি নিজের এনগেইজমেন্টে নিজেরি বরকে কনগ্রাচুলেট করেছি? কী হাস্যকর! এইজন্যই আদ্রিয়ান তখন দাত বের করে হাসছিল? আল্লাহ!

.

আপি: ও তো আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, মেয়ে দেখতে কেমন আদ্রিয়ানের সাথে কেমন মানায়।

.

আবার সবাই হেসে দিল। কিন্তু উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।

.

ঐশি: আমিতো ভেবেছিলাম আমাদের দেখে অন্তত বুঝে যাবে, কিন্তু এই মেয়েকে বললাম যে পাত্রি আমাদের বান্ধবী তবুও বুঝলো না? 

.

সবার সেই বিখ্যাত হাসি। আল্লাহ আর কত লজ্জা দিবেন?

.

আদিব: আচ্ছা তোমারতো তোমার ফ্রেন্ডদের দেখে অন্তত বোঝা উচিত ছিল তাইনা।

.

আমি মাথা নিচু করে শুনছি আর হালকা হালকা খাচ্ছি, সত্যিই আমি এত বোকা কীকরে হলাম? হাউ?

.

জাবিন: হ্যা এখন তো সামনা সামনি ভাবী ডাকতে পারব তাইনা ভাবি?

.

আমি একটু মুচকি হাসলাম।

.

আদ্রিয়ান: হয়েছে আমার বউকে আর লেগপুল করিসনা, তোদের জন্য খেতে পারছেনা বেচারি!

.

আমার বুকটা ধক করে উঠলো। হার্ট আবার ফুল স্পিডে বিট করতে লাগল, " আমার বউ" আদ্রিয়ানের মূখ থেকে বেরোনো এই শব্দটা আমাকে এলোমেলো করে দিলো। আমার পা কাপছে জোরে হাতো কাপছে, এখন আরো খেতে পারছিনা।

.

ওর কথায় সবাই অবাক হলো এভাবে সবার সামনে হূট করে যে বউ বলে ফেলবে আমার মত অন্য কেউও আশা করেনি!

.

কাব্য : এই বোকা মেয়েটাকেই তোমার পছন্দ হলো ভাইয়া? বাংলাদেশে মেয়ে ছিলোনা? 

.

আমি রাগী চোখে কাব্যর দিকে তাকালাম, তখনি আদ্রিয়ান বলল

.

আদ্রিয়ান: নো শালাবাবু। আমার বউ মোটেও বোকা না, খালি একটু কম বোঝে, টিউবলাইট টাইপ।

.

সবাই হেসে দিলো। আমি রেগে গেলেও ওর ওই বউ শব্দটা আমার সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে, কী বেহায়া ছেলে সবার সামনেই বউ বউ করে যাচ্ছে? আরে ভাই তোমার নাহয় লজ্জা নাই আমার তো আছে, আমার কথাটাতো ভাবো? দূর সেদিকে আর মন না দিয়ে খেতে লাগলাম।

.

আদ্রিয়ান আবার বলল

.

আদ্রিয়ান: যেরোকমি হোক আমারি তো!

.

আমি খাওয়া ছেড়ে ওর দিকে তাকালাম, বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল কথাটা, কিন্তু আমার তো অবস্হা খারাপ, আমি পুরো জমে গেছি ওর কথা শুনে, আমি ওর? রিয়েলি?

.

এরপর সবাই নানারকম কথা বলতে বলতে খাওয়ার পর্ব শেষ করলাম।

.

খাওয়া শেষে আদ্রিয়ান আমি আর সব বীচ্ছূবাহিনীর দল নানারকম কথা বলছে, আদ্রিয়ান ও মাঝে মাঝে মজা করছে, আর আমাকে লজ্জা দেবার মহৎ কাজটিতো আছেই.

.

কিছুক্ষণ পর বড়রাও এলো মানিক আঙ্কেল এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল 

.

আঙ্কেল: মামনী মন ভালো হয়েছে?

.

এটা শুনে আদ্রিয়ান ও আমার দিকে তাকালো, হয়তো আমার উত্তর টা জানতে চাইছে, আমি মাথা নিচু করে রইলাম কিছু বললাম না!

.

আঙ্কেল: আমার আর তোমার আব্বুর ওপর এটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো। আমাদের কথাটা শুনে তুমি ঠকবেনা।

.

আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করলাম।

.

আমিতো জানি আমি ঠকিনি, একদমি ঠকিনি, কিন্তু এভাবে হুট করে করার কী দরকার ছিলো? একবার জানালে কী হতো? 

.

আব্বু: জানি মামনী তোকে না জানিয়ে কাজটা করে আমরা ঠিক করিনি কিন্তু..

.

তখনি আদ্রিয়ানের দাদাভাই এলো

.

দাদুভাই: কিন্তু সব দোষ আমার এই গুনধর নাতীর। এই বেটাই বলছে তোকে ভূলেও যাতে জানানো না হয়। 

.

আন্টি: হ্যা শয়তানটা তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল, ওর জন্যই এতো কান্ড হলো। ( আদ্রিয়ানের কান টেনে)

.

আদ্রিয়ান: আম্মু... কী করো সবার সামনে? I have an image...

.

আঙ্কেল: রাখ তোর Image তোর কথায় কত বড় রিস্কটাই না নিলাম? যদি মেয়েটা রাজি না হতো?

.

আমিতো অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছি! তারমানে ওই বলেছিল ব্যাপারটা আমায় না জানাতে? সারপ্রাইজ?লাইক সিরিয়েসলি? আমিকি ওর গার্লফ্রেন্ড? বাজে ছেলে একটা ! এভাবে আমায় ঘোল খাওয়ানো? দেখে নেবো তোমায়!

.

তারপর দাদাভাই বলল

.

দাদুভাই : যাগগে যা হবার হয়েছে, এবার আমার রাজজোটক কে একসাথে দেখি একবার!

.

বলেই দাদাভাই আমাকে আর আদ্রিয়ানকে গা ঘেসিয়ে পাশাপাশি দাড় করিয়ে দিলেন।

.

উফ এতো লাগিয়ে দাড় করানোর কী ছিল?

.

দাদুভাই লাঠি দিয়ে আদ্রিয়ানকে একটা খোচা মেরে বলল

.

দাদুভাই: গাধা কিছুই শিখস নাই, বউয়ের কাধে হাত রাখ গাধা। এই যুগের ছেলে হয়েও রোমান্স শিখিয়ে দিতে হয়?

.

আদ্রিয়ান: হ্যা এই দিনটাও দেখার ছিলো? আমার বউয়ের সাথে রোমান্স করব সেটা এখন আমাকে এই বুড়ার কাছে শিখতে হবে?

.

দাদুভাই: তোমার কী মনে হয়? আমার রোমান্স সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই? তোমার দাদিকে জিজ্ঞেস কর সেই জানে আমার ধারণা কতটা!

.

আদ্রিয়ান: হইছে এই বয়সে আর লোক হাসানের দরকার নাই।

.

আমিতো স্তব্ধ এদের দাদা নাতির কথা শুনে। এরকমও হয়?

.

দাদুভাই: হইছে এবার বউয়ের কাধে হাত রাখ।

.

আদ্রিয়ান: দাদুভাই তুমিও না!

.

বলেই আদ্রিয়ান আমার কাধে হাত রাখল।

.

দাদি: বাহ কী মানিয়েছে দুজনকে।

.

আমি মাথা নিচু করে আছি হঠাৎ আঙ্কেল ওর আর অামার হাত এক করে দিয়ে বলল

.

আঙ্কেল: জীবনে যাই হয়ে যাক এই হাত কখনো ছাড়বেনা

.

আদ্রিয়ান সাথেসাথেই বলে ফেলল

.

আদ্রিয়ান: কখনোই না।

.

এটা আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম।  সবাই হেসে দিল। উফরে এমন কেনো ও? ছাড়বেনা ভালোকথা সেটা সবার সামনে হুট করে এভাবে এনাউস করতে হবে? ও আমার দিকে তাকাতেই মাথা নিচু করে ফেললাম

.

এরপর সবাই অরো কিছুক্ষণ নানারকম কথা বলল। এরপর এলো ছবি তোলার পালা। প্রথমে আমাদের ফ্যামিলি পিক তোলা হলো, দুই ফ্যামিলি মিলেই তুললাম। তবে আমাকে আর আদ্রিয়ানকে মাঝখানে পাশাপাশি দাড় করানো হয়েছে। এরপর আমরা বিচ্ছু বাহিনীরা ছবি তুললাম, সেখানেও একি কাজ করল। এবার ওরার আমার কাপল পিক তোলা হবে আমিতো আর সেটা তুলবে আদিব ভাইয়া। তারপর ওকে আর আমাকে দাড় করিয়ে বিভিন্ন এঙ্গেলের বিভিন্ন ষ্টাইলের কাপল পিক তুললেন ভাইয়া। আর আমি অসহায়ের মত ওনার ইনসট্রাকশন অনুযায়ী আদ্রিয়ানের সাথে পোজ দিচ্ছিলাম।

.

এরপর আদিব ভাইয়া কিছু গ্রুপ সেলফি নিলো, আদ্রিয়ান আমার ফ্যামিলির সকলের সাথে আলাদা আলাদা করেও ছবি তুলল। বড়রা একজায়গায় কীসব কথা বলছে আর আদ্রিয়ান? ও আপি কাব্য, সজীব ভাইয়া, অর্ণব ভাইয়া সবার সাথেই হেসে কথা বলছে, আমি কী দোষ করলাম? ধুর না বললেই ভালো।

.

এরপর হঠাৎ আমার বান্দরনী থুরি বান্ধবীরা আদ্রিয়ানের হাত ধরে নিয়ে এলো আমার কাছে। তারপর বলল

.

ঐশি: জিজু চলে যাবো এখন তাই আপনাদের দুজনকে একসাথে দেখে যাই।

.

আদ্রিয়ান: এখনি চলে যাবে?

.

ইশু: হ্যা জিজু দেরী হয়ে যাবে নইলে।

.

আদ্রিয়ান: ওহ ব্যস্ততায় বেশি কথা  হলোনা তোমাদের সাথে! 

.

অর্পি: আরেহ ব্যাপার না আপনি আপনার বউকে টাইম দিন।

.

ঐশি: হ্যা আমাদেরো দেখবেন মাঝে মাঝে, আমরাও তো ফেলে দেবার মতো না!

.

আদ্রিয়ান: কী বলো? তোমাদের ফেলে দিতে পারি? যতই হোক শালিকা তো। ( চোখ মেরে)

.

সবাই হাসল তারপর ওরা আমায় জরিয়ে ধরে বাই বলল, আদ্রিয়ান সামনে তাই কিছু বললাম না, নইলে ধুয়ে দিতাম, আমাকে ওরাও বললনা?

.

ওরা চলে গেলো, আব্বু আদ্রিয়ানকে ডাকতেই ও চলে গেলো। তারপর আব্বু আমাকেও ডাকল। গিয়ে বুঝলাম আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, দাদুভাই আমার হাত ধরে বলল,

.

দাদুভাই: তাড়তাড়ি দেখা হবে দিদিভাই।

.

আমি: জ্বী।

.

আঙ্কেল আব্বু একে ওপরকে জরিয়ে ধরল, তারপর আন্টি এসে আমাকৈ জরিয়ে ধরে বলল 

.

আন্টি: ইচ্ছেতো করছে তোকে এখানেই রেখে দেই।

.

আদিব: আন্টি রেখে দিতেই পারেন একজনতো সেটাই টাইছে মনে মনে।

.

আদ্রিয়ান রাগী চোখে তাকালো আদিব ভাইয়ার দিকে ভাইয়া থেমে গেলো আর সবাই হেসে দিলো। এরপর আঙ্কেল বলল

.

আঙ্কেল: এখনো রেগে আছো?

.

আমি মাথা নিচু করে মাথা নাড়লাম। আঙ্কেল হেসে বলল 

.

আঙ্কেল:আচ্ছা এসো দেখা হবে আবার।

.

তারপর আপি আদ্রিয়ানের সাথে কীসব কথা বলল। আদিব ভাইয়া আমাকে ডেকে বলল।

.

আদিব: এখনতো বোনের সাথে সাথে ভাবিও, তা দেখা হচ্ছে আবার।

.

আমি: হুম।

.

এবার আমাদের যাবার পালা, আব্বু আম্মু বাড়ির সবাই আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলে চলে এলো যেই গাড়িতে উঠতে যাবো তখনি আদ্রিয়ান এসে আব্বুকে জরিয়ে বলল

.

আদ্রিয়ান: Thanks a lot...

.

আব্বু হাসল।আমিতো অবাক। এরপর গাড়িতে উঠলাম গাড়ি স্টার্ট দেবার পর আমি জানালা দিয়ে ওর দিকে তালালাম ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে এরপর গাড়ি স্টার্ট দিলো যতদুর দেখা গেছে আমি ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম আর ও আমার দিকে।

.

গাড়িতে বসে ভাবছি কী হলো আজ আমার সাথে? সবাই সবটা জেনেও আমায় কিচ্ছু বললোনা কারন আদ্রিয়ান বলেছে? এমনিতেতো ফিরেও তাকায়না আর এখন সোজা এনগেইজড করে দিলো? ছাড়বোনা তোমায় মিঃ কিছতেই নাহ..


Infinite Love💗

Part: 20

.

গাড়িতে বসে ভাবছি কী হলো আজ আমার সাথে? সবাই সবটা জেনেও আমায় কিচ্ছু বললোনা কারন আদ্রিয়ান বলেছে? এমনিতেতো ফিরেও তাকায়না আর এখন সোজা এনগেইজড করে দিলো? ছাড়বোনা তোমায় মিঃ কিছুতেই নাহ..

.

পুরো ড্রয়িং রুমে থমথমে এক পরিবেশ, কেউ কিচ্ছু বলার সাহস পাচ্ছেনা। নিচে দুটো শোপিছ আর একটা ফুলদানি ভেঙ্গে পরে আছে। আমিই ভেঙেছি, কিন্তু তবুও কেউ কিচ্ছু বলছেনা, আমি স্বভাবত রাগী নই, কিন্তু রেগে গেলে মাথার ঠিক থাকেনা, আর সবাই জানে এমন রাগ আমি তিন চার বছরে একবার দুবার দেখাই, আর ওনাদেরও ভূল আছে তাই চুপ করে আছে।

.

আব্বু: মামনী..

.

আমি: নাহ আব্বু আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা, I want answer, কেনো করলেন এটা?

.

আব্বু: আমি বলতে চেয়েছি কিন্তু..

.

আমি: কিন্তু? কিন্তু কী আব্বু? হ্যা আমি জানি আমি বলেছি যে আপনাদের পছন্দতে বিয়ে করতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু তাই বলে আপনি আমাকে একটিবারো না জানিয়ে ডিরেক্ট এনগেইজমেন্ট করিয়ে ফেললেন?

.

আম্মু: আদ্রিয়ান ই বলেছিল তোমায় না জানাতে!

.

আমি: হ্যাঁ আদ্রিয়ান বলল আর তোমরা সেটাই করলে? সিরিয়াসলি? 

.

আব্বু: সব তো ঠিক হয়ে গেলো আবার কেনো এসব?

.

আমি: আব্বু আমি সবটা আপনার আর মানিক আঙ্কেলের কথা ভেবেই মেনে নিয়েছি! তারমানে এই না যে আমি জবাব চাইবোনা।

.

আব্বু আমার হাত ধরে বসিয়ে বলল

.

 আব্বু: আমি হুট করে এসব করতে চাইনি মা মানিক আমার কাছে আসার পর আমি বলেছিলাম আরো দুই এক বছর ওয়েট করতে? কিন্তু..

.

আমি: কিন্তু?

.

আব্বু: আদ্রিয়ান তখন নিজে আমার দুটো হাত ধরে বলেছে যে বিয়েটা এখন দিতে হবেনা কিন্তু আপাদত এনগেইজমেন্ট যাতে  করাই। ওরকম একটা ছেলে এভাবে আমায় রিকোয়েস্ট করছে, কীকরে না করি বলো?

.

আমি: কিন্তু..

.

আপি: মেনে যখন নিয়েছিস তখন আর এসব কেনো বলছিস বলতো? 

.

আমি: আপি তুমি বুঝছোনা..

.

আপি: সব বুঝতে পারছি চল রুমে চল।

.

আপি আমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি দিলো, আমিও ঢকঢক করে খেয়ে নিলাম তালপর জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলাম। 

.

আপি: আচ্ছা অনি এনগেইজমেন্ট তো হয়ে গেছে এখন এমন করছিস কেনো বলতো।

.

আমি: জানিনা আপি রাগ লাগছে খুব। এভাবে কীভাবে আমার এনগেইজমেন্ট করিয়ে দিলো? 

.

আপি: আচ্ছা জীবনেও কী বিয়ে করতি না?

.

আমি: করতাম অবশ্যই করতাম তাই বলে এখন?

.

আপি: আরেহ এখন তো বিয়ে হচ্ছেনা।

.

 আমি: হুম।

.

আপি: এবার ফ্রেশ হয়ে নে আমিও যাই।

.

আপি চলে গেলো ফ্রেশ হতে। আমিও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাটে আধশোয়া হয়ে একা একাই বিরবির করছি আচ্ছা আদ্রিয়ান আমাকে পছন্দ করে? আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে? আব্বুর কাছে অনুরোধও করেছে? কিন্তু কেনো? ও যেরকম ছেলে তাতে তো ও আরো ভালো মেয়ে পেতো? তাহলে?

.

"ভালোবাসা"

.

তাকিয়ে দেখি আপি কফি নিয়ে এসে আমার পাশে বসে আমার হাতে কফি ধরিয়ে দিলো

.

আপি: জানি আজ তোমার ঘুম আসবেনা তাই কফি নিয়ে এলাম রাত জেগে গল্প করব।

.

আমি: ভালোবাসা?

.

আপি: হুম.. He loves you..

.

আমি: Nice joke...( কফিতে চুমুক দিয়ে)

.

আপি: নো গাধি। এটা জোক নয়। ও সত্যিই তোকে ভালোবাসে।

.

আমি: আচ্ছা? কীকরে বুঝলে? 

.

আপি: আচ্ছা তোদের প্রথম দেখায় ও তোর চোখে পানি দেখে তোকে কী বলেছিল? 

.

আমি: রাগী গলায় বলেছিল ওটা ওর জিনিস আর ও ওর জিনিসের অপচয় পছন্দ করেনা।

.

আপি: Right! একটা ছেলে একটা মেয়ের চোখে পানি কখন সহ্য করতে পারেনা জানো?

.

আমি: কখন?

.

আপি: যখন ছেলেটা মেয়েটাকে মন থেকে ভালোবাসে।

.

আমি: ব্যাস? এটুকুতেই বুঝে গেলে?

.

আপি: নাহ আরো আছে!

.

আমি: আবার কী? ( ভ্রু কুচকে)

.

আপি: আচ্ছা তুমি যেদিন ফুচকায় ঝাল খেয়ে ফেললে সেদিন ও যা যা করেছিল সব স্বাভাবিক ছিলো?

.

আমি: নাহ একটু বেশিই কেয়ার করেছিল, ইনফ্যাক্ট খুব ভয় পেয়ে গেছিলো, এমন করছিলো জেনো ওরি কিছু হয়েছে!

.

আপি: তোমার কী মনে হয় এগুলো এমনি এমনি করেছে? মানবতার খাতিরে কেউ এতোটা করেনা অনি! আর যদি ধরেও নি যে ও যা করেছে শুধু মানবতার খাতিরে তাহলে পরে তোকে যেভাবে বকেছিল শাসন করেছিল, ঝাল খাওয়ার জন্য সেটা কেনো করেছিল? ওর ওই শ্বাসনে কোনো অধিকারবোধ দেখিসনি?

.

আমি আপির কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছি, এই প্রশ্নগুলো যে আমার মনেও ওঠেনি তা কিন্তু না, তবে আমি ব্যাপারটাকে ওতটা গুরত্ব দেই নি! কিন্তু এখন বিষয়টা ভাবাচ্ছে!

.

আপি: তারপর তোর ওরনা ধরার অপরাধে দুটো ছেলের কী অবস্হা করেছিল ভুলে গেলি? তারপর সবচেয়ে বড় কথা তোর নবীন বরণের প্রোগ্রামে যেটা করেছিল?

.

আমি: Wait a bit... আমিতো তোমায় বলিনি আদ্রিয়ানি AD তুমি কীকরে জানলে?

.

আপি: আমিতো সন্দেহ সেই প্রথম দিন থেকেই করেছিলাম, কিন্তু ওইদিন নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম!

.

আমি: কোনদিন?

.

আপি: তোমার মনে আছে আমি তোমাকে AD এর ফুল ডিটেইলস জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওর হাইট,চোখ, কান, নাক ঠোট সব?

.

আমি: হুম।

.

আপি: সেদিনি পুরোপুরি সিউর হয়েছি যে আদ্রিয়ান ই AD।

.

আমি: রিয়েলি?

.

আপি: ইয়েস। নবীণ বরণের ঘটনাটা শুনে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলাম। আর এটাও বুঝেছিলাম যে ও তোমাকে কতটা ভালোবাসে।

.

আমি: তাই সেদিন না হেসে আমাকে কিস করে জড়িয়ে ধরেছিলে?

.

আপি: হুম, খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন।

.

আমি: তুমি যদি জানতেই AD ই আদ্রিয়ান? তাহলে আমাকে বললেনা কেনো?

.

আপি: আদ্রিয়ান! ওই বলেছে।

.

আমি: কীহ?

.

আপি: হুম আমি যখন সিওর হলাম AD ই আদ্রিয়ান, তখন আমার খটকা লাগল যে আদ্রিয়ানতো তোমাকে দেখেছে, তাহলে নিজের পরিচয় তোমায় কেনো দিলোনা? কেনো অপরিচিতদের মত ট্রিট করল।

.

আমি: তারপর?

.

আপি: তারপর আমি আদ্রিয়ানকে ফোন করি। তখনি ও বলে যে সত্যিটা যাতে তোমাকে না জানাই।

.

আমি: কিন্তু এক পলক দেখে ওর আমাকে মনে ছিলো?

.

আপি: নো বেবি সেদিন ও তোমাকে এক পলক দেখেনি, খুব কাছ থেকে গভীরভাবে দেখেছে!

.

 আমি: মানে?

.

আপি: এখন তোমরা এনগেইজড তাই এখন বলতেই পারি! 

.

আমি: কী?

.

আপি: সেদিন ওর ওয়াসরুমে যাবার জন্য যেই রুমটা দেখিয়েছিলাম সেখানে যে তুমি ঘুমিয়ে ছিলে সেটা আমি বা ও জানতামনা। ওর আসতে দেরী হচ্ছে তাই কোন সমস্যা হয়েছে কী না সেটা দেখতে গেছিলাম, গিয়ে দেখলাম.. ( দুষ্টু হেসে)

.

আমি: কি দেখলে?

.

আপি: দেখলাম যে আদ্রিয়ান তোমার পাশে বসে তোমার গায়ে চাদর দিয়ে দিলো তারপর তোমার দিকে ঝুকে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো অনেক্ষণ, আর..

.

আমি: আর?

.

আপি: তোমার কপালে..

.

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম

.

আমি: ককি?

.

আপি হেসে দিয়ে বলল

.

আপি: ভয় পেওনা কিস করেনি, যদিও করতে গেছিলো কিন্তু কিছু একটা ভেবে লাস্ট মুমেন্টে সরে গেছে।

.

আমিতো চরম অবাক হয়ে শুনছি। সত্যিই আদ্রিয়ান এগুলো করেছে? আর তাই আপি সেদিন ওমন বিহেভ করেছে?

.

আমি: তাই সেদিন ওমন রোমান্টিক হয়ে গেছিলে না?

.

আপি: হম! আর এটা শুধু আমি দেখিনি।

.

আমি: আর কে দেখেছে? (শুকনা ঢোক গিলে)

.

আপি: কাব্য আর ওহিও আমার পেছন পেছন এসে দেখেছে।

.

আমি: কীহ?

.

আপি: হুম! বেচারা আদ্রিয়ান আমাদের দেখে ভুত দেখার মত চমকে গেছিলো! ওহিকে চকলেট দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে, আমিও সামলেছি, কিন্তু কাব্যকে কীভাবে ম্যানেজ করেছে সেটা আদ্রিয়ানই জানে।

.

এইজন্যই ওই শয়তানগুলো মিটমিট করে হাসছিলো সেদিন? এতকিছু হয়ে গেলো আমি কিছুই টের পেলাম না?

.

আপি: তোমার নবীণ বরণের শাড়ি ওর্নামেন্টস কিন্তু ওরি দেওয়া।

.

আমি: মানে কী? এইজন্যই তুমি বলতে চাওনি যে কোথায় পেলে? 

.

আপি: জ্বী!

.

আমি: তাইতো বলি ওর আর আমার পোশাক এতটা ম্যাচ করল কীভাবে? এনগেইজমেন্টের সবকিছুই নিশ্চই ওরি দেওয়া?

.

আপি: এইতো বুঝে গেছো।

.

হায় আল্লাহ আর কত কিছু দেখতে হবে? এতো সিনেমাকেও হার মানিয়ে দেবে।

.

আপি: আর কিছু জানার আছে?

.

আমি: হ্যা এনগেইজমেন্ট এর কথাটা ওরা কবে বলেছে?

.

আপি: সেটা জানিনা তবে আমি শুনেছি যেদিন দ্বিতীয়বার আদ্রিয়ানরা এলো। হয়েছে এবার ঘুমাও আর ঘুম না আসলে শুয়ে রেস্ট নেও। 

.

বলেই আপি ওর রুমে চলে গেলো

.

আমি ভাবছি কী কী হয়ে গেলো এই কয়দিনে আর আমি টেরো পেলামনা? ওই বেটা আদ্রিয়ান তলে তলে এতো কিছু করে ফেললো আর আমি? কিছুই বুঝতে পারলাম না! এমনিতে একটুও ফিরে তাকায়না, দরকার ছাড়া নিজে থেকে একটুও কথা বলে না, আর সোজা আমার আব্বুকে পটিয়ে আমায় এনগেইজড করে দিলো, এত তাড়ার কী ছিলো? আমাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চায়না? হুহ আর কত কী দেখবো আল্লাহ জানে। আর আজ কী কী করল এই ছেলে? এমন ভাব করল যেনো আমরা কতো ফ্রি, সবার সামনেই আমার হাত ধরে ফেলল, বউ বলল, আর রিং পড়ানোর সময়? নিজেই হাত এগিয়ে দিলো আবার চোখ দিয়ে ইশারা করল পড়িয়ে দেবার জন্য? 

.

এবার আমি আমার হাতের রিংটার দিকে তাকালাম, আমি এনগেইজড? বাহ অনি কী ভাগ্য তোর, কোথায় ভেবেছিলি চুপি চুপি কয়েক বছর প্রেম করে তারপর বাড়িয়ে জানিয়ে বিয়ে করবি, কিন্তু সে গুরি বালি দিয়ে কেউ এসে তোকে বুক করে নিলো, তবে যাই হোক আজকের দিনটা অতটাও খারাপ ছিলোনা, আদ্রিয়ানের ওসব কাজ, সবার মজা করা, সকলের সেই আনন্দ, আর মোস্ট ইমপর্টেন্টলি আমার এনগেইজমেন্ট, এসব ভেবেই রিংটা হাত দিয়ে ছুয়ে দিলাম

.

আচ্ছা আদ্রিয়ান কী সত্যিই আমায় ভালোবাসে? সমস্ত ঘটনা আজ খুটিয়ে খুটিয়ে ভাবছি, সেই প্রথম দেখা থেকে নবীন বরণে যা যা হয়েছে তাতে এটাতো অনেকটাই ক্লিয়ার যে He loves me.. কিন্তু এতোদিন এমন ভাব নিলো যেনো পাত্তাই দেয়না আমায়, আর এখনোতো ও নিজে একবারো বলেনি যে ও আমায় ভালোবাসে, তাহলে আমি কেনো মানবো? নো মিঃ আদ্রিয়ান আমিও দেখি তুমি কতদিন না বলে থাকো, যতদিন তুমি নিজে থেকে না বলছ যে তুমি  আমাকে ভালোবাসো আমিও তোমার সাথে নরমাল বিহেভ করছি না, আমিও ইগনোর করব তোমায়, এবার বুঝবে কেমন লাগে..


"২য় খন্ড" আসছে……!!